অসচেতন: যাবতীয় করোনা-বিধি অগ্রাহ্য করে এ ভাবেই বড়দিনের সময়ে ভিড় জমেছিল শহরে। ছবি: পিটিআই।
পথ দেখিয়েছে বাণিজ্যনগরী। কিন্তু কলকাতার ভরসা সেই আদালতই।
করোনা পরিস্থিতিতেও শীতের উৎসব-যাপনের নামে পথে নেমে পড়া বেপরোয়া জনজোয়ার দেখে অনেকেরই প্রশ্ন ছিল, বড়দিন বা বছরের শেষ রবিবারেও রাস্তায় এমন ভিড় হলে বর্ষশেষের রাতে বা বর্ষবরণের দিন কী হবে?
এর মধ্যেই মুম্বই পুলিশ আশঙ্কা বুঝে সব রাতের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কার্ফুর পাশাপাশি রাতে সেখানে জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। চার জনের বেশি রাস্তায় বেরোনো নিষিদ্ধ। রাতে গাড়িতেও চার জনের বেশি সওয়ারি নেওয়া যাবে না! এই পরিস্থিতিতেই দিনভর কলকাতা পুলিশের নীরব অবস্থান দেখে উষ্মা প্রকাশ করে অনেকেই বলছিলেন, ‘‘মুম্বই পুলিশ পারলেও কলকাতা পুলিশ পারে না কেন?’’
শহরের সচেতন নাগরিকদের এই উষ্মার মধ্যেই মঙ্গলবার দুপুরে ফের কড়া অবস্থান নিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। শীতের উৎসবের নামে পথে নেমে পড়া জনজোয়ারে বিপদের আশঙ্কা প্রকাশ করে আদালত জানিয়েছে, কোনও ভাবেই রাস্তায় ভিড় করতে দেওয়া যাবে না। যে যে জায়গায় ভিড় হয়, সেখানে ‘চেক পোস্ট’ বসাতে হবে। মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিবকে উপরোক্ত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে বলার পাশাপাশি ভিড় এড়াতে দুর্গাপুজোয় যে যে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল সেগুলিও বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, দেখতে বলা হয়েছে।
যদিও আদালতের এই কড়া অবস্থানের পরেও চিকিৎসক থেকে আইনজীবী মহলের বড় অংশেরই প্রশ্ন, ‘‘বার বার কেন পুলিশ-প্রশাসন নাবালকের মতো ব্যবহার করবে, আর আদালতকে অভিভাবক হিসেবে সব শিখিয়ে দিতে হবে?’’
চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, ‘‘দেশের অন্যান্য শহর যে সচেতনতা দেখাচ্ছে, আমরা কোন সাহসে সেই সচেতনতার পথ থেকে সরে যাচ্ছি বুঝতে পারছি না। আমরা কি বেপরোয়া হাতপাখা দিয়ে বিপদের আঁচ বাড়ানোর চেষ্টা করছি?’’
আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কথা বলে লাভ কী?— সব উৎসব বন্ধ হলেও রাজনীতির উৎসব চলবে। পার্ক স্ট্রিটের জমায়েত বন্ধ করে দাদার ডাকা জমায়েতে থাকতে বলা হবে!’’
চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘শীতের যে কোনও পার্টির জমায়েতে নাক-মুখ খুলে হইচই হয়। তার বিপদ যদি এখনও মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হয়, তা হলে আদালত কেন, কারও নির্দেশেই কিছু হবে না।’’ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর মন্তব্য, ‘‘বিপদ সকলেরই জানা। তবে সেই বিপদের থেকেও অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তিস্বার্থ বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সেই স্বার্থ থেকেই কেউ বড় জমায়েত ডাকছেন, কেউ করোনা থেকে উঠেই বন্ধুর ডাকা পার্টিতে নাম লেখাচ্ছেন!’’
চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী যদিও মনে করেন, ‘‘হাইকোর্ট কেন, কারও নির্দেশেই কিছু হবে না। সুপ্রিম কোর্ট তো প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে বহু দিন। তার পরেও কেন কফি হাউসে দেদার সিগারেট খাওয়া চলে? বাঙালি আইন অমান্য করতে পারলে কত খুশি হয় তা এতেই স্পষ্ট। আর মানুষ কতটা জ্ঞানপাপী হতে পারে, তা করোনা না এলে বুঝতেই পারতাম না।’’
বেঁ-হুশ জনতাকে বিধি মানানোর জন্য কেন আগাম কড়া অবস্থান নিল না কলকাতা পুলিশ?
বিধির ফাঁসে আটকে গিয়েই কিছু করে উঠতে পারেননি বলে লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা জানালেন। তাঁদের দাবি, ভোটের আগে এখন প্রশাসনের সব মহলই বুঝিয়ে কাজ উদ্ধারের পক্ষে। কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা যদিও বললেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ হাতে পেয়ে গেলে সর্বতো ভাবেই সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে। ’’
সেই পদক্ষেপে কাজ হবে তো?
বড়দিনের বেপরোয়া জনজোয়ার অবশ্য অন্য অভিজ্ঞতাই তুলে ধরেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy