প্রতীকী ছবি।
হাতিবাগানের বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের রমেন মণ্ডল কিডনির সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন। সম্প্রতি এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্সের অনেক খোঁজ করেও পাননি। শেষমেশ এক পরিচিতের গাড়িতে করে তিনি ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে পৌঁছন। একই রকম হয়রানি হয়েছিল যাদবপুরের বাসিন্দা, হৃদ্রোগী বনানী বিশ্বাসের। সম্প্রতিআগে পাড়ার ক্লাব থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাননি। এক প্রতিবেশীর গাড়িতে করে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
একে করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক, তার সঙ্গে প্রায় তিন মাস ধরে চলা লকডাউন আবহে কলকাতায় অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়াটা কার্যত হাতে চাঁদ পাওয়ার সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, পুরসভার নিজস্ব অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে ১২টি। শহরে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা ৫০০-র বেশি। করোনা সংক্রমণ শুরু হতেই অ্যাম্বুল্যান্সের চাহিদা বাড়তে থাকে। অভিযোগ, মার্চ থেকে বেশির ভাগ পাড়ার ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স মেলা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। জানা গিয়েছে, সরকারি সাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্লাবই তৃতীয় সংস্থাকে দিয়ে ভাড়া খাটাচ্ছে।
কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষের অভিযোগ, ‘‘করোনা রোগীর নাম শুনলেই ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স যেতে চাইছে না। অন্য রোগীদেরও নিয়ে যেতে চাইছেন না বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা। অজস্র অভিযোগ আসছে। সরকার নানা সময়ে ক্লাবগুলিকে আর্থিক সহায়তা দেয়। বিপদের সময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়ালে আমরা ওই সমস্ত অ্যাম্বুল্যান্সের লাইসেন্স বাতিল করতে বাধ্য হব।’’
আরও পড়ুন: বৃক্ষরোপণে বাসিন্দাদের শামিল করার ভাবনা
কুমোরটুলির একটি ক্লাবের অধীনে দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স ও একটি শববাহী গাড়ি রয়েছে। ওই ক্লাবের সদস্য তথা গাড়িচালক নিতাইচন্দ্র দে-র অভিযোগ, ‘‘বেশির ভাগ ক্লাব সরকারি সাহায্যে অ্যাম্বুল্যান্স পেলেও অন্য কাউকে ভাড়া দিচ্ছে। তাই বিপদের সময়ে ক্লাবগুলি থেকে অ্যাম্বুল্যান্স পাচ্ছেন না মানুষ।’’ উত্তর কলকাতার খন্না এলাকার একটি ক্লাব থেকে দু’বছর ধরে অ্যাম্বুল্যান্স লিজ় নিয়ে চালাচ্ছেন আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘এখন অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছি না। ক্লাবের তরফে কয়েক মাসের বকেয়া মেটাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।’’ ক্লাবের ফোন নম্বর চাইতে গেলে ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘ক্লাব থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে চালাচ্ছি, এটা গোপন বিষয়। ক্লাবের নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলেই ওরা অ্যাম্বুল্যান্স কেড়ে নেবে।’’
আরও পড়ুন: সাইবার হানা নিয়ে ফেসবুকে প্রচার হাওড়া পুলিশের
উত্তর কলকাতার নিমতলার একটি ক্লাবের সদস্য দেবাশিস মোহান্তি বলেন, ‘‘১০টি অ্যাম্বুল্যান্স ও আটটি শববাহী গাড়ি রয়েছে আমাদের। সরকারি সাহায্য পাই না। চালকেরা আসছেন না। ফলে আমাদের সব অ্যাম্বুল্যান্স চলছেও না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরে অ্যাম্বুল্যান্স চালক এবং খালাসির পিপিই পরা বাধ্যতামূলক। কিন্তু পিপিই কিনতে গেলে পুরোটাই নিজেদের পকেট থেকে দিতে হবে। চালকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।’’
বিরাটির একটি ক্লাবের দু’টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। এক সদস্য মানিক দাসের কথায়, ‘‘জ্বর, সর্দি-কাশির রোগী শুনলেই না বলে দিই। অন্য রোগের কথা বললেও খুব চেনাজানা থাকলে, সব জেনে নিয়ে তবে রাজি হই।’’ করোনার উপসর্গ থাকা এক রোগীর মৃত্যুর পরে গত ২৩ এপ্রিল উত্তর চব্বিশ পরগনার অশোকনগরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে জীবনকৃষ্ণ দে নামে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ব্রাত্য করেছিলেন স্থানীয়েরা। সম্প্রতি মেদিনীপুরের ঘাটালে এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই সমস্ত খবরে এ শহরের চালকেরাও আতঙ্কিত হয়ে কাজে আসতে চাইছেন না বলে একাংশের অভিমত।
উত্তর কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার ডি আশিস বলেন, ‘‘পুরসভার তরফে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকদের জন্য পিপিই-র জন্য ব্যবস্থা করলে ওঁদের নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হয়।’’ এ প্রসঙ্গে অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের চালকেরা পুরসভার কাছে পিপিই-জন্য আবেদন করলে নিশ্চয়ই দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy