সন্তোষপুরের এই বাড়িতেই পড়ে ছিল অধ্যাপক আদিত্য চট্টোপাধ্যায়ের দেহ। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।
গরফা থানার যাদবপুর হরিসভা এলাকায় শুক্রবার করোনায় মৃত এক বৃদ্ধার দেহ পড়ে ছিল দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা। তাঁর পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, পুরসভা ও থানায় বার বার খবর দিলেও শববাহী গাড়ি বহু দেরিতে আসে। ওই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। এর পরের দিনই, শনিবার শহরের দু’টি জায়গায় ফের বাড়িতে করোনায় মৃতের দেহ পড়ে থাকার অভিযোগ উঠল। গত বছর সংক্রমণ যখন বেশি ছিল, তখনও এমন ঘটেছিল। এ বছরও দু’দিনে তিনটি এমন ঘটনার জেরে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ ও পুরসভার সমন্বয়ের অভাবেই কি এমনটা ঘটছে?
প্রথম ঘটনায় শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মৃত্যু হয় করোনায় আক্রান্ত বছর তিরাশির এক বৃদ্ধের। তিনি নেতাজিনগর থানার রামগড় এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। রাত থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত তাঁর দেহ বাড়িতেই পড়ে থাকে বলে অভিযোগ। তাঁর মৃত্যুর প্রায় আট ঘণ্টা পরে দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন পরিজনেরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী নিঃসন্তান। দু’জনেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। রাতে পুলিশ বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পায়। আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলে তারা জানতে পারে, বৃদ্ধ গত ১৭ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে বাড়িতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই আত্মীয়ের মাধ্যমেই ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করা হয়। এর পরে পুলিশ যোগাযোগ করে পুরসভার সঙ্গে। লালবাজার সূত্রের খবর, করোনায় মৃতদের দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য থানাগুলিকে পুরসভার সঙ্গে যোগাযোগ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য পুরসভার তরফে এক জন নোডাল অফিসারও রয়েছেন। এ ছাড়াও পুরসভার ঠিক করে দেওয়া প্রতিনিধিরাও পুলিশের থেকে খবর পেলে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাঠাবেন।
তবে অভিযোগ, পুরসভা সকাল ৬টার আগে দেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়নি। ঢিলেমির অভিযোগের মুখে পুরসভার দাবি, নিয়মকানুন মেনে সব কিছু করতে ওই সময় লেগেছে। পুরসভার এক প্রতিনিধি শনিবার ফোনে জানান, সৎকারের গাড়ি জোগাড় করে এবং সব নিয়ম মেনে তা পাঠাতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। তবে ভোরেই গাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি।
অন্য ঘটনাটি ঘটেছে সন্তোষপুরের সার্ভে পার্ক থানার লেক ইস্ট রোডে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতত্ত্বের প্রাক্তন অধ্যাপক আদিত্য চট্টোপাধ্যায় জ্বর থাকায় করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন। বুধবার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। পরিবার সূত্রের খবর, জ্বর ছাড়া অন্য উপসর্গ না থাকায় বাড়িতেই থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে শুক্রবার রাতে তাঁর আচমকাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শনিবার ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর। এর পরে প্রায় সাত ঘণ্টা তাঁর দেহ বাড়িতেই পড়ে থাকে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, শনিবার সকালেই সার্ভে পার্ক থানায় জানানো সত্ত্বেও দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। অবশেষে বেলা ১২টা নাগাদ পুরসভা থেকে তাঁর নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন এত দেরি হল করোনায় মৃতের দেহ নিয়ে যেতে? পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ‘‘থানা থেকে সাড়ে ৮টা নাগাদ আমাদের জানানো হয়। তার পরে গাড়ি গিয়ে সাড়ে ১১টার মধ্যে দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। এইটুকু সময় তো লাগবেই।’’
তাঁর পরিবার সূত্রের খবর, আদিত্যবাবুর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে রাখতে চেয়েছিলেন তাঁরা। তবে সিলিন্ডার মেলেনি। অনেক খুঁজে শেষ পর্যন্ত একটি ওষুধের দোকানে একটিমাত্র অক্সিজেন সিলিন্ডারের খোঁজ মেলে। দোকানের তরফে জানানো হয়, বেশি মুমূর্ষু কোনও রোগীর কথা ভেবে সেটি রেখে দিয়েছেন তাঁরা। এই কথা শুনে ওই সিলিন্ডার নিয়ে এসে বাড়িতে রাখতে চাননি আদিত্যবাবু।
আদিত্যবাবুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য আশিস চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ওঁর সঙ্গে ছাত্রজীবন থেকে পরিচয়। উনি সিনিয়র ছিলেন, একই সুপারভাইজ়রের কাছেও কাজ করেছি। দীর্ঘদিন ধরে এক জায়গায় শিক্ষকতাও করেছি। উনি শিক্ষক হিসেবে খুবই ভাল ছিলেন। সেই কারণে এই ঘটনা আমার কাছে একটা ব্যক্তিগত আঘাত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy