Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in west Bengal

মেডিক্লেমে ‘না’, কোভিড রোগী ভর্তি করাতেই দেড় লক্ষ দাবি হাসপাতালের!

পুর বিষয়টি শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “দ্রুত খোঁজ নিচ্ছি। এ রকম কাজ একেবারেই বেআইনি।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৯
Share: Save:

টেলিফোনে একটি কথোপকথন।

রোগীর আত্মীয়: জ্বরের রোগীকে ভর্তি করাতে ফোন করছি।

হাসপাতালের কর্মী: বলুন।

রোগীর আত্মীয়: আপনাদের হাসপাতালের সরকারি শয্যায় ভর্তি করাতে চাই।

হাসপাতালের কর্মী: আমাদের এখানে সরকারি শয্যা সব ভর্তি। অবশ্য বেসরকারি কিছু শয্যা ফাঁকা রাখা হয়েছে।

রোগীর আত্মীয়: তাতে চিকিৎসার কত খরচ?

হাসপাতালের কর্মী: বেসরকারি শয্যার জন্য প্রথমে দেড় লক্ষ টাকা জমা দিতে হবে। ১০ দিনে সাড়ে তিন থেকে চার লক্ষ টাকা হয়ে যায়।

রোগীর আত্মীয়: এত টাকা? মেডিক্লেম নেবেন তো?

হাসপাতালের কর্মী: মেডিক্লেম কাজ করবে না। কোভিড মেডিক্লেমও কাজে লাগবে না। পুরোটাই নগদে দিতে হবে।

জ্বরে ভোগা বছর পাঁচেকের এক নাবালককে ভর্তি করানোর জন্য ফোন করা হলে হাওড়া আইএলএস হাসপাতালের তরফে এমনই ভর্তির খরচের কথা জানানো হয় বলে রোগীর পরিবারের অভিযোগ। শুক্রবার রাতে হাসপাতালের ল্যান্ডলাইন নম্বরে কথা বলার সময়ে সেই কথোপকথন তাঁরা রেকর্ডও করে রেখেছেন বলে রোগীর আত্মীয়দের দাবি। যদিও আনন্দবাজার সেই রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেনি। তবে রেকর্ডিংয়ে শোনা গিয়েছে ওই খরচ জানানোর পাশাপাশি বেসরকারি শয্যায় ভর্তির জন্য রোগীর আত্মীয়দের হাসপাতালের মার্কেটিং বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। আইএলএস হাসপাতালের তরফে যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়েছে, “রোগীর পরিবারের সঙ্গে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।”

ওই নাবালকের মামা, টালার বাসিন্দা শুভঙ্কর মান্না জানান, গত কয়েক দিন ধরেই তাঁর বছর পাঁচেকের ভাগ্নে জ্বরে ভুগছে। শুক্রবার তার অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য শয্যার খোঁজ করতে শুরু করেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইট দেখে একের পর এক হাসপাতালে ফোন করেও সুরাহা পাওয়া যায়নি। রাত ন’টা নাগাদ তাঁরা হাওড়া আইএলএস হাসপাতালে ফোন করেছিলেন বলে দাবি। শুভঙ্করের কথায়, “আমার দিদির বাড়ি হাওড়া ময়দানে। ভাগ্নেকে প্রথমে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ওর কোভিড পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বলে দেওয়া হয়, শয্যা ফাঁকা নেই। এর পরেই বেশ কয়েকটি শয্যা ফাঁকা আছে দেখে হাওড়া আইএলএস হাসপাতালে ফোন করি।’’ শুভঙ্করের আরও বক্তব্য, “একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল এ ভাবে কোভিড চিকিৎসার নামে রমরমিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে শুনছিলাম। বাস্তব পরিস্থিতি যে এত খারাপ বুঝিনি। প্রথমেই দেড় লক্ষ, সব মিলিয়ে চার লক্ষ টাকা যদি কোভিড চিকিৎসার খরচ দিতে হয় মানুষ যাবেন কোথায়? মেডিক্লেমও নেওয়া হবে না বলা হল! এটা বেআইনি।”

আইএলএস হাসপাতাল গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবাশিস ধরের দাবি, “রাতের নিরাপত্তারক্ষী হয়তো ফোন ধরে এ সব কথা বলেছেন। কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। রোগীর পরিবারের উচিত ডিউটি ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলা। তবু বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।” এর পরেই তাঁর দাবি, “হাওড়া আইএলএস-এ ৯০টি শয্যা সরকারি। বাকি দশটি বেসরকারি। কেউ চাইলে তবেই সেই শয্যায় ভর্তি করতে পারেন। তাতে ভর্তি হতে প্রথমে দেড় লক্ষ নয়, ৫০ হাজার টাকা দিলেই চলে। কোনও কোভিড রোগীর বিলই আমাদের দু’লক্ষ টাকার উপরে যায় না।”

পুর বিষয়টি শুনে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “দ্রুত খোঁজ নিচ্ছি। এ রকম কাজ একেবারেই বেআইনি। কিছু বেসরকারি হাসপাতালের বেশির ভাগ শয্যা সরকার নিলেও অবশিষ্ট শয্যাগুলি তারা টাকার বিনিময়ে রোগীকে দিতেই পারে। কিন্তু তার মানে যেমন খুশি টাকা চাওয়া যাবে না। দ্রুত তদন্তের জন্য বলছি।”

শনিবার রাতে শুভঙ্কর জানান, বছর পাঁচেকের ওই নাবালকের করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। তাকে বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালেই আপাতত ভর্তি করানো হয়েছে।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Howrah Private Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy