Advertisement
২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা শহর জুড়েই, বেশি অবাধ্য উত্তর, তুলনায় সংযত দক্ষিণ

ফুলবাগানের সুরেন সরকার স্ট্রিটের একটি অংশ কন্টেনমেন্ট জ়োন হলেও সেখানে মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় আড্ডা মারতে দেখা গেল কয়েক জন তরুণ ও তরুণীকে।

দুই মুখ: (বাঁ দিকে) নাগেরবাজারের কাছে কাজিপাড়া কন্টেনমেন্ট জ়োনে ব্যারিকেডের বালাই নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। (ডান দিকে) ভবানীপুরে চক্রবেড়িয়া কন্টেনমেন্ট জ়োনে গলির মুখে ব্যারিকেডের কারণে আটকে পড়েছেন এক ব্যক্তি।  শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

দুই মুখ: (বাঁ দিকে) নাগেরবাজারের কাছে কাজিপাড়া কন্টেনমেন্ট জ়োনে ব্যারিকেডের বালাই নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করে কেনাকাটায় ব্যস্ত ক্রেতারা। (ডান দিকে) ভবানীপুরে চক্রবেড়িয়া কন্টেনমেন্ট জ়োনে গলির মুখে ব্যারিকেডের কারণে আটকে পড়েছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক, দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

এ যেন লকডাউনের নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা। যা শুরু হল শুক্রবার সকাল থেকেই। সেই নিয়ম ভাঙার খেলায় দেখা গেল, এগিয়ে রয়েছে উত্তর কলকাতা ও শহরতলি। আর বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা বাদ দিলে দক্ষিণে নিয়ম ভাঙার সংখ্যা তুলনায় অনেকটাই কম। এ দিন শহরের দক্ষিণ, উত্তর এবং উত্তর শহরতলিতে ঘুরে দেখা গেল এমনই নানা চিত্র।

ফুলবাগানের সুরেন সরকার স্ট্রিটের একটি অংশ কন্টেনমেন্ট জ়োন হলেও সেখানে মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় আড্ডা মারতে দেখা গেল কয়েক জন তরুণ ও তরুণীকে। আবার ওই রাস্তা সংলগ্ন একটি গলির ভিতরেই জমিয়ে ফুটবল খেলছিল কচিকাঁচারা। কিছু মুদিখানা এবং চায়ের দোকানও ছিল খোলা। এক চায়ের দোকানে দেখা গেল, দোকানি যুবক নিজেই মাস্ক ছাড়া রয়েছেন। কিন্তু কন্টেনমেন্ট জ়োনে দোকান খোলা কেন?

ওই দোকানির কথায়, ‘‘কী করব? পেট তো চালাতে হবে। তাই দোকান খুলেছি।’’ কাঁকুড়গাছির মতিলাল বসাক লেনে আবার রাস্তায় কোনও ব্যারিকেড নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, যিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর বাড়ির সামনেটাই শুধু ঘেরা হয়েছে। ওই বাড়ির কাছে খোলা দোকানে মাস্ক না-পরেই ইস্ত্রি করছিলেন এক দোকানি। মাস্ক পরেননি কেন? উত্তর এল, ‘‘এইমাত্র ভাত খেয়ে উঠলাম। মাস্ক পরলে গরম লাগে, তাই খুলেছি।’’ উত্তরের তেলেঙ্গাবাগান, গিরিশ পার্ক ও রাজা রামমোহন রায় স্ট্রিটে পুলিশি কড়াকড়ি ছিল ভালই।

আরও পড়ুন: করোনা-উপসর্গ থাকলেও তথ্য ‘মিলছে না’ বিমানযাত্রীদের

দক্ষিণ কলকাতার কন্টেনমেন্ট জ়োনে এ দিন দোকান-বাজার সবই বন্ধ ছিল। বিজয়গড় বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, রাস্তার দু’প্রান্তে গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। ওই অংশের মাঝের কয়েকটি গলিও বিশেষ ভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে। রাস্তা পুরো ফাঁকা থাকলেও হঠাৎ দেখা গেল, একটি গলি দিয়ে স্কুটার বেরোনোর জায়গা করে দিতে গার্ডরেল ঠেলে সরাচ্ছেন এক প্রৌঢ়। কৃষ্ণ সাহা নামে ওই প্রৌঢ়ের দাবি, ‘‘স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে হবে। তাই নিয়ে গেল ছেলে।’’ কসবার জি এস বসু রোড এলাকাতেও দেখা গেল, একটি গলির মুখে থাকা গার্ডরেলের ফাঁক দিয়ে স্কুটার চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন এক ব্যক্তি। অন্য দিকে, ওই রাস্তারই আর একটি অংশে সিভিক ভলান্টিয়ারের ধমক খেয়ে স্কুটার ঘুরিয়ে ফিরে যেতে হল এক জনকে।

আরও পড়ুন: লকডাউনের নিয়মে ফিরল একাধিক আবাসন

ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া উত্তরে সাতটি বহুতলকে নিয়ে তৈরি হয়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োন। এ দিন সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এলাকা পুরো ফাঁকা। বহুতলের নীচ থেকে বাসিন্দাদের ডেকে কথা বলছেন পুলিশ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর অসীম বিশ্বাস। জানা গেল, ওই সাতটি বহুতলের বাসিন্দাদের নিয়ে সাতটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাতে সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা দিয়ে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। জিনিসপত্র আনার পরে তা ব্যারিকেডের সামনেই রেখে দেওয়া হচ্ছে। পরে সেগুলি এসে নিয়ে যাচ্ছেন বাসিন্দারা। আবার চক্রবেড়িয়া দক্ষিণের একটি গলির মুখে ব্যারিকেডের ভিতরে দাঁড়িয়ে নীতিন উদানির দাবি, ‘‘চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে আমার চিকিৎসার সরঞ্জামের দোকান রয়েছে। ওটা জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। তা-ও পুলিশ বেরোতে দিচ্ছে না।’’

অন্য দিকে, উত্তর শহরতলির বাঙুর সুপার মার্কেটের রাস্তায় ব্যারিকেড লাগানো থাকলেও দেখা গেল, পুলিশের সামনেই তা টপকে চলছে যাতায়াত। এমনকি, ওই বাজার সংলগ্ন আর একটি রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে ঘেরা থাকলেও সেখানে মাস্ক না-পরেই শ্রমিকেরা বাড়ি তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকটা একই অবস্থা নাগেরবাজার এলাকার ভগবতী পার্ক ও দমদম রোডের মতিঝিল এলাকার কন্টেনমেন্ট জ়োনের। ভগবতী পার্কের যে বাড়িতে করোনা-আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে, সেখানেও দেখা গেল না কোনও ব্যারিকেড। তবে এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘ওই ব্যক্তি তো এখন অনেকটাই সুস্থ। তাই ব্যারিকেডের আর কী দরকার?’’ বেনিয়াপুকুরের লিন্টন স্ট্রিটে গার্ডরেলের ঘেরাটোপের ভিতরে ঘুরে বেড়ানো লোকজন আবার বলছেন, ‘‘পাড়ায় বেরোলে মাস্কের প্রয়োজন কী?’’

এ দিন নাগেরবাজারের কাজিপাড়া কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে পড়লেও সেখানে দোকান-বাজার সবই খোলা ছিল। মিন্টু দাস নামে এলাকার এক বাসিন্দার দাবি, ‘‘যে বাড়িতে করোনা হয়েছে, সেখানে তো ব্যারিকেড দিয়েছে। কিন্তু পুরো এলাকা ঘিরে দিলে বাজার করব কী ভাবে?’’ ঠিক একই ভাবে অজয়নগরের কন্টেনমেন্ট জ়োনের একটি গলির ব্যারিকেডের ফাঁক দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঢোকার সময়ে দীপঙ্কর হালদার নামে এক যুবকের দাবি, ‘‘চুল কাটতেও যাব না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in Kolkata Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy