প্রতীকী ছবি।
মাঝে বেশ অনেকটা সময় মাথা নুইয়েছিল সে। কিন্তু গত কিছু দিন ধরে ধীরে ধীরে হলেও আবার স্বমূর্তি ধারণ করতে শুরু করেছে কোভিড। প্রতিদিনই শহরে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, গত ৫ জুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০। এক সপ্তাহের মাথায়, ১২ জুন তা তিন গুণ বেড়ে পৌঁছয় ৬০-এ। আবার মঙ্গলবার, অর্থাৎ ১৪ জুন সংক্রমিত হয়েছেন ১০৫ জন। সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে পুর কর্তৃপক্ষের কপালেও। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এ দিন পুর ভবনে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে ছিলেন পুর স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ-সহ পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা।
সংক্রমিতের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছনে নাগরিকদের একটি বড় অংশের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন বক্ষরোগ চিকিৎসক ধীমান গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকেই ভাবছেন, করোনা পুরোপুরি চলে গিয়েছে। তাই তাঁরা মাস্ক পরা ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু মাস্ক পরা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। প্রতিষেধকের দু’টি ডোজ়ের সঙ্গে বুস্টার ডোজ়ও সকলকে নিতে হবে। পাশাপাশি, কঠোর হতে হবে প্রশাসনকেও।’’ ধীমানবাবু আরও বলেন, ‘‘বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে সর্বাধিক কত লোক থাকতে পারবেন, সে বিষয়ে মাঝে সরকারি তরফে বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছিল। এখন তা উঠে গিয়েছে। কিন্তু করোনা যে ভাবে আবার বাড়তে শুরুকরেছে, তাতে সেই বিধিনিষেধ ফিরিয়ে আনা দরকার। তবে নিয়ম মেনে স্কুল-কলেজ চালু থাক।’’
আর এক বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীরও মত, মাস্ক পরায় জোর দেওয়ার পাশাপাশি নিয়মভঙ্গকারীদের ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে। তা না-হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ১৯ এপ্রিল শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। তার পর থেকে নিয়ন্ত্রণেই ছিল এই ভাইরাস। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে সংক্রমিতের হার বেড়েছে বলেই জানাচ্ছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। কলকাতা পুর এলাকায় ১৬টি বরো রয়েছে। এর মধ্যে এক থেকে ছ’নম্বর বরো উত্তর কলকাতার আওতায় পড়ে। বাকি বরোগুলি দক্ষিণ কলকাতায়। বরো-ভিত্তিক করোনা-চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে উত্তরের তুলনায় দক্ষিণের বিভিন্ন বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। যে ছবি দেখা গিয়েছিল অতিমারির প্রথম তিনটি ঢেউয়ের সময়েও।
আট নম্বর বরো, অর্থাৎ বালিগঞ্জ, ভবানীপুর, টালিগঞ্জ, গড়িয়াহাট, রবীন্দ্র সরোবর এলাকা, বরো নম্বর ১০, অর্থাৎ গরফা, যাদবপুর, গল্ফ গ্রিন, নেতাজিনগর এলাকায় সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। পাশাপাশি, ৭, ৯, ১১ ও ১২ নম্বর বরো এলাকাতেও ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের হার।
এ দিন পুর ভবনে বৈঠক শেষে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘শহরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও আতঙ্কের কারণ নেই। যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের শতকরা ৯৯ ভাগই উপসর্গহীন। পয়লা জুলাই থেকে শহর জুড়ে ডেঙ্গি নির্মূলকরণে প্রচার চালানো হবে। ওই প্রচারকাজের সঙ্গেই মাস্ক পরার ব্যাপারে সচেতন করা হবে নাগরিকদের। সবাই যাতে কোভিডের প্রতিষেধক নেন, সেই বিষয়েও আবেদন জানানো হবে।’’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পুরসভার বাজার বিভাগের আধিকারিকেরাও। তাঁরা জানান, বিভিন্ন বাজারে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা যাতে মাস্ক পরেন, তা নিয়ে তাঁদের সতর্ক করা হবে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy