ভেন্টিলেশনে সেই নার্স। নিজস্ব চিত্র
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেশনের আতঙ্ক কাটছে ডাক্তারদের। আর এর ফলেই ঠেকানো যাচ্ছে মৃত্যুর হার। এমনটাই দাবি করছেন চিকিৎসকদের একটি অংশ। তাঁদের ব্যাখ্যা, ভেন্টিলেশনে থাকা প্রতি একশো জন কোভিড রোগীর মধ্যে যেখানে এপ্রিল-মে মাসে ৩০ জন মারা যাচ্ছিলেন, জুলাইয়ের গোড়ায় সেই সংখ্যাটা ২০।
জুনের শেষ সপ্তাহের কথা। করোনা আক্রান্ত হয়ে টানা ১৭ দিন ভেন্টিলেশনে থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ডিসান হাসপাতালের কোভিড বিভাগের নার্স পিয়াসী পালিত। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আগে থেকেই ফুসফুসের সমস্যা ছিল তাঁর। গত বছর ডেঙ্গি হলেও কোভিড বিভাগের দায়িত্ব এড়াননি তিনি। কোভিড ইউনিটে নিয়মিত ডিউটি করতেন। জ্বর আসায় ২৬ মে সেখানেই ভর্তি হন। ২৯ তারিখ তাঁর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তাঁর চিকিৎসক মোহিত খারবান্দা জানান, ৩ জুন থেকে পিয়াসী কোমায় চলে যান। তাঁকে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। এক সময়ে চিকিৎসকদের মনে হয়েছিল, বোধহয় তাঁরা হেরে যাবেন। কিন্তু ১৭ দিন কোমায় থাকার পরে জিতে যান পিয়াসী ও চিকিৎসকেরা। গত সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছেন তিনি। দুর্বলতা থাকলেও স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করছেন, ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।
ওই হাসপাতালের কোভিড চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্রথম দিকে করোনায় কোন ওষুধে কাজ দেবে, চিকিৎসার প্রোটোকল কী হবে কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। গত তিন মাসে করোনা চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ভেন্টিলেশন প্রোটোকল তাঁদের কাছে কিছুটা হলেও স্পষ্ট হয়েছে। দীর্ঘায়িত ভেন্টিলেশন কাটিয়ে ফিরে আসা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির এটিও অন্যতম কারণ। এমনকি ৯০, ৯৪ বছরের করোনা রোগীরও সুস্থ হয়ে ওঠার খবর সামনে আসছে।
আরও পড়ুন: করোনায় মৃতদের স্মৃতিতে ‘সৌধ’ তৈরির ভাবনা
আরও পড়ুন: স্মার্ট কার্ডের বদলে কাগজের লাইসেন্স আবেদনকারীদের
ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, প্রথম দিকে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে করোনা রোগী ভেন্টিলেশনে ঢুকলে ৪০ শতাংশই মারা যাচ্ছিলেন। কারণ, কী ওষুধ এবং কতটা দিতে হবে সেটাই বোঝা যাচ্ছিল না। সম্প্রতি তিন সপ্তাহ ভেন্টিলেশনে থাকার পরে সুস্থ হয়েছেন তাঁরই এক করোনা রোগী। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ সুগত দাশগুপ্তের কথায়, ‘‘কোভিডে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের ব্যবহারের সাফল্য গোটা পৃথিবীতেই আশাপ্রদ নয়। প্রথম দিকে এই ভেন্টিলেশনের কারণে অনেক রোগী মারা গিয়েছেন। এখন চিকিৎসকেরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।’’
একই কথা বলেছেন কোভিড হাসপাতাল এম আর বাঙুরে করোনা রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এক ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে এন্ডো-ট্র্যাকিয়াল টিউব রোগীর গলায় ঢোকানো হয়। এ কারণেই মৃত্যু বেশি হচ্ছিল। সেই জায়গায় এখন নন-ইনভেসিভ পদ্ধতি অর্থাৎ রোগীর মুখে মাস্কের সঙ্গে ভেন্টিলেটর জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ইতিবাচক ফল মিলছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আগে রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমলেই ভেন্টিলেশনে দেওয়া হচ্ছিল। এখন নন-ইনভেসিভ পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। তাতে টানা ১৫, এমনকি ২৫ দিন ভেন্টিলেশনে থাকা করোনা রোগীকেও সুস্থ করা যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy