Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
COVID-19

অটুট সম্প্রীতির বাঁধন, সপরিবার আক্রান্ত ওসি-র পাশে এসআই

সুবিমলবাবুর বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সেখানে আমানুল্লাহর ছেলেমেয়েরা আনন্দ করতে পারবেন না বলে সেই অনুষ্ঠান আপাতত বাতিলই করেছেন সুবিমলবাবু!

ভাল-বাসা: এই আাবাসনেই বাস দুই পুলিশ পরিবারের। নিজস্ব চিত্র।

ভাল-বাসা: এই আাবাসনেই বাস দুই পুলিশ পরিবারের। নিজস্ব চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৩২
Share: Save:

দুই পুত্রকন্যা-সহ সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত হয়ে গৃহবন্দি জোড়াসাঁকো থানার ওসি। গত ১৯ এপ্রিল রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার পরে ওই চার জনের সহায় হয়েছে পড়শি আর এক পুলিশ-পরিবার। জোড়াসাঁকো থানার ওসি আমানুল্লাহর বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া থেকে শুরু করে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের শারীরিক অবস্থার খবর নেওয়া— সব করে চলেছেন লেদার কমপ্লেক্স থানার সাব-ইনস্পেক্টর সুবিমল বর্মার পরিজনেরা। শুক্রবার সুবিমলবাবুর বড় ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু সেখানে আমানুল্লাহর ছেলেমেয়েরা আনন্দ করতে পারবেন না বলে সেই অনুষ্ঠান আপাতত বাতিলই করেছেন সুবিমলবাবু!

বন্দর এলাকার গার্ডেনরিচ থানার কাছেই আবাসনে পাশাপাশি বাস দুই পরিবারের। আমানুল্লাহ বলেন, ‘‘১৬ এপ্রিল কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসায় থানা থেকে বাড়ি চলে এসেছিলাম। ১৯ তারিখ করোনা পরীক্ষা করালে চার জনের রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। ঘরবন্দি হওয়ার পর থেকে সুবিমল ও তাঁর পরিজনেরা নীরবে সাহায্য করে চলেছেন।’’

গত বছরের অগস্টে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল সুবিমলবাবুর পরিবার। তখন আমানুল্লাহর স্ত্রী নার্গিস বেগম নিয়মিত সুবিমলবাবুর বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে সুবিমলবাবুর স্ত্রী সীমা বর্মা বলেন, ‘‘তখন আমরা একে একে সংক্রমিত হচ্ছি। কোথা থেকে খাবার পাব, পরবর্তী দিনগুলো কী ভাবে কাটবে— কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সব মিলিয়ে দিশাহারা অবস্থা। ভাবীই (আমানুল্লাহর স্ত্রী) তখন এগিয়ে এসে সাহস জুগিয়েছিলেন। বলেছিলেন, কোনও চিন্তা নেই। সেই দিনগুলো ভুলি কী করে? তাই ওঁদের অসুবিধার সময়ে একটু পাশে দাঁড়িয়েছি। এর বেশি কিছু নয়।’’

একে অন্যের উৎসব-অনুষ্ঠানে বরাবর শামিল হয়েছে দু’টি পরিবারের ছেলেমেয়েরা। সুবিমলবাবুর ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ করার কথা ছিল আমানুল্লাহর বড় মেয়ে, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ইংরেজির ছাত্রী আমরিন নাহারের। সাউথ পয়েন্টের অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আকিবও দিদির সঙ্গে নাচের জোর প্র্যাক্টিস চালাচ্ছিল। জোড়াসাঁকো থানার ওসি-র কথায়, ‘‘বর্মা পরিবারের পাঁচ ছেলেমেয়ে আর আমার দুই সন্তান সব সময়ে বেঁধে বেঁধে থাকে। আমার দুই ছেলেমেয়ের কথা ভেবেই সুবিমলবাবু অনুষ্ঠানটা বাতিল করলেন। ওঁকে শত বুঝিয়েও কিছু করানো গেল না!’’

‘‘এই রোগে মৃত্যুমুখ থেকে ফিরেছি। তখন আমার পরিবারের দায়িত্ব একা কাঁধে নিয়েছিলেন আমানুল্লাহ সাহেব। সেই সব দিন কি ভোলা যায়? আমানুল্লাহ সাহেবের পরিবার না থাকলে আমার ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানও করতে পারব না।’’— এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন সুবিমলবাবু। পাশে থাকা স্ত্রী সীমা বলে ওঠেন, ‘‘এখনকার অস্থির আবহাওয়ায় দুই সম্প্রদায়ের বিভেদ ঘটানোর চেষ্টা চলছে। ভাবলেই কষ্ট হয়। আমাদের সম্পর্ক কিন্তু আজীবন রয়ে যাবে।’’

ফোনের অন্য প্রান্তে তখন পাশের মসজিদ থেকে ভেসে আসছে জুম্মার নমাজের আজানের ধ্বনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy