প্রতীকী ছবি।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দাঁড়িয়ে বিভ্রান্ত শিয়ালদহের তমালিকা সেনগুপ্ত। সামনেই জরুরি বিভাগের দেওয়ালে লেখা, ‘শয্যার জন্য অনুরোধ করবেন না। কোভিড রোগী সরাসরি ভর্তি হচ্ছে না।’ বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে বৃদ্ধ বাবার সঙ্গে থাকা আত্মীয়াকে ফোনে তমালিকা বললেন, “আমিও তো পজ়িটিভ। আর কত ছুটব? তিনটে হাসপাতালই যখন এক কথা বলছে, তার মানে এটাই সত্যি।” এর পরে স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইনে ফোন করতে শুরু করলেন বছর সাতাশের তরুণী।
শহরের যে কোনও সরকারি হাসপাতালে এই মুহূর্তে এটাই বাস্তব চিত্র। স্বাস্থ্য দফতর থেকে কোভিড রোগী ভর্তির জন্য নির্দিষ্ট হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে, তা-ই জানা নেই অনেকের। আর তাই শহরের বাসিন্দারা তো বটেই, দূর-দূরান্তের জেলা থেকেও রোগী এসে ভিড় করছেন শহরের বহু
হাসপাতালে। সব মিলিয়ে যেন আরও বেআব্রু হয়ে পড়ছে শয্যাহীন হাসপাতাল পরিকাঠামোর চিত্র। অনেকেই এ জন্য দায়ী করছেন প্রশাসনিক সিদ্ধান্তহীনতাকেই। তাঁদের প্রশ্ন, রোগীর হয়রানি কমাতে হেল্পলাইন নির্ভর ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রচার-বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না কেন? কেন বহু রোগীর পরিজনকে হাসপাতালে এসে জানতে হবে ভর্তির আসল পদ্ধতি কী?
তমালিকা যেমন জানালেন, গত ১৯ এপ্রিল তিনি ও তাঁর বছর চৌষট্টির বাবার কোভিড রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। তবে মায়ের রিপোর্ট নেগেটিভ ছিল। দিন কয়েক বাবাকে বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা করানো হলেও হঠাৎ তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে কিছু কোমর্বিডিটি থাকায় তাঁরা আর ঝুঁকি নেননি। প্রথমে তাঁদের বাড়ির কাছের এন আর এসে গেলে জানানো হয়, স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইন নম্বরে রোগীর নাম লেখানো না থাকলে শয্যা মিলবে না। সেখান থেকে তমালিকারা ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গেলেও একই কথা জানতে পারেন। শেষে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে ভুল ভাঙে তাঁদের। তমালিকা বলেন, “মেডিক্যালেও দেখলাম এক কথা লেখা। তাই এর পরে স্বাস্থ্য ভবনের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করি। অন্তত দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পরে এক জন ফোন ধরেন। তবে তার পরে দ্রুত সাহায্য পেয়েছি। শেষে বাবাকে যাদবপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে শয্যা দেওয়া হয়। ওই হাসপাতাল আপাতত কোভিড হাসপাতাল হিসেবেই সরকার নিয়েছে।”
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, গত বার কোভিড রোগীদের হাসপাতালে ঘোরার হয়রানি রুখতে এ বার ‘ইন্টিগ্রেটেড হেল্পলাইন নম্বর’ (২৪x৭) চালু করা হয়েছে। গত বার শয্যার জন্য ঘুরতে থাকা কোভিড রোগীর থেকে অন্য রোগীর মধ্যে সংক্রমণ ছড়ানোরও একটা বড় ঝুঁকি ছিল। এ বার তাই এই ‘ইন্টিগ্রেটেড হেল্পলাইন
নম্বরে’ ফোন করলেই সরকারি হাসপাতালে ভর্তি সংক্রান্ত সাহায্য পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে নিখরচায় সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স, অডিয়ো-ভিস্যুয়াল টেলি মেডিসিন, সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাউন্সেলিং এবং কোভিড সংক্রান্ত সমস্ত রকমের প্রশ্নেরও উত্তর মিলবে। কলকাতা পুর এলাকার জন্যও আরও দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। শুধুমাত্র ভর্তির সাহায্য পেতে চালু হয়েছে অন্য দু’টি মোবাইল নম্বরও। এর যে কোনওটিতে ফোন করলে পছন্দমতো বিষয় বেছে নিয়ে সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “ভর্তির জন্য হন্যে হয়ে ঘোরার দরকার নেই। হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করলে রোগী বা তাঁর পরিবারের কাছে রোগীর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে।’’ এর পরে হোয়াটসঅ্যাপে রোগীর করোনার রিপোর্ট দেখে ফোনেই নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর নথিভুক্ত করে নেবেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। এর পরে তিনিই রোগীর বাড়ির কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা রয়েছে কি না, তা দেখে ফোন করে ওই হাসপাতালে যেতে বলবেন। তার পরে রোগীকে নিয়ে বেরোলে আর হয়রানির শিকার হতে হবে না। সরকার এই মুহূর্তে যে যে বেসরকারি হাসপাতালগুলি করোনার জন্য নিয়েছে, সেখানেও এই পদ্ধতিতেই শয্যা পাওয়া যেতে পারে। তবে অন্য বেসরকারি হাসাতালে ভর্তির জন্য হেল্পলাইন নম্বরের দরকার পড়বে না।
কিন্তু এই সাহায্যটুকু পেতেই অনেক ক্ষেত্রেই জরুরি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বললেন, “এটা হওয়ার কথা নয়। সঙ্গে সঙ্গে শয্যার ব্যবস্থা করা না গেলেও বাড়িতেই যাতে তৎক্ষণাৎ রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায়, সেই সংক্রান্ত পরামর্শ রোগীর পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে। এর পরে জরুরি পরিস্থিতির বিচারে শয্যা পাওয়া গেলে রোগীকে দ্রুত সেখানে ভর্তি করাতে বলা হচ্ছে। যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেখানে যতটা সম্ভব দ্রুততার সঙ্গেই কাজ করা হচ্ছে।”
তবে তিনিও মানছেন, প্রচারের অভাবেই অনেকে জানেন না যে শুধুমাত্র হেল্পলাইন নম্বরের মাধ্যমে কোভিড রোগীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পদ্ধতির বিষয়টি। তাঁর মন্তব্য, “দয়া করে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরবেন না। এতে আমাদের কাজ আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখুন, কোভিড সংক্রান্ত যে কোনও সমস্যায় হেল্পলাইন নম্বরই এখন আপনার পরম বন্ধু।”
কোভিড রোগী ভর্তির পথ
• ইন্টিগ্রেটেড হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০-৩১৩-৪৪৪-২২২, ০৩৩-২৩৪১ ২৬০০
•স্টেট ডায়রেক্ট টেলিমেডিসিন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭ ৬০০১
• স্বাস্থ্য ভবনের কন্ট্রোল রুম: ৬২৯১২১৫৮৪৭, ৬২৯০৬৪৮৭৫৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy