কলকাতা
আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই দ্বিতীয় ঘটনা।
করোনার উপসর্গ থাকা ১৮ বছরের তরুণ একাধিক সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে গত শুক্রবার মারা গিয়েছেন। কার্যত একই রকম ভাবে রবিবার সকালে এক প্রৌঢ়ার মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল নিউ ব্যারাকপুরের একটি পরিবার। যদিও স্বাস্থ্য দফতর কিংবা প্রশাসনের কোনও মহলে তাঁরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি বলেই মৃতের পরিজনেরা জানিয়েছেন।
শিপ্রা পাল নামে ৫২ বছরের ওই মহিলা নিউ ব্যারাকপুরের লেনিনগড়ের বাসিন্দা ছিলেন। অসুস্থ থাকাকালীনই তাঁর কোভিড পরীক্ষা করানো হয়েছিল বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা জানান, শিপ্রাদেবীর মৃত্যুর পরে তাঁর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। পরিবারের অভিযোগ, শনিবার সারা রাত তাঁরা অসুস্থ শিপ্রাদেবীকে নিয়ে দু’টি সরকারি হাসপাতাল ও দু’টি নার্সিংহোমে ঘুরেছিলেন। কিন্তু কোথাও তাঁকে ভর্তি করাতে পারেননি। রবিবার সকালে বাড়িতেই মৃত্যু হয় শিপ্রাদেবীর। তাঁর ছেলে অনির্বাণ সোমবার জানান, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে তাঁর মায়ের। অনির্বাণ বলেন, ‘‘দিন সাতেক আগে মায়ের জ্বর, সর্দি ও কাশির উপসর্গ দেখা যায়। স্থানীয় চিকিৎসক করোনা পরীক্ষা করাতে বলেন। সেই মতো দিন দুয়েক আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মায়ের করোনা পরীক্ষা হয়।’’
আরও পড়ুন: আতঙ্কে মায়ের দেহ ফ্ল্যাটের বাইরেই রাখলেন ছেলে
আরও পড়ুন: ভেন্টিলেশন পদ্ধতিতে বদল, করোনা জয় করলেন নার্স
শিপ্রাদেবীর স্বামী কৃষ্ণগোপালবাবুর অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার আমার স্ত্রী খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। তখনই আমরা ওঁকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে শয্যা এবং অক্সিজেন নেই বলে জানানো হয়।’’
পরিজনেরা জানান, রিপোর্ট না আসায় তাঁরা শিপ্রাদেবীকে কোনও করোনা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি। কিন্তু শনিবার রাতে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় শিপ্রাদেবীর। তাঁরা জানান, রাতেই গাড়িতে চাপিয়ে মহিলাকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, শুক্রবারের মতো ওই রাতেও শয্যা নেই বলে আর জি কর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। মহিলার স্বামী জানান, আর জি কর থেকে তাঁরা শিপ্রাদেবীকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তাঁদের জানানো হয় কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় সেখানে নতুন কোনও রোগী ভর্তি হচ্ছে না। এর পরে তাঁরা ভিআইপি রোড এবং নিউ ব্যারাকপুরের একটি নার্সিংহোমেও শিপ্রাদেবীকে ভর্তির জন্য নিয়ে যান। অভিযোগ, সেখানেও জায়গা হয়নি প্রৌঢ়ার। এ ভাবে সারা রাত হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে ঘুরে শেষ পর্যন্ত রবিবার ভোরে তাঁরা বাধ্য হয়ে শিপ্রাদেবীকে নিয়ে নিউ ব্যারাকপুরের বাড়িতে ফিরে যান।
ছেলে অনির্বাণের কথায়, ‘‘মায়ের তখন প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বাড়িতে এনে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু ৪০ মিনিটের মধ্যেই মা মারা যান।’’ সকাল ১০টা নাগাদ শিপ্রাদেবীর কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পায় তাঁর পরিবার। তখনই জানা যায় শিপ্রাদেবী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অনির্বাের কথায় ‘‘করোনার সমস্যার কারণেই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হল মায়ের। কোনও হাসপাতালে অক্সিজেন, চিকিৎসা পেলে হয়তো মা বেঁচে যেতেন।’’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আর জি করে বাস্তবিকই রোগীর চাপ রয়েছে। সেখানে করোনা সন্দেহভাজনদের জন্য আরও শয্যাবৃদ্ধি করা হচ্ছে। মেডিক্যাল কলেজ এখন পুরোপুরি কোভিড। তা হলেও কোনও হাসপাতালেরই আশঙ্কাজনক রোগীদের ফেরানো উচিত নয়। আগামী দিনে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে পুরো ভর্তি প্রক্রিয়া সমস্যামুক্ত হতে একটু সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy