ছবি: এএফপি।
প্রতিনিয়ত আগের দিনের সংক্রমিতের ‘রেকর্ড’ ভেঙে নতুন ‘রেকর্ড’ তৈরি হচ্ছে। কিছু দিন আগে যদি দিনে ২৫ হাজার সংক্রমিত হয়ে থাকেন, বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে দিনে প্রায় ২৮ হাজারে। যা আরও বাড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর আক্রান্তের সংখ্যাবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভয়।
কিন্তু সংক্রমিতের সংখ্যা দেখে আতঙ্কের কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। কারণ ব্যাখ্যা করে তাঁরা জানাচ্ছেন, সার্স-কোভ-২ ‘রেসপিরেটরি’ ভাইরাস হওয়ায় এমনিতেই তার সংক্রমণের ক্ষমতা বেশি। তা ছাড়া প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে উপসর্গহীন রোগীরা নমুনা পরীক্ষায় পজ়িটিভ হওয়ার কারণে সংখ্যাও বাড়ছে হু হু করে। ভাইরোলজিস্ট-বিজ্ঞানী যশপাল সিংহ মালিকের কথায়, ‘‘সংখ্যাবৃদ্ধি দেখে বেশি আতঙ্কের কিছু নেই। কারণ এই ভাইরাসের যে ধরন, তাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হতে পারেন। কিন্তু সংক্রমণের হার এবং মৃত্যুহার সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সার্স-কোভ-২-এর মৃত্যুহার খুব বেশি নয়। তা ছাড়া এক কোটির উপরে নমুনা পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। সেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়াটাই স্বাভাবিক।’’
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে আমেরিকায় যেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা ১০,৩১২, ভারতে সেই সংখ্যা ৬৩৭। আর প্রতি ১০ লক্ষ জনসংখ্যায় ভারতে মৃতের সংখ্যা ১৭। রবিবার পর্যন্ত দেশে এক কোটি ১৮ লক্ষেরও বেশি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। শুধু রবিবারই নমুনা পরীক্ষা হয়েছে প্রায় দু’লক্ষ মানুষের। এ রাজ্যে সোমবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৬ লক্ষ ২৭ হাজার ৪৩৮ জনের। এ দিন নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৯ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক গবেষকের কথায়, ‘‘প্রথম থেকে এই কথাটাই বলা হচ্ছে যে, এই সংক্রমণে উপসর্গহীন রোগীদের সংখ্যা একটা ফ্যাক্টর। যখনই নমুনা পরীক্ষা হবে, সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়বে।’’
আরও পড়ুন: ভেন্টিলেশন পদ্ধতিতে বদল, করোনা জয় করলেন নার্স
আরও পড়ুন: পাড়ায় আক্রান্ত ১৬, তবু বাজারে বেরোনো চলছেই
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোনও ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা তার ‘অর্গানিজ়ম’-এর উপরে নির্ভর করে। সেখানে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণের ক্ষমতা অনেক বেশি। কিন্তু সংক্রমণ আর ‘প্যাথোজেনিসিটি’ বা রোগ তৈরির ক্ষমতা দু’টি পৃথক বিষয় বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। অর্থাৎ, শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলে সংক্রমিত হওয়া এবং ভাইরাস প্রবেশের পরে সেটি কত দিনে কী কী রোগ তৈরি করতে পারল, এ দু’টি আলাদা।
‘মাইক্রোবায়োলজিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’-র প্রেসিডেন্ট এ এম দেশমুখের কথায়, ‘‘সার্স-কোভ-২-এর প্যাথোজেনিসিটি কম। এই ভাইরাস সেখানেই বিপজ্জনক, যেখানে অন্য রোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট রোগের মাত্রাকে এই ভাইরাস বাড়িয়ে দেয়। অর্থাৎ এটি অনুঘটকের কাজ করে।’’ মাইক্রোবায়োলজিস্ট সুখেন্দু মণ্ডল এ বিষয়ে বলেন, ‘‘ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলেই যে রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে তা নয়। ভাইরাস শরীরে ঢুকলে কেউ সংক্রমিত হবেন ঠিকই। কিন্তু সেই সংক্রমণ কতটা বিপজ্জনক হবে, সেটা নির্ভর করছে ভাইরাসের রোগ তৈরির ক্ষমতার উপরে। সার্স-কোভ-২-এ এখনও পর্যন্ত তাঁদেরই মৃত্যুহার বেশি, যাঁদের অন্য রোগ ছিল।’’
দেশের কোভিড ১৯-এর অন্যতম গবেষণাকেন্দ্র ‘ট্রানস্লেশনাল হেল্থ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট’-এর অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর অমিত অবস্থির কথায়, ‘‘আতঙ্কের কোনও কারণ নেই। কারণ, কোভিড ১৯-এর মৃত্যুহার এখনও পর্যন্ত বেশি নয়। বরং কোভিডে সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা অনেক বেশি।’’
তবে বিশেষজ্ঞেরা এ-ও জানাচ্ছেন, সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়ার জন্য হাসপাতালগুলির উপরে চাপ তৈরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে যাঁরা উপসর্গহীন বা অল্প মাত্রার উপসর্গ রয়েছে (মাইল্ড), তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। শুধু যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন, তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। তার মধ্যে যাঁরা সঙ্কটজনক (ক্রিটিক্যাল) রোগী, তাঁদেরই শুধুমাত্র আইসিইউয়ে ভর্তির প্রয়োজন। বাকিদের দ্রুত সুস্থ করে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে (ডিসচার্জ) দিতে হবে। ভাইরোলজিস্ট তথা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির এমেরিটাস বিজ্ঞানী অনুপম বর্মার কথায়, ‘‘অহেতুক আতঙ্কিত না হয়ে তিনটি সাধারণ নিয়ম সব সময়ে মেনে চলতে হবে— মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং দূরত্ব-বিধি পালন করা। তা হলেই সংক্রমণের হার কমানো সম্ভব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy