Advertisement
E-Paper

বন্দি-পুলিশ সংঘর্ষে রণক্ষেত্র দমদম জেলে হত এক

দুই ধরনের বন্দিরা মিলে এ দিন জেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আগুন লাগিয়ে দেয় জেলের অফিসে।

ধুন্ধুমার: জেল চত্বরের ভিতরে গুলিতে জখম দুই বন্দি।। দমদম সেন্ট্রাল জেলের বাইরে থেকে গুলি পুলিশের। জেলের ভিতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে বন্দিরা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

ধুন্ধুমার: জেল চত্বরের ভিতরে গুলিতে জখম দুই বন্দি।। দমদম সেন্ট্রাল জেলের বাইরে থেকে গুলি পুলিশের। জেলের ভিতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছে বন্দিরা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৪
Share
Save

করোনা-আতঙ্কে আদালত কার্যত বন্ধ। ফলে আটকে গিয়েছে জামিনের শুনানি। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিবারের সঙ্গে দেখা করাও বন্ধ করে দিয়েছেন সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ। এই সব নিয়ে অসন্তোষের জেরে শনিবার তুলকালাম হল দমদম সংশোধনাগারে। বিচারাধীন বন্দিদের সঙ্গে যোগ দিল সাজাপ্রাপ্ত বন্দিরাও। তাদের অসন্তোষ প্যারোলে মুক্তির প্রক্রিয়াকে ঘিরে।

দুই ধরনের বন্দিরা মিলে এ দিন জেলে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আগুন লাগিয়ে দেয় জেলের অফিসে। এমনকি একটি গেটও ভেঙে ফেলে। নির্বিচারে ইট ছোড়ে পুলিশ ও কারারক্ষীদের লক্ষ্য করে। পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের পাশাপাশি গুলিও ছোড়ে বলে কয়েকটি সূত্রের দাবি। যদিও পুলিশ গুলি চালিয়েছে কি না, তা তাঁর জানা নেই বলে মন্তব্য করেছেন কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। পুলিশের পক্ষ থেকেও গুলি ছোড়ার কথা স্বীকার করা হয়নি। সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এক জন বন্দি মারা গিয়েছেন। তবে রাত পর্যন্ত তার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, বন্দিদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। তার গুলিতে বন্দির মৃত্যু হয়েছে কি না, তা ময়নাতদন্তের পরেই জানা যাবে।

এ দিকে, হাসপাতালে যাওয়ার পথে বিজয় দাস নামে এক আহত বন্দি দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে একাধিক লোক মারা গিয়েছে। আর জি কর হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রেও খবর, হাসপাতালে চারটি দেহ নিয়ে আসা হয়েছে। আহতদের অনেকেই গুলিতে আহত বলে জানা গিয়েছে। রাতে আর জি করের ট্রমা সেন্টারে গিয়ে দেখা যায় সৌরভ বিশ্বাস নামে এক বন্দির ডান হাতে গুলি লেগেছে। গালে গুলি লেগেছে হাফিজুল মোল্লার।

জেল থেকে কিছু বন্দি পালিয়ে গিয়েছে বলেও খবর রটেছে। যদিও রাত পর্যন্ত এর সত্যাসত্য জানা যায়নি। বন্দিদের হামলায় আহত হয়েছেন ডিজি (কারা) অরুণ গুপ্ত-সহ পাঁচ কারাকর্মী। বন্দি ও কারাকর্মী মিলিয়ে মোট ২৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: দু’হাতে রিভলভার নিয়ে জেলের মধ্যে হুঙ্কার বন্দির, দমদম হার মানাল বলিউডি ছবিকেও!

সম্প্রতি বারুইপুর সংশোধনাগারে বড় গোলমাল হয়েছিল। তার পরে দমদম। এই পরিস্থিতিতে শনিবারই পীযূষ পাণ্ডেকে এডিজি (কারা) পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এ দিন বিকেল ৪টে নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারেও বন্দিদের জটলা হয়েছিল। যদিও কারারক্ষী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় গোলমাল হয়নি।

প্রশাসনিক সূত্রে বলা হচ্ছে, ৩১ মার্চ পর্যন্ত আদালতে তেমন কাজ হবে না। ফলে বন্ধ রয়েছে জামিনের শুনানি। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ বিচারাধীন বন্দিরা। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে কারা কর্তৃপক্ষ বাড়ির লোকের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ আরও বাড়ে। কেন জামিন দেওয়া হবে না, এই প্রশ্ন তুলে এ দিন দুপুরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে তারা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় প্যারোলে ছাড়া পাওয়ার ফর্ম বিলি ঘিরে অসন্তোষ। করোনার কারণে জেলে ভিড় কমাতে ১০ বছরের বেশি সাজা খেটে ফেলা সভ্য, ভদ্র বন্দিদের প্যারোলে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। এই ভাবে বাছাইয়ের কারণ, এদের সঙ্গে পুলিশ দিতে হবে না। কিন্তু বাকি বন্দিরা প্রশ্ন তোলে, তাদেরও কেন ছাড়া হবে না।

গোলমাল দানা পাকাতে বন্দিদের মধ্যে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন জেলের কয়েক জন আধিকারিক। এই সময় আচমকা কিছু বন্দি বলতে শুরু করে, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনার দু’টি জেল ভেঙে বন্দিরা বেরিয়ে যাচ্ছে। তোরাও বেরিয়ে চল।’’ এর পরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। এক দল বন্দি জেলের ক্যান্টিনে ভাঙচুর শুরু করে। আর এক দল সুপারের অফিস-সহ প্রশাসনিক ভবনে চড়াও হয়ে দলিল-দস্তাবেজে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার পরে ক্যান্টিন ও রান্নাঘর থেকে গ্যাস সিলিন্ডার এনে জড়ো করে। জেলের ভিতরের একটি গেট ভেঙে ফেলা হয়। মূল গেটটিও ভেঙে ফেলার চেষ্টা শুরু করে বন্দিরা।

দমদম থানার প্রথম গাড়ি যখন এসে পৌঁছয়, তত ক্ষণে গেটের সামনে হাজারখানেক বন্দি এবং মাঠে হাজার দুয়েক বন্দি হাজির। পুলিশ জেলের ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তারা ইটবৃষ্টি শুরু করে। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ পুলিশ প্রথমে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা ছাড়াও, এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংহ, ডিজি (দমকল) জগমোহন এবং দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। আসে বিরাট পুলিশ বাহিনী ও র‌্যাফ। কিন্তু তার পরেও গোলমাল পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

বেলা ৩টে নাগাদ মাঠে জড়ো হয়ে থাকা বন্দিরা ফের ইট ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সঙ্গে গুলিও চালায় বলে অভিযোগ। এ বার ছত্রভঙ্গ বন্দিরা সংশোধনাগারের বিরাট চত্বরের নানা প্রান্তে লুকিয়ে পড়ে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পুলিশ ঢুকে তল্লাশি শুরু করে। লুকনো বন্দিদের পাকড়াও করে সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আহতদের।

এ দিন যে ভাবে হাঙ্গামা হয়েছে এবং গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে, জেলের গেট ভাঙার চেষ্টা হয়েছে, তাতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন অনেকে। জেলের ভিতরের ভিডিয়ো দেখে কারা ও পুলিশকর্তাদের দাবি, এক বন্দির হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। রীতিমতো উন্মত্ত অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল বাকিরা। কারামন্ত্রী বলেন, ‘‘বন্দিরা জামিনে ও প্যারোলে ছাড়ার আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু এ ভাবে ছাড়া যায় না। সংশোধনাগারে তাণ্ডব করলে আমাদের কী করার থাকতে পারে? এর পিছনে অন্য কোনও মাথা আছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে।’’ এ দিনই তদন্ত কমিটি তৈরি করে দ্রুত রিপোর্ট চেয়েছেন তিনি।

শুক্রবারই একটি নকশালপন্থী দল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচারাধীন বন্দিদের জামিনে ছাড়ার আর্জি জানায়। একই দাবিতে সরব হন মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ কয়েক জন মানবাধিকার কর্মীও। গোলমালের পিছনে এঁদের ভূমিকা আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলে দিল, প্রশাসনের উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ আছে কি?’’

বন্দিরা আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় জেলের একটা অংশে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জেনারেটর চালিয়ে কোনও মতে লক আপে ঢোকানো হয় বন্দিদের। রাতেই শুরু হয় ভেঙে ফেলে গেটটি সারানোর কাজ। গোলমালের খবর পেয়ে বিকেলে সংশোধনাগারের বাইরে জড়ো হন অনেক বন্দির পরিজনেরা। তাঁদের সঙ্গেও রীতিমতো ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। জেল গেটে হাজির এক মহিলা জানান, তাঁর ছেলে সঞ্জীব প্রামাণিক বন্দি। সে কোনও ভাবে বাড়িতে ফোন করে বলে, ‘‘জেলে গুলি চলছে। শেষ দেখা দেখতে হলে এক বার এসো।’’

Violence Dumdum Central Jail Death West Bengal Police Sujit Bose

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।