সুনসান শহর। ছবি: ঋত্বিক দাস।
করোনা আতঙ্কের জেরে সোমবার কলকাতা-সহ সমস্ত জেলাকে লকডাউন করা হল। এ দিন বিকালে ঘড়ির কাঁটা ৫টা ছোঁয়ার আগে থেকেই রাজ্য জুড়ে লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশের তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। ৫টা নাগাদ ট্রাফিক পুলিশের তরফে কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় শুরু হয়ে যায় রাস্তায় ব্যারিকেড লাগানো।সরকারি-বেসরকারি বাস, ট্যাক্সি এবং বিভিন্ন যানবাহন যা রাস্তায় ছিল, তাদের দ্রুত গন্তব্যে চলে যেতে বলা হয়। ব্যক্তি মালিকানার গাড়িগুলিকেও একই নির্দেশ দেওয়া হয়। রাস্তা খালি করতে বলা হয় ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাড়িগুলিকেও। তাতেই ধীরে ধীরে রাস্তা ফাঁকা হতে শুরু করে। এমনকি ওলা-উবর-সহ সমস্ত অ্যাপ ক্যাবের চলাচলও বন্ধ রাখা হয়েছে।
পুলিশের তরফে এ দিন ধর্মতলা মোড়ে মাইক নিয়ে ঘোষণাও শুরু হয়। বলা হয়, শহরবাসীর কাছে অনুরোধ, আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। সে রকম পরিস্থিতি দেখলে স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনকে খবর দিন। সবাই ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা জনস্বার্থে প্রচারিত। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে রাজ্যবাসীর কাছে অনুরোধ, সতর্ক থাকুন। ভাল থাকুন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে, যাঁরা বিদেশ থেকে এসেছেন বা ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছেন, তাঁরা বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। নিজের ব্যবহার করা জিনিস অন্যরা যাতে ব্যবহার না করেন, সে দিকে খেয়াল রাখুন। আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্ক ছড়াবেন না।’’
এরই মধ্যে ধর্মতলার মূল বাস টার্মিনাসে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় দেখা যায়। এঁরা মূলত কেরল এবং তামিলনাড়ুর মতো দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে এসেছেন। সেখানে হোটেল এবং নির্মাণশিল্পের সঙ্গে কর্মসূত্রে যুক্ত তাঁরা। এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই মালদহ, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা। শনিবারই কেরল থেকে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন তাঁদের জন্য পাঁচটি বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের একটা বড় অংশ ওই বাসে চেপে রওনা দিলেও, ৭০০-৮০০ মানুষ বাস টার্মিনাসে আটকে পড়েন। পুলিশের সহায়তায় ছোট ছোট মালবাহী গাড়ি ধরে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
ধর্মতলা টার্মিনাসে মানুষের ভিড়। —নিজস্ব চিত্র।
আরও পড়ুন: কোনও উড়ান নামতে দেবেন না বাংলায়: প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর
আরও পড়ুন: মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ অন্তর্দেশীয় উড়ান, ঘোষণা কেন্দ্রীয় সরকারের
এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘বিকাল ৫টা থেকে লকডাউন শুরু হলেও কিছুটা অতিরিক্ত সময় দিচ্ছি আমরা, যাতে বাইরে থেকে শহরে যে গাড়িগুলি ঢুকেছে সেগুলি দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারে।’’
সোমবার সপ্তাহের প্রথম কাজের দিন। অন্য কোনও সময় এই দিন ধর্মতলায় বিকাল ৫-৬টার মধ্যে মানুষের যে ভিড় দেখা যায়, সে ভিড় আজ ছিল না। করোনা আতঙ্কের জেরে সারা দিনই লোকজন কম ছিল রাস্তায়। বেলা যত বাড়তে থাকে, বাড়ি যাওয়ার শেষ বাস ধরার জন্য দৌড়ন বহু মানুষ। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, এই লকডাউনের নির্দেশ না মেনে, বিধিভঙ্গ করে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বেরোলে, তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে প্রশাসন। এই আইন অনুযায়ী, দোষী ব্যক্তির জেল-জরিমানা দু’টোই হতে পারে। রাজ্য পুলিশের তরফে আরও বলা হয়েছে, খুব কড়া ভাবে এই লকডাউন বলবৎ করা হবে, যাতে অপ্রয়োজনে কোনও মানুষ ও যানবাহন রাস্তায় ঘোরাঘুরি না করে।
‘জনতা কার্ফু’র জেরে রবিবার দিনভর শহর কলকাতা ফাঁকাই ছিল। এ দিনও তার অন্যথা হয়নি। ধর্মতলার মতোই বিকাল ৫টা বাজার কিছু ক্ষণ পরই সুনসান হয়ে যায় পার্কসার্কাস সেভেন পয়েন্ট, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে পুলিশি সক্রিয়তায় দ্রুত যান চলাচল কমে আসে ইএম বাইপাসে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেও একই ভাবে বলবৎ করা হচ্ছে লকডাউন। খাবার ও ফল ছাড়া বাকি সব দোকানই বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের আশা,আজ রাত সাড়ে ৮-৯টার মধ্যে শহর কলকাতায় পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর হবে। জেলা শহরগুলিতে আরও একটু রাত হতে পারে, অন্তত শহর থেকে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁরা নিজ নিজ গন্তব্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত। তবে আজ মধ্যরাতের পর লকডাউন সম্পূর্ণ ভাবে কার্যকর করা যাবে বলে আশা প্রশাসনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy