Advertisement
E-Paper

এগিয়ে যাওয়ার মানচিত্র জুড়ে থাকুক জনস্বাস্থ্য ও গ্রামীণ স্বাস্থ্য

এই পরিস্থিতি আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে পিছিয়ে থাকা কিছু ক্ষেত্র নিয়ে গভীর ভাবে পর্যালোচনা করার।

ছবি পিটিআই।

ছবি পিটিআই।

শতদল সাহা

শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২০ ০২:৪০
Share
Save

কোভিড-১৯ অতিমারি গোটা পৃথিবীকেই এক কঠিন পরীক্ষার সামনে নিয়ে এসেছে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম নয়। কী ভাবে এই বিপদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, এর থেকে কী শিক্ষা নেওয়া জরুরি, যে শিক্ষা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কাজে লাগানো যাবে সেটাই এখন মূল আলোচ্য।

প্রত্যেক জাতির সভ্যতা এবং দেশের উন্নতির ইতিহাসে কিছু পরিবর্তন ক্ষণ (ডিফাইনিং মোমেন্টস) থাকে। সেই পরিবর্তনের মূল পদক্ষেপগুলিই ওই দেশকে সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বই পারে ওই মুহূর্তকে বুঝতে এবং তার সদ্ব্যবহার করতে। এই অতিমারি যেমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগ, আমার কাছে তেমনই এক আশার আলো। কেন?

কারণ এই পরিস্থিতি আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে পিছিয়ে থাকা কিছু ক্ষেত্র নিয়ে গভীর ভাবে পর্যালোচনা করার। এ দেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, অতীতের বেশ কিছু পদক্ষেপ আজ আমাদের বিশ্বের দরবারে নিয়ে গিয়েছে। আইআইটি, আইআইএসসি, আইআইএম, জেএনইউ-এর মতো প্রতিষ্ঠান স্থাপন, দেশে ভারী শিল্প স্থাপন, ব্যাঙ্ক এবং বিমা ক্ষেত্রে জাতীয়করণ, মহাকাশ গবেষণা, সবুজ বিপ্লব, আশা বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ, টেলিকমিউনিকেশন বিপ্লব, সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প, স্বর্ণ চতুর্ভুজ, আয়ুষ্মান ভারতের মতো স্বাস্থ্য বিমা সেই সব পদক্ষেপের কিছু উদাহরণ। এ সবের মিলিত প্রভাবেই আজ আমরা উন্নয়নশীল জাতির তকমা ছেড়ে উন্নত হওয়ার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছি।

আরও পড়ুন: সুস্থ হয়ে ফিরছেন আক্রান্তেরা, স্বস্তি হজ হাউসে

উল্টো দিকে, পিছিয়ে থাকা কিছু ক্ষেত্রের মধ্যে স্বাস্থ্যের দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে এই অতিমারি। যা অন্তত এই একটি জায়গাকে উন্নত করার সুযোগ করে দিয়েছে। জনস্বাস্থ্য, গ্রামীণ স্বাস্থ্য, প্রাথমিক চিকিৎসা মিলিয়ে সার্বিক স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এই ক্ষেত্রগুলিতে আমাদের বঞ্চনার ছবিটা বড্ড নগ্ন। বিগত অন্তত দশ বছর ধরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বার বার সারা পৃথিবীকে এই অভাব সম্বন্ধে জানিয়ে এসেছে। এই সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যও রয়েছে। কিন্তু পৃথিবী তো ব্যস্ত ছিল যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায়। তার ফলস্বরূপ আজ কয়েক লক্ষ মানুষ মারা গেলেন। অসুস্থ অসংখ্য মানুষ। সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে। কবে তা ঘুরে দাঁড়াবে কেউ জানেন না। অথচ এই মূল্য চোকানোর কি কোনও দরকার ছিল?

এখন আমাদের উচিত, আগামী কয়েক বছর এ নিয়ে নিবিড় ভাবে ভাবা, একটি কর্মসূচি তৈরি করা এবং তা বাস্তবায়িত করার জন্য পদক্ষেপ করা। এর রূপরেখা তৈরিতে রাখা প্রয়োজন গ্রামকে। সেখানে অল্প খরচে ব্যবহার করা যায় এমন আধুনিক স্বাস্থ্য প্রযুক্তি তৈরি করা জরুরি। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই গবেষণায় এগিয়ে গিয়েছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী (আশা বা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর থেকেও দক্ষ) তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া, ডিজিটাল হেলথ কেয়ার পদ্ধতির জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং নিয়মকানুন তৈরি করা আবশ্যিক (বিশ্ব এখন ভাবছে এই নিয়ে)। পাশাপাশি, এ-ও ভাবার বিষয় যে এত রোগ এবং চিকিৎসার পরিবর্তনের মধ্যেও বর্তমান জনস্বাস্থ্য প্রকল্পগুলির প্রাসঙ্গিকতা আদৌ কতখানি। অর্থাৎ সংখ্যাতত্ত্বের বাইরে বেরিয়ে বিবেচনা করা যে প্রকল্পগুলিতে ঠিক মতো কাজ হচ্ছে কি না। ভাবতে হবে উপযুক্ত সফটওয়্যারের প্রয়োগ নিয়েও। কী ভাবে একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিম তৈরি করা যায়, যার মাধ্যমে বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এবং পরামর্শ পৌঁছে দেওয়া যাবে সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। জনস্বাস্থ্যকে এপিডিমিয়োলজির থেকে বার করে এনে জীববিদ্যার সঙ্গে কী ভাবে মেলবন্ধন করা যায়, সেই পঠনপাঠনকে কী ভাবে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, শুধুমাত্র ডাক্তার কেন, বিজ্ঞানীদেরও কী ভাবে জনস্বাস্থ্যের কাজে লাগানো যায় ভাবতে হবে এই দিকগুলিও।

আরও পড়ুন: কলকাতার বড় মাপের চিন্তাবলয়ের প্রতিনিধি হরিশঙ্কর বাসুদেবন

তবেই কিন্তু আমরা আমাদের দেশ, মানবজাতি তথা সভ্যতার কাছে একটি পরিবর্তন ক্ষণ তৈরি করতে পারব, দেশের বড় অংশের মানুষকে সুস্থ করতে পারব, প্রকৃত অর্থে উন্নত দেশ হিসেবে তৈরি হব। সারা বিশ্বে নজির গড়তে পারব।

এগিয়ে যাওয়ার এই মানচিত্র জুড়ে থাকুক গ্রামীণ স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য।

(চিকিৎসক ও ভিজ়িটিং প্রফেসর, স্কুল অব মেডিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আইআইটি খড়্গপুর)

Coronavirus in India Public Health Rural Health Development

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।