প্রতীকী ছবি।
এলাকায় ফিরলে প্রতিবেশীরা কী বলবেন, বাড়িতেই বা কী ভাবে থাকা সম্ভব, এ সমস্ত ভেবে সেরে ওঠার পরেও বহু করোনা আক্রান্তই হাসপাতালের শয্যা আঁকড়ে পড়ে থাকছেন। এমনই দাবি করছেন একাধিক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে কাজ করছে রোগীদের মানসিক আতঙ্ক, ‘আমি পুরোপুরি সুস্থ তো!’ এ সব কারণেই হাসপাতালের শয্যা অনেক দিনের জন্য দখল হয়ে থাকছে বলে দাবি।
সংক্রমিতের সংখ্যা যেখানে প্রতিদিন বাড়ছে, সেখানে রোগীদের একটি বড় অংশের এই মানসিকতা অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এখন চিন্তার কারণ। এক দিকে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নিজেদের আতঙ্ক, অন্য দিকে তাঁদের নিয়ে সমাজের একটি অংশের আতঙ্ক, এই দুই মানসিকতা পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল করে তুলছে বলে জানাচ্ছে চিকিৎসক মহল।
বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলছেন, “৭-৮ দিনের মধ্যে অনেক রোগীই সেরে উঠছেন। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে কোথায় থাকবেন, পড়শিরা কী বলবেন, এ সব ভেবেই অনেকে যেতে চাইছেন না। তা ছাড়াও ‘আমি তো এখনও সুস্থ হইনি’, এই ভীতিও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কোভিড-যুদ্ধে রাজারহাটে ভরসা ‘এসএমএস’
আরও পড়ুন: ড্রোন উড়িয়ে ভিড়ের উপরে নজরদারি নিউ টাউনে
পিয়ারলেস হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্রের কথায়, ‘‘বিরোধিতার ভয়ে আগে অনেক রোগীই হাসপাতাল ছেড়ে যেতে চাইতেন না। এখনও সেই মানসিকতা রয়েছে ঠিকই। তবে কিছুটা কমেছে।’’
এই ভীতি কেন? মনোবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, এলাকায় ফিরলে করোনা আক্রান্তদের হেনস্থা হতে হচ্ছে নানা ভাবে। রাজ্য জুড়ে এমন অনেক ঘটনাই ঘটেছে। সেই সব ঘটনা রোগীদের মনে আতঙ্ক তৈরি করছে বলে মানছে চিকিৎসক মহল। মানসিক চিকিৎসার উৎকর্ষকেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রি’-র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা জানাচ্ছেন, করোনা আক্রান্তদের নিয়ে অনেকের মনে একটা দ্বন্দ্ব কাজ করছে। প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘করোনা আক্রান্ত রোগীকে সামনে দেখে ‘তাঁর থেকে আমিও আক্রান্ত হতে পারি’, এই ভয় থেকেই হচ্ছে বিরোধিতা। অথচ সেই মানুষই যখন বাজারে যাচ্ছেন, তখন মাস্ক ছাড়াই দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কারণ, তখন তিনি আতঙ্কের কোনও কারণ আশপাশে দেখতে পাচ্ছেন না। এই মুহূর্তে অধিকাংশের মনেই এই দ্বন্দ্ব কাজ করছে।” ‘ইন্ডিয়ান সোশিয়োলজিক্যাল সোসাইটি’-র সদস্য অধ্যাপক রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায়ের আবার বক্তব্য, ‘‘করোনা সংক্রান্ত ভুল তথ্য, সচেতনতার অভাব, সংক্রমণ রোধ করা যাবে কী ভাবে সে সম্পর্কে অজ্ঞতা― ভীতির কারণ।’’
চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, সংক্রমিতের অনেকেই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের দু’রকম সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এমনিতেই বেসরকারি হাসপাতালে কোভিডের জন্য বরাদ্দ শয্যা পর্যাপ্ত নয়। অন্য দিকে, এক বার কোভিড পজ়িটিভ হয়ে ভর্তি হলে কমপক্ষে ১৪ দিনের জন্য হাসপাতালের একটি শয্যা দখল হয়ে থাকছে। সুস্থ হয়ে গেলে রোগীকে দ্রুত ছেড়ে (ডিসচার্জ) দিতে হবে, এই মর্মে সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই তা করা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
মেডিকার সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, কার্ডিয়োথোরাসিক চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি এবং ছাড়া পাওয়ার যে বৃত্ত রয়েছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ রোগীদের ক্ষেত্রে তা হল গড়ে ৬-৭ দিন। সেখানে একটি হাসপাতালে যদি ৫০টি শয্যাও করোনার জন্য বরাদ্দ থাকে, এক জন আক্রান্ত ভর্তি হলে একটি শয্যা দু’সপ্তাহের জন্য আটকে থাকে।’’
এই সমস্যা সমাধানের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, যাঁদের প্রকৃত চিকিৎসার প্রয়োজন, তাঁদেরই শুধু ভর্তি নেওয়া হবে। এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তার বক্তব্য, ‘‘অনেক হাসপাতালই হোটেল–সহ বিভিন্ন জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছে। যাঁরা বাড়ি ফিরতে স্বচ্ছন্দ নন, তাঁরা সেখানেই থাকতে পারেন। সেখানে বিশেষ চিকিৎসারও দরকার নেই। নিজেই নিজের দেখভাল করতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy