Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Dum Dum Central jail

দমদম-কাণ্ডের অসুখ খুঁজছে কারা দফতর

জেল সূত্রের খবর, প্রায় সব জেলেই বছরভর নির্মাণ কাজ চলে। ফলে বাঁশ, ইটের টুকরো, কাঠের তক্তার মতো জিনিস হাতের কাছেই পেয়ে যান বন্দিরা।

উত্তাল: জ্বলছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। চলে ভাঙচুরও। ছবি: সুমন বল্লভ

উত্তাল: জ্বলছে দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার। চলে ভাঙচুরও। ছবি: সুমন বল্লভ

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

বারুইপুরের পর দমদম। মাত্র উনিশ দিনের ব্যবধানে রণক্ষেত্র হয়ে উঠল রাজ্যের দু’টি বড় সংশোধনাগার। এবং ঘটনার ব্যাপকতায় বারুইপুরকে ছাড়িয়ে গিয়েছে দমদম। সংশোধনাগারের অন্দরে নানান ‘কার্যকলাপ’ নিয়ে প্রশাসনিক মহলে প্রশ্ন রয়েছে। বারুইপুরের পর দমদমের ঘটনা সেই প্রশ্নকে জোরালো ভাবে তুলে দিয়েছে। কোন কারণে বারবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে সংশোধনাগার? বন্দিদের উপরে নিয়ন্ত্রণের ‘অভাব’ নাকি দুর্নীতিকে প্রশ্রয়? জেলের মধ্যে বসে ষড়যন্ত্র হলেও কেন তা কারারক্ষীরা জানতে পারলেন না?

২ মার্চ বারুইপুর জেলে কয়েক জন আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান বন্দিরা। যে বিক্ষোভ সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয় পুলিশ থেকে কারারক্ষীদের। কিন্তু বিক্ষোভ যে হতে পারে তা আঁচ করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ, সে কথা মেনে নেন কারাকর্তারা। ‌শনিবার দমদম জেল উত্তপ্ত হওয়ার পরেও সেই আগাম আঁচ করার প্রসঙ্গ আসছে। এক কর্তা বলেন, ‘‘কোথাও তো একটা সমস্যা হচ্ছে। হয় তো আগের মতো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।’’ কেন তা হচ্ছে, তা নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে চাননি ওই কর্তা। এ দিন অবশ্য বিজয় দাস নামে এক আহত বন্দি দুর্নীতির অভিযোগও সংবাদমাধ্যমের কাছে করেছেন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তিনি বলেন, ‘‘জেলে টাকা নিয়ে বাড়ির লোকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ (ইন্টারভিউ) দেওয়া হয়। টাকা নিয়েও ইন্টারভিউ বন্ধ করে দিয়েছে।’’ বস্তুত, সম্প্রতি করোনা সতর্কতা নিয়ে ইন্টারভিউ বন্ধ করেছে কারা দফতর।

তবে কারারক্ষীদের অনেকে এ-ও মানছেন, জেলের অন্দরে সারা ক্ষণই ধিকি ধিকি নানান ক্ষোভের আগুন থাকে। অপেক্ষা শুধু ঘি পড়ার। এ দিন দমদম জেলে সেই ক্ষোভের আগুনে ‘ঘি’ পড়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও এক কারা-কর্তার মতে, ঘিয়ের খোঁজে থাকেন বন্দিরা। সেই ঘি যাতে বন্দিরা না পান, তা দেখাই কারা দফতরের কাজ। কিন্তু সেই কাজে কর্তৃপক্ষ মনোযোগী নন বলেই তাঁর দাবি। এক কারা-কর্তার মতে, ‘‘কোন বন্দি কী করতে পারেন তা জানাই আমাদের কাজ। তাতে ভুল হলে মাসুল দিতেই হবে।’’ যদি অন্য এক কারা-কর্তার বক্তব্য, ‘‘এ ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষের ভুল হয়নি। তাঁরা দফতরের নির্দেশ পালন করছিলেন।’’ এ দিনের ঘটনায় করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন অনেকে। তাঁদের মতে, জামিন না-পাওয়ায় বন্দিদের মনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। এ দিন সেই ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। অন্য কোনও কারণ খোঁজা অর্থহীন।

আরও পড়ুন: জনতা কার্ফু নিয়ে কী ভাবছে শহর কলকাতা ?

জেল সূত্রের খবর, প্রায় সব জেলেই বছরভর নির্মাণ কাজ চলে। ফলে বাঁশ, ইটের টুকরো, কাঠের তক্তার মতো জিনিস হাতের কাছেই পেয়ে যান বন্দিরা। এবং হামলা করার সময় সেই সব জিনিস কাজে লাগানো হয়।

সংশোধনাগার পরীক্ষা করছেন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা। শনিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

‌কারা দফতরের একাংশের মতে, বারুইপুর এবং দমদম সেন্ট্রাল জেল, দু’জায়গাতেই চলতি বছরের শুরুতে সুপার বদল হন। ফলে নতুন সুপারদের পক্ষেও এখনও জেলকে পুরোপুরি ‘চিনে’ ওঠা সম্ভব হয়নি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও সহজে জেলে ঘাঁটি গেড়ে ফেলার চেষ্টাও করছেন কোনও কোনও বন্দি। তবে দমদমের ঘটনা বেজায় ধাক্কা দিয়েছে দফতরের শীর্ষ কর্তাদের। তড়িঘড়ি ডিজির পাশাপাশি এক জন এডিজি-কে নিয়োগ করা হয়েছে। কারা দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘কারণ যাই হোক না কেন পরিস্থিতি দ্রুত ঠিক করতেই হবে।’’ বিশেষত বন্দিসংখ্যার নিরিখে রাজ্যের সব চেয়ে বড় জেল এখন দমদম। পুরুষ-মহিলা মিলে প্রায় ৪ হাজার বন্দি রয়েছেন এখানে।

অন্য বিষয়গুলি:

Dum Dum Central Jail Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy