যাত্রারম্ভ: বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে শুরু হল যাত্রিবাহী অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। বিমানবন্দরে ঢোকার অপেক্ষায় যাত্রীরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দু’মাস চার দিন বন্ধ থাকার পরে বৃহস্পতিবার কলকাতায় পুনরায় চালু হল অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল। এ শহরে যে উড়ানটি প্রথম এসে পৌঁছল, তার প্রথম যাত্রী হিসেবে নেমে এলেন উমেশ জয়সওয়াল। তাঁর সঙ্গেই নামলেন হাওড়ার এক যুবক, প্রাথমিক পরীক্ষার পরে যাঁকে পাঠানো হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। কারণ, তাঁর গায়ে ধরা পড়েছে জ্বর আর র্যাশ। চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব।
এ দিন দিল্লি থেকে আসা ওই প্রথম উড়ানটি ছিল এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার। সারা দিনে সেটাই ছিল তাদের একমাত্র উড়ান। ওই উড়ান সংস্থার তরফে ১১৫ জন যাত্রীর যাবতীয় তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের হাতে। সূত্রের খবর, হাওড়ার বাসিন্দা যে যুবককে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে, তিনি দিল্লিতে একটি দোকানে কাজ করেন। তাঁর সামনের ও পিছনের মিলিয়ে মোট সাতটি সারির যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রত্যেককে আপাতত গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হচ্ছে। ওই যুবকের লালারসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট যদি পজ়িটিভ আসে, তা হলে ওই যাত্রীদেরও কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হতে পারে।
এ নিয়ে সমস্যায় পড়েছে উড়ান সংস্থাটি। কারণ, ওই যাত্রীর সংস্পর্শে এসেছেন বিমানসেবিকারাও। আবার বিমানসেবিকাদের কাছাকাছি এসেছেন পাইলট। এ বার ওই যাত্রীর দেহে সংক্রমণ পাওয়া গেলে বিমানসেবিকা ও পাইলটদেরও কোয়রান্টিনে পাঠাতে হতে পারে বলে আশঙ্কা।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন শহরে নেমেছেন মোট ১৭৪৫ জন যাত্রী। এখান থেকে উড়ে গিয়েছেন ১২১৪ জন। এক জন বাদে এঁদের কারও শরীরেই করোনার উপসর্গ পাওয়া যায়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এ দিন ১১টি উড়ান ছেড়েছে। ১১টি নেমেছে। অভ্যন্তরীণ উড়ান চলাচল শুরু হওয়ায় হাঁফ ছেড়েছেন আটকে পড়া মানুষেরা। একাই শিমলা বেড়াতে গিয়েছিলেন মধ্যমগ্রামের গার্গী সেনগুপ্ত। এ দিন বিমানবন্দরে নেমে তিনি বললেন, ‘‘ফেরার পথে গুরুগ্রামে দিদির বাড়িতে আটকে পড়েছিলাম।’’
এ দিন সকালে প্রথম উড়ানটি ছাড়ে অ্যালায়েন্সের। গুয়াহাটি উড়ে যান ৪০ জন যাত্রী। বিমানবন্দরের টার্মিনালে ঢোকার আগেই প্রত্যেক যাত্রীর ব্যাগে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা হয়। দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করার পরে দূর থেকে ক্যামেরার মাধ্যমে টিকিট ও পরিচয়পত্র পরীক্ষা করে তবেই টার্মিনালে ঢুকতে দেওয়া হয় তাঁদের। যাঁরা বোর্ডিং কার্ড আনেননি, তাঁদের সাহায্য করেন উড়ান সংস্থার কর্মীরা। অনেকের মোবাইলে আরোগ্য সেতু অ্যাপ ছিল না। তাঁদের দিয়ে আলাদা ফর্ম পূরণ করানো হয়। চেক-ইন কাউন্টারে ব্যাগ রেখে মালপত্রে ট্যাগ লাগান যাত্রীরাই।
শিশুপুত্রকে প্র্যামে বসিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হেমা ভরদ্বাজ। জানালেন, আড়াই বছরের ছেলেকে নিয়ে বাবাকে দেখতে কলকাতায় এসে দু’মাস আটকেছিলেন। স্বামী দিল্লিতে কর্মরত। গত ২৫ মে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ যাত্রী-উড়ান চালু হওয়ার কথা ছিল। সে দিনেরই টিকিট কেটেছিলেন। কিন্তু, কলকাতার উড়ান চালুর দিনক্ষণ পিছিয়ে যায়। আবার বৃহস্পতিবারের টিকিট কাটেন তিনি। এ দিনের যাত্রীদের অধিকাংশই ২৫ মে-র টিকিট কেটেছিলেন। নরেশ কুমার নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, সে দিন সকালে বিমানবন্দরে পৌঁছে দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পরে উড়ান বাতিলের খবর পান। টিকিটের টাকা এখনও ফেরত পাননি।
এ দিন যাঁরা শহরে এলেন, তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছনোর পরিবহণ পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল। কলকাতায় আসার আগেই আসানসোলের বাসিন্দা মহম্মদ আফতাব খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বিমানবন্দর থেকে বাস মিলবে। সেই বাসেই ধর্মতলায় যান তিনি। সেখান থেকে আসানসোল।
এ দিন বিমানবন্দর থেকে হাওড়া, ধর্মতলা, গড়িয়া ও টালিগঞ্জ রুটে ২৫টি বাস চলেছে। আপাতত প্রতিদিন শেষ উড়ান নামা পর্যন্ত ওই বাস পাওয়া যাবে। আমপানের জেরে এখনও মোবাইলের নেটওয়ার্ক নিয়ে সমস্যা রয়েছে। তাই অ্যাপ-ক্যাব ধরতে এক ঘণ্টা লেগে যায় নিউ ব্যারাকপুরের মনোজিৎ দাসের। তবে হলুদ ট্যাক্সি ছিল না। খড়দহের সাবিনা বিবি বিমানবন্দরের বাইরে একটি সাদা গাড়ির চালককে অনুরোধ করলে তিনি দু’হাজার টাকা হাঁকেন। এমন বেশ কিছু গাড়ির চালককে এ দিন ইচ্ছেমতো দর হাঁকতে দেখা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy