বিশৃঙ্খল: পুরভোটের জন্য মনোনয়ন জমা দিতে আসা নেতা-নেত্রীর সমর্থকদের বিধি-ভাঙা ভিড়। সোমবার, সল্টলেকে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
একের পর এক গাড়ি ও ছোট লরি দাঁড় করিয়ে দলে দলে নামছেন শাসকদলের সমর্থকেরা। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে ঝোলানো। বাজছে ব্যান্ড, দলীয় নেতাদের নামে উঠছে জয়ধ্বনি। পদস্থ পুলিশ আধিকারিক মাইক হাতে নিয়ে করোনার সতর্কবার্তা দিচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু কানে ঢোকাচ্ছেন না কেউই। অত্যুৎসাহীরা আবার প্রার্থীদের সঙ্গে মহকুমাশাসকের দফতরেও ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছেন। করোনা নিয়ে যখন উদ্বেগ তুঙ্গে, তখন সোমবার বিধাননগরে পুরভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনে এমনই ছবি দেখা গেল। যে ঘটনা ফের প্রশ্ন তুলে দিল রাজনৈতিক দলগুলির, বিশেষত শাসকদলের দায়বদ্ধতা নিয়ে।
বিধাননগরে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিদায়ী পুর প্রশাসকমণ্ডলীর স্বাস্থ্য বিষয়ক সদস্য প্রণয় রায় জানান, অল্প কয়েক দিনের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবারের এই জমায়েত সংক্রমণের উপরে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চলছে জল্পনা।
আগামী ২২ তারিখ বিধাননগরে পুরভোট। সোমবার ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিধাননগরে তৃণমূলের একাধিক ‘হেভিওয়েট’ নেতা এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে পৌঁছন সল্টলেকে মহকুমাশাসকের দফতরে। তাঁদের সমর্থনে ছোট লরি, গাড়িতে চেপে দলে দলে তৃণমূল সমর্থকেরাও পৌঁছে যান। পুলিশ তাঁদের নির্দিষ্ট জায়গায় আটকে দেওয়ায় জমায়েত দফতর পর্যন্ত পৌঁছয়নি। কিন্তু রাস্তায় যথেষ্ট ভিড় হতে দেখা গিয়েছে। জমায়েতের জেরে গাড়ির গতিও থমকে যেতে দেখা যায়। কেউ কেউ পুলিশের ব্যারিকেড টপকে দলীয় প্রার্থীর সঙ্গে মহকুমাশাসকের অফিসেও প্রবেশের চেষ্টা করেন। বিজেপির প্রার্থীরাও এ দিন মনোনয়ন জমা দিতে যান। তবে তাঁদের লোকজন কার্যত হারিয়ে গিয়েছিলেন শাসকদলের সমর্থকদের জমায়েতে।
শুধু তৃণমূলের পতাকাধারী সমর্থকেরাই নন, নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও এ দিন যান সল্টলেকে। সুজিত এবং জ্যোতিপ্রিয় মনোনয়ন জমা দেওয়ার কেন্দ্রেও যান। প্রার্থী না হওয়া সত্ত্বেও রাজারহাট থেকে আসেন নিউ টাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়। মনোনয়ন কেন্দ্রের বাইরে দেখা যায় দত্তাবাদের তৃণমূল নেতা নির্মল দত্তকেও। দু’-তিন দিন আগে মনোনয়ন জমা দেওয়া কৃষ্ণা চক্রবর্তীকেও দেখা যায় সেখানে। বেলা বাড়তেই একে একে শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল (ডাম্পি), দেবরাজ চক্রবর্তী, অনিতা মণ্ডল, চামেলি নস্কর, রহিমা বিবি মণ্ডল, জয়দেব নস্কর, আরাত্রিকা ভট্টাচার্য-সহ বিধাননগরের নেতা-নেত্রীরা মনোনয়ন জমা দিতে যান। সকালে মনোনয়ন জমা দিয়ে যান সব্যসাচী দত্তও। ডাম্পি পরে বলেন, ‘‘মনোনয়ন নিয়ে মানুষের আবেগ তো থাকবেই। তবে তার মধ্যে সবাইকে সতর্কও হতে হবে।’’
চরম বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে দেখা যায় মহকুমাশাসকের অফিসের অদূরে পুলিশের ব্যারিকেডের বাইরে। এক সময়ে বিধাননগরের এসিপি শান্তনু কোঙারকে হাতজোড় করে মাইকে বলতে শোনা যায়, ‘‘করোনা এখনও আমাদের ছেড়ে যায়নি। এত মানুষ ভিড় করবেন না। যাঁদের এখানে দরকার নেই, তাঁরা দয়া করে ফিরে যান।’’ কিন্তু সেই ঘোষণায় কর্ণপাত করেননি উৎসাহী তৃণমূল সমর্থকেরা।
সঙ্গে প্রচুর লোক নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিধাননগরের ১৪টি ওয়ার্ডের যুব সভাপতি জয়দেব নস্করের বিরুদ্ধেও। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে জয়দেব বলেন, ‘‘সঙ্গে মাত্র ছ’-সাত জন ছিলেন। আমি এখানকার যুব সভাপতি। দু’টি ওয়ার্ড থেকে বহু সমর্থক পৌঁছে যান। আমি যেতে বলিনি। সবাই মাস্ক পরেছিলেন।’’ ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে শুধু প্রস্তাবকেরা ছিলেন। সবাইকে বারণ করেছিলাম করোনা পরিস্থিতিতে কোনও মিছিল, জমায়েত না করতে।’’ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, নেতা-নেত্রীরা কেন নিজেরা জমায়েত ঠেকানোর জন্য সমর্থকদের উদ্দেশে বার্তা দিলেন না?
বিধাননগরের মহকুমাশাসক তথা রিটার্নিং অফিসার বিশ্বজিৎ পান্ডা বলেন, ‘‘রবিবারই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকে বলা হয়েছিল কোনও ধরনের জমায়েত না করতে। আমার অফিসের একশো মিটার আগে লোকজনকে আটকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রার্থী এবং তাঁদের সঙ্গে থাকা নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকজনকেই অফিসের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে।’’
তৃণমূলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনোনয়ন জমা নিয়ে একটা আবেগ কর্মী-সমর্থকদের থাকেই। করোনার সময়ে এটা হয়তো ঠিক হয়নি। এমনটা যে হতে পারে, সেটা আন্দাজ করে নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল আগে থেকেই নির্দেশিকা জারি করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy