Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
kumortuli

‘তৃতীয় ঢেউ এসে পড়লে কিন্তু প্রতিমার দৈর্ঘ্য ছোট হবে’

কাজ নেই বলে অধিকাংশ শিল্পীই এখন তাকিয়ে ফোনের দিকে। যদি কোনও গ্রাহক ফোন করেন। কিন্তু ফোন আর বাজছে কই!

বিষণ্ণতা: কাজ নেই কুমোরটুলিতে।

বিষণ্ণতা: কাজ নেই কুমোরটুলিতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

আর্যভট্ট খান
শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২১ ০৬:৩৩
Share: Save:

দ্বিতীয় ঢেউ খানিকটা স্তিমিত হয়ে এলেও আশায় বুক বাঁধতে পারছেন না কুমোরটুলির প্রতিমা শিল্পীরা। কারণ, ভয় ধরাচ্ছে সম্ভাব্য তৃতীয় ঢেউ।

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, পুজোর আগে তৃতীয় ঢেউ এলে তার প্রভাব বেশি পড়বে তাঁদের জীবিকায়। কারণ, বহু পুজো কমিটিই প্রতিমা তৈরির বরাত দেবে না। দিলেও ছোট প্রতিমার বায়না আসবে। তাঁরা জানালেন, এখনও পর্যন্ত বরাত বিশেষ আসেনি। অথচ, অন্যান্য বছর এই সময়ে কাজ চলে পুরোদমে। শিল্পী অমল পাল বললেন, “প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়ে যায় দোলের পর থেকেই। অর্ডার আসে পয়লা বৈশাখ থেকে। আমার কাছে বায়না আসে অক্ষয় তৃতীয়ার দিন থেকে। রথের দিনও প্রচুর অর্ডার পাই। অন্যান্য বার আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে সাবেক প্রতিমার কাজ প্রায় শেষ করে থিমের ঠাকুর ধরি। এ বার থিমের ঠাকুর তো দূরের কথা, সাবেক প্রতিমার অর্ডারই দু’-একটা পেয়েছি।”

কাজ নেই বলে অধিকাংশ শিল্পীই এখন তাকিয়ে ফোনের দিকে। যদি কোনও গ্রাহক ফোন করেন। কিন্তু ফোন আর বাজছে কই! ‘কুমোরটুলি প্রগতিশীল মৃৎশিল্পী ও সাজশিল্পী সমিতি’র সম্পাদক অপূর্ব পাল বললেন, “সম্প্রতি এক পুজো উদ্যোক্তা এসে বললেন, প্রতিমা বানাও। জিজ্ঞাসা করলাম, বাজেট কত? বললেন, বাজেট নির্ভর করছে করোনার উপরে। তৃতীয় ঢেউ এসে পড়লে কিন্তু প্রতিমার দৈর্ঘ্য ছোট হবে।’’ অপূর্ববাবু জানালেন, গত বারও করোনা পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু পুজোর দিন কয়েক আগে হঠাৎই বরাতের সংখ্যা বাড়ে। এ বার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে পুজোর মধ্যেই।

অপূর্ববাবু জানালেন, ২০১৮ বা ২০১৯ সালে কুমোরটুলিতে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার প্রতিমা গড়া হয়েছিল। গত বছর তা নেমে যায় দুই থেকে আড়াই হাজারে। এ বার সেই সংখ্যাটা হাজার ছোঁবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ী শিল্পীরা।

শিল্পী পরিমল পাল জানালেন, এ বার তাঁরা নিজেরাও উদ্যোক্তাদের ফোন করছেন। পরিমলবাবু বলেন, “উদ্যোক্তারা কেউ কেউ জানাচ্ছেন, এ বছর ক্লাবের সদস্যদের কেউ করোনায় মারা গিয়েছেন। তাই পুজো না-ও হতে পারে। করলেও খুব ছোট করে। তাই এখনই প্রতিমার বায়না দেবেন না। এক জন উদ্যোক্তা জানালেন, করোনায় এক কর্মকর্তা মারা যাওয়ায় পুজোই বন্ধ।”

পরিমলবাবু জানালেন, অনেকেরই আবার আশঙ্কা, হাই কোর্ট যদি গত বারের মতো মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শন বন্ধ করে দেয়! সেই কারণে অধিকাংশ উদ্যোক্তাই আগে থেকে বায়না দিতে চাইছেন না।

শিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত এপ্রিল-মে নাগাদ করোনার বাড়াবাড়ি দেখে তাঁদের সহকারীরা অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। অপূর্ববাবু জানালেন, গণপরিবহণ বন্ধ, তার উপরে শহরে সংক্রমণের ভয়ও বেশি। তাই সহকারীদের অনেকেই ফিরতে চাইছেন না। পুজোর কাজ করানোর জন্য এ বার তাঁদের অনেককেই পাওয়া যাবে না। যদিও শিল্পীরা জানিয়েছেন, সহকারীরা কাজে এলে তাঁদের প্রতিষেধক নেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন তাঁরা।

শিল্পীদের একাংশের মতে, বায়নার যা হাল, তাতে সহকারীদের ডেকে না আনলেও চলে। অমলবাবুর কথায়, “দুর্গা প্রতিমার খড় বাঁধার কাজ করেন যাঁরা, তাঁদের দৈনিক মজুরি ১২০০ টাকা। এখন খড় বাঁধার লোকেদের ওই পরিমাণ দৈনিক মজুরি দিয়ে কাজে রাখবই বা কী করে? প্রতিমার বায়নাই তো নেই। ওঁদের কাজে রাখতে খরচে পোষাবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

kumortuli Coronavirus Third Wave
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy