Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

একটার পর একটা দেহ উঠছে পুরসভার গাড়িতে, ভাইরাল ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক

প্রত্যেকটি দেহেই পচন ধরে গিয়েছে, চামড়া-মাংস খুলে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে।

এই গাড়িতেই দেহ তোলা নিয়ে বিতর্ক। ছবি: ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

এই গাড়িতেই দেহ তোলা নিয়ে বিতর্ক। ছবি: ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ১৯:১৮
Share: Save:

শ্মশানের ভিতর দাঁড়িয়ে কলকাতা পুরসভার গাড়ি। একের পর এক মৃতদেহ মাটিতে ঘষটে টেনে তোলা হচ্ছে সেই গাড়িতে। আর সেখানে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কিছু মানুষ।

বুধবার রাত থেকেই এ রকম একাধিক ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেই ভিডিয়ো ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রাজ্যপাল থেকে শুরু করে রাজ্যের বিরোধীরা— সকলেই মুখ খুলেছেন এই প্রসঙ্গে। বিক্ষোভকারীদের একাংশের অভিযোগ, পুরসভার গাড়িতে করোনা আক্রান্তদের দেহ পোড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই শ্মশানে। যদিও সেই বক্তব্য ভিত্তিহীন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, সেটি গড়িয়ার বোড়াল শ্মশান। কলকাতা পুলিশের বাঁশদ্রোণী থানা এলাকার অন্তর্গত। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, পরনে গামছা এবং পায়ে গামবুট পরে কয়েকজন ডোম শ্মশানের ভিতর থেকে মৃতদেহগুলির গলায় দড়ি বা লোহার আঁকশি জাতীয় কিছু দিয়ে মাটিতে ঘষটে টেনে পুরসভার গাড়িতে তুলছেন। প্রত্যেকটি দেহেই পচন ধরে গিয়েছে, চামড়া-মাংস খুলে হাড় বেরিয়ে গিয়েছে।

বোড়াল শ্মশান সংলগ্ন কামডহরি পূর্ব পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, ভিডিয়োটি স্থানীয় বাসিন্দাদের তোলা। ঘটনাটি গত বুধবার ওই শ্মশানে ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই দিন দুপুরে কলকাতা পুরসভার একটি শববাহী গাড়ি শ্মশানে ঢোকে। তার পর একের পর এক দেহ নামানো শুরু হয়। পচা-গলা দেহ হওয়ার গোটা এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। সেই দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে শ্মশানে ছুটে আসেন এলাকার মানুষ। তাঁরা জানতে পারেন, পুরসভার গাড়িতে করে একাধিক পচাগলা দেহ নিয়ে আসা হয়েছে সৎকারের জন্য। সেই দেহ থেকেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এর পর তাঁরা শ্মশানের মূল দরজা বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে পুরসভার কর্মীরা শ্মশান থেকে ফের দেহগুলি তুলে নিয়ে চলে যান। ওই দেহগুলি কাদের এবং কোথা থেকে এল তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, দেহগুলি করোনা আক্রান্তদের।

আরও পড়ুন: আমার বিশ্বাস, কলকাতা আবার দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

সেই সময়ে কেউ কেউ গোটা ঘটনার ভিডিয়ো করেন নিজেদের মোবাইলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তোলা সেই ভিডিয়ো দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। আনন্দবাজার ডিজিটাল যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ওই ভিডিয়ো ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলে কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র দাবি করে যে, স্বাস্থ্য দফতর তাদের জানিয়েছে দেহগুলি করোনা-আক্রান্তদের নয়।

দেখুন সেই ভিডিয়ো:

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ওই ভিডিয়ো প্রসঙ্গ তুলে একটি টুইট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘‘আমাদের সমাজে মৃতদেহকে সম্মান দেখানোটাই রীতি। যে ভাবে ওই দেহগুলি দাহ করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা অবর্ণনীয় এবং অসংবেদনশীল। গোটা বিষয়টি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চেয়েছি।” পরে তিনি বিকেলের দিকে ফের টুইট করেন। সেখানে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছ থেকে তিনি এ বিষয়ে জবাব পেয়েছেন। রাজ্যপাল ওই টুইটে দাবি করেন, স্বরাষ্ট্রসচিব মেনে নিয়েছেন, ওই দেহগুলি দাহের ক্ষেত্রে সঠিক বন্দোবস্ত করা হয়নি। রাজ্যপালের দাবি, ভবিষ্যতে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে দেহ দাহ করা হবে বলেও তাঁকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব।

আরও পড়ুন: করোনা-আতঙ্কে জঞ্জাল ফেলার গাড়িতে মৃতদেহ সরানো, ক্ষোভ প্রকাশ করল পুলিশও

বিষয়টি নিয়ে সরব হয় রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অ্যাসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে চেনা না যায়। চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের মৃতদেহের প্রতি এই ব্যবহার! পুরসভার উচিত, যাবতীয় তথ্য দিয়ে মৃতদেহের তালিকা মানুষকে জানানো। অপদার্থ মেয়রকে দায় নিতে হবে। বাসি মেয়র হয়ে ক্ষমতা দখল করে বসে আছেন!’’

বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘ভিডিয়োটি আমি দেখেছি। পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমকে এ বিষয়ে চিঠিও লিখেছি। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাবেন, সেটাই স্বাভাবিক। মানুষ সঠিক তথ্য জানতে চায়। এই ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য অবিলম্বে প্রকাশ করুক পুরসভা। না হলে জনমানসে সন্দেহ এবং বিরক্তি থাকবে।’’

অন্য দিকে, কলকাতা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ওই দেহগুলি বোড়ালের গড়িয়া আদি মহাশ্মশানের ৪ নম্বর চুল্লিতে পোড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সই করা ২৯ মে-র একটি নথিও প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, পুরসভার বোর্ড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের চেয়ারম্যানের নির্দেশে বেওয়ারিশ দেহগুলি গড়িয়া আদি শ্মশানে দাহ করা হবে।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নীলতরন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ শৈবালকুমার মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার নগরপাল অনুজ শর্মাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর হাসপাতালের মর্গ থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এবং বেওয়ারিশ তালিকাভুক্ত ১৪টি দেহ কলকাতা পুরসভাকে হস্তান্তর করা হয়েছিল দাহ করার জন্য। তবে দেহগুলি কোভিড আক্রান্তদের নয়। কোভিড আক্রান্ত বলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শৈবালবাবু। পুলিশকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতেও অনুরোধ করেছেন তিনি।

নির্দিষ্ট সময় অন্তর বেওয়ারিশ দেহ পুরসভার সাহায্যে দাহ করাটাই রীতি, এমনটাই মত কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষের। পুলিশের দাবি, নাগরিকদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে কারণে করোনা পর্বের আগে ওই দেহগুলো ধাপায় দাহ করা হত। কিন্তু করোনা পর্বে, ধাপার চুল্লিগুলি কোভিড-আক্রান্ত হয়ে মৃত হিন্দুদের সৎকারের জন্য নির্দিষ্ট হওয়ায় বেওয়ারিশ দেহ সৎকার করার জন্য পুরসভাই বোড়ালের শ্মশানটি নির্দিষ্ট করে। কিন্তু বুধবার স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় তা দাহ না করেই পুরসভার গাড়ি দেহগুলি নিয়ে ফিরে আসে বলেই দাবি করেছে কলকাতা পুলিশের একটি সূত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Kolkata KMC Dead Body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy