Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘ভাইরাস চরিত্র বদলাচ্ছে, আমরা কবে বদলাব?’

প্যাথোজেনরা বদলাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে শহরবাসীর অভ্যাস বদলাচ্ছে কি?

ধর্মতলায় রাস্তাতেই পানের পিক ফেলছেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

ধর্মতলায় রাস্তাতেই পানের পিক ফেলছেন এক যুবক। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক ও দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

দেবাশিস ঘড়াই
শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৫:৫৪
Share: Save:

‘‘সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য ভাইরাস-ব্যাক্টিরিয়ারা প্রতিনিয়ত মিউটেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অথচ যেখানে কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারলেই অধিকাংশ রোগের মোকাবিলা সম্ভব, আমরা সেগুলিই আয়ত্ত করে উঠতে পারছি না। ভাইরাস চরিত্র বদলাচ্ছে, আমরা কবে বদলাব?’’ শহর জুড়ে আতঙ্কের মধ্যেই আক্ষেপ করছিলেন নোভেল করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করা এক গবেষক।

স্প্যানিশ ফ্লু-এর শতবর্ষে, ২০১৮ সালে মহামারি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। সেই রিপোর্টে তারা বলেছিল, আরও একটি মহামারি অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু কবে তা হবে, তার পূর্বাভাস করা কঠিন। কারণ, মিউটেশনের মাধ্যমে কী ভাবে কোনও প্যাথোজেন (ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাস-সহ অন্যান্য মাইক্রোঅর্গানিজ়ম, যা থেকে রোগ ছড়ায়) নতুন চেহারায় ফিরবে, তা কারও জানা নেই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর সুখেন্দু মণ্ডল বলছেন, ‘‘এর আগে দু’টি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছিল, সার্স এবং মার্স। কিন্তু কোভিড-১৯ হল মিউটেশনের পরে করোনাভাইরাসের আর একটি নতুন রূপ। টিকে থাকার জন্য প্যাথোজেনরা ক্রমাগত বিবর্তিত হচ্ছে। তাই কোভিড-১৯-এর মধ্যেও একাধিক চেহারা দেখা যাচ্ছে এখন।’’

প্যাথোজেনরা বদলাচ্ছে, পাল্লা দিয়ে শহরবাসীর অভ্যাস বদলাচ্ছে কি? কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রুখতে যে ক’টি সহজ পন্থার কথা বলা হয়েছে সেগুলি হল যত্রতত্র থুতু না ফেলা, কাশি-হাঁচির সময়ে মুখ ঢাকা, হাত ধোয়া। গবেষণা বলছে, সব ক’টি ক্ষেত্রেই কলকাতার স্থান নীচের দিকে। কলকাতা-সহ রাজ্যে ‘দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রিভেনশন অব স্পিটিং ইন পাবলিক প্লেস অ্যাক্ট ২০০৩’ থাকলেও তা মানা হয় না। যত্রতত্র থুতু ফেলা নিয়ে কলকাতা পুরসভারও আইন রয়েছে। তবে তা খাতায়কলমেই। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা জানাচ্ছে, শহর-সহ রাজ্যের বাসিন্দাদের একাংশের পছন্দ পান, গুটখা খেয়ে রাস্তায়, কোনও ভবনের দেওয়ালে এবং বাস-ট্রাম থেকে থুতু ফেলা। এক বিহেভিয়েরাল সায়েন্টিস্টের কথায়, ‘‘এখানে থুতু ফেলাটা কার্যত সংস্কৃতির অঙ্গ বা ‘কালচার বাউন্ড সিন্ড্রোম’ (সিবিএস)। যেমন, কুনজর এড়ানোর জন্য বাচ্চার গায়ে থুতু দেন মায়েরা।’’

ইতিহাসবিদেরা বলছেন, মুঘল আমলে পিকদানির প্রচলন ছিল। কিন্তু পিকদানি-সংস্কৃতি যত দ্রুত হারিয়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে যত্রতত্র থুতু ফেলার প্রবণতাও বেড়েছে। যক্ষ্মা রোগ ঠেকানোর কৌশল হিসেবে এক সময়ে বিদেশে ‘স্পিট ইজ় পয়জ়ন’ বা ‘থুতু হল বিষ’ জাতীয় বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হত। যাতে সাধারণ মানুষ থুতু ফেলার আগে দু’বার ভাবেন। কিন্তু সরকারি আইন বা জরিমানার ভয়, কোনও কিছুই শহরবাসীর যত্রতত্র থুতু ফেলার প্রবণতা দমাতে পারেনি।

আচরণগত বিজ্ঞান জানাচ্ছে, মানুষের ৪৫ শতাংশ আচরণই অভ্যাসভিত্তিক। সেখানে সিংহভাগ শহরবাসীর হাত পরিষ্কারের অভ্যাস নেই। অথচ শুধু সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া-সহ একাধিক সংক্রমণ এড়ানো যায় বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ’-এর এপিডেমিয়োলজি বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর, প্রফেসর শম্পা মিত্র বলছেন, ‘‘রাজ্য সরকারের তরফে কোভিড-১৯ সংক্রমণ রুখতে সাধারণের বোধগম্য ভাষায় প্রচার চালানো হচ্ছে। সেই নিয়মগুলি মানলেই সংক্রমণ রোখা সম্ভব। কিন্তু এ শহরের স্বাস্থ্য সচেতনতা (হাইজিন সেন্স) খুবই কম। তাই যত্রতত্র থুতু ফেলছি, নোংরা করছি।’’

একই ভাবে মুখ না ঢেকেই হাঁচি-কাশির অভ্যাসও পরিস্থিতি জটিল করতে পারে বলে আশঙ্কা চিকিৎসকদের। তথ্য বলছে, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় ৩০ শতাংশই হল কাশির সংক্রমণের রোগী। অথচ কাশির সময়ে মুখ ঢাকার নিয়মই মানেন না বেশির ভাগ মানুষ। এই মানসিকতার ব্যাখ্যা করে সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক অভিজিৎ কুণ্ডু বলছেন, ‘‘আসলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি আমরা শুধুমাত্র ধর্মীয় গণ্ডিতে আবদ্ধ রেখেছি। তাই জুতো পরে দেবতার কাছে যাওয়া যায় না। কিন্তু মুখ না ঢেকে অবলীলায় ভিড়েও কাশা যায়!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy