Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পুজোর থিমেও করোনা সতর্কতা প্রচারের ভাবনা!

দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি ক্লাবের কর্তা অশোক দে করোনাভাইরাস নিয়েই মণ্ডপের কাজ করতে চান।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৪:২০
Share: Save:

প্রথমে ঠিক ছিল, পুর ভোট মিটলে পুজো নিয়ে কথা হবে। কিন্তু করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভোট-ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় পুজোর মিটিং করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন উত্তর কলকাতার কবিরাজ বাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তারা। কিন্তু পুজো নয়, সেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে করোনা-চর্চা! এমনকি, বৈঠক শেষে গরিষ্ঠ সংখ্যক সদস্যের মত নিয়ে এ বারের পুজোর থিম তাঁরা করোনাভাইরাস রাখারই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে খবর।

শুধু কবিরাজ বাগান সর্বজনীনই নয়। শহরের ছোট-বড় বেশ কয়েকটি পুজো উদ্যোক্তাই করোনাভাইরাস নিয়ে থিম করা যায় কি না, সেই আলোচনা চালাচ্ছেন বলে সূত্রের খবর। কেউ দ্রুত বৈঠক করে এ ব্যাপারে সব সদস্যের মত নিয়ে ফেলতে চাইছেন। কেউ আবার করোনা নিয়ে থিম করার জন্য প্রবল দর-কষাকষি চালাচ্ছেন থিম-শিল্পীর সঙ্গে। কারণ, ইতিমধ্যেই ওই শিল্পী অন্য থিম ঠিক করে রেখেছিলেন। এক পুজো উদ্যোক্তার আবার দাবি, ‘‘করোনার প্রভাব কত দূর গড়াবে, তা কেউই জানি না। এমন সুদূরপ্রসারী বিষয় পুজোর থিম না হয়ে যায় না।’’ একই দাবি ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজো উদ্যোক্তা দেবাশিস কুমারের। তবে করোনা নিয়েই তাঁদের থিম হচ্ছে কি না, এখনই স্পষ্ট করে ভাঙতে চাননি তিনি।

দক্ষিণ কলকাতার মুদিয়ালি ক্লাবের কর্তা অশোক দে করোনাভাইরাস নিয়েই মণ্ডপের কাজ করতে চান। এ জন্য ক্লাবের বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথাও বলছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘করোনার মতো বিষয় হয় না। যেমন আকর্ষণীয়, তেমনই তার সামাজিক আবেদন।’’ কিন্তু ওই পুজোয় মণ্ডপ তৈরি করছেন যে শিল্পী, সেই গৌরাঙ্গ কুইল্যা বললেন, ‘‘শিল্পীর নিজস্ব একটা ভাষা আছে। আসলে করোনা নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হয়। তবে আমি জীবনের ছন্দ নিয়ে কথা বলতে ভালবাসি। ছন্দ পতন নিয়ে নয়। উৎসবে আমরা জীবন-যন্ত্রণা ভুলতে চাই। সেখানে যন্ত্রণা তুলে ধরার মানে হয় না।’’

‘বড় দুর্গা’ খ্যাত দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার অবশ্য মনে করেন, যত খারাপ দেখানো হবে, তত দ্রুত মানুষের সচেতনতা তৈরি হবে। তাঁর কথায়,

‘‘বাকি সব যদি ছেড়েও দিই, অন্তত লোককে সচেতন করার জন্য করোনার মতো থিমই দরকার। কিন্তু কোনও মারণ রোগকে থিম করা যায় কি না, এখন সেই ব্যাপারেই আমাদের পুজোয় জোর আলোচনা চলছে। যদিও আমার মত, যত খারাপ দেখানো হবে, মানুষ তত

সচেতন হবেন।’’ উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের পুজো উদ্যোক্তা সোমেন দত্ত আবার মনে করেন, ক্যানসার বা অন্য বহু মারণ রোগ নিয়ে পুজোর থিম হয়েছে বিগত দিনে। একাধিক বড় রেল দুর্ঘটনাও থিম হয়েছে। তা হলে করোনাভাইরাস নয় কেন? সোমেনবাবু বলেন, ‘‘আমার চিন্তা অন্য একটি বিষয়ে। কেন্দ্রীয় সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধের প্রচারে মোবাইলের কলার টিউনকে হাতিয়ার করেছে। সেটা অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। পুরো থিম যদি না-ও করা যায়, উদ্যোক্তারা সচেতনতা বাড়াতে মণ্ডপের কিছুটা অংশ করোনাভাইরাস নিয়ে করতেই পারেন। আমরা হয় পুরো, অথবা সে রকমই কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছি।’’ তা ছাড়া পুজো উপলক্ষে যে কাগজপত্র দেওয়া হয়, তাতেও করোনাভাইরাস নিয়ে প্রচার করার পক্ষে তিনি।

হাতিবাগান সর্বজনীনের উদ্যোক্তা তথা ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বললেন, ‘‘নিজেদের থিম অনেকেই গোপন রাখতে চান। থিম আগাম প্রকাশ হয়ে গেলে গুরুত্ব কমে যায়, বিজ্ঞাপন পেতেও অসুবিধা হয়। কিন্তু এখন গোপন রাখলেও ফোরামে করোনা নিয়ে যা জোর আলোচনা শুনছি, একাধিক পুজোয় এটাই থিম থাকলে অবাক হব না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Durga Puja 2020 Theme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE