ফাঁকা: চাঁদনি চকের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর বাজারে নেই ক্রেতা। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পরপর চারটি দোকান ঘুরে প্রবল বিরক্ত এক ক্রেতা। একটি নির্দিষ্ট রঙের বৈদ্যুতিন পণ্যের জন্য বেশি দাম দিতেও রাজি তিনি। কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছেন না। চার নম্বর দোকানের কর্মীও জানিয়ে দিলেন, ‘‘মনে হয় নেই।’’ বিষয়টি এর পরে পৌঁছল দোকানের মালিকের কাছে। সেই মালিক ক্রেতাকে বললেন, ‘‘করোনার জন্য কোনও জিনিসই চিন থেকে চাঁদনিতে ঢুকছে না। আর আপনি রং খুঁজছেন? দ্বিগুণ দাম দিলেও এখন পছন্দ মতো পাবেন না।’’
মোবাইল থেকে চার্জার, হেডফোন থেকে টেলিভিশন সেট, কম্পিউটর থেকে বাল্ব— সব কিছু নিয়েই চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে হাহাকার শুরু হয়েছে শহরের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর বাজারে। পছন্দ মতো নকশা তো দূর, রং বেছে নেওয়ারও সুযোগ থাকছে না ক্রেতাদের কাছে। কোথাও কোথাও বাজারের পরিস্থিতি জানিয়ে বাড়তি দর হাঁকা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। ব্যবসায়ীদের দাবি, এর সব কিছুই হচ্ছে বিশ্বজোড়া করোনাভাইরাসের থাবার কারণে। ভারতের বৈদ্যুতিন সামগ্রীর বাজারের ৮০ শতাংশই চিনের উপরে নির্ভরশীল। গত ফেব্রুয়ারি থেকে চিনের রাস্তা বন্ধ হওয়ার জেরেই এই অবস্থা।
কলকাতার বৈদ্যুতিন সামগ্রীর সব চেয়ে বড় বাজার চাঁদনি চক। এখানকার ব্যবসাও বহুলাংশে চিনের উপরেই নির্ভরশীল। দিনভর চাঁদনি বাজারে ঘুরে দেখা গেল, ব্যবসায়ীরা মজুত দ্রব্যের জোরেই ব্যবসা চালাচ্ছেন। যাঁদের সেই পরিস্থিতি নেই, তাঁরা সংবাদমাধ্যমে করোনা পরিস্থিতির দিকে চোখ রেখে সময় কাটাচ্ছেন। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের এক বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকানের মালিক বিমল জাটুয়া বললেন, ‘‘এমন অবস্থা চাঁদনি বাজার শেষ কবে দেখেছে মনে পড়ে না। আর কয়েক মাস এ রকম চললে পুরো বাজারটাই বসে যাবে। বলা হয়, যা চাইবেন, সব পাওয়া যাবে চাঁদনি বাজারে। আজ আর সেটা বলা যাচ্ছে না।’’ দেখা গেল টিভিতে তখনই শিরোনাম দেখাচ্ছে, বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
আরও খারাপ পরিস্থিতি এজরা স্ট্রিটের বিভিন্ন দোকানের। সেখানে আলোর ব্যবসা চলে সরাসরি চিন থেকে আনা সামগ্রী দিয়ে। বেশির ভাগ দোকানদারই জানাচ্ছেন, চলতি বছরের একে বারে শুরুতে যে সামগ্রী এসেছে সেটাই শেষ। এক বিক্রেতা খাতা বার করে দেখালেন, এক মাস আগে থেকে নেওয়া আলোর সামগ্রীর বরাতও এখনও তাঁরা দিয়ে উঠতে পারেননি।
‘রিটেলার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র পূর্ব শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিনয় দীক্ষিত যদিও জানাচ্ছেন, করোনার জেরে সব চেয়ে প্রভাব পড়েছে মোবাইলের ব্যবসায়। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া প্রায় সমস্ত মোবাইল কোম্পানিই তার যন্ত্রাংশের জন্য চিনের উপর নির্ভরশীল। র্যাম হোক বা প্রসেসার— সবই আসে চিন থেকে। চিন থেকে আমদানি বন্ধ হলে কী হতে পারে তা হলে বুঝে নিন। মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পও এই করোনার জেরে প্রবল ধাক্কা খাবে। কারণ, চিন থেকে আসা
যন্ত্রাংশ ছাড়া মেক ইন ইন্ডিয়ার কাজ চলবে কী করে?’’
বিকেলের দিকে চাঁদনি বাজারে দেখা গেল আর এক দৃশ্য। মোবাইলের ‘স্ক্রিন-গার্ড’ লাগানোর দোকানে প্রবল দরদাম চলছে এক ক্রেতা ও বিক্রেতার। শেষে দাম স্থির হওয়ার পরে ক্রেতা বললেন, ‘‘চিন থেকে আসে তো আপনাদের জিনিস! এগুলো করোনা হওয়ার আগে এসেছে না পরে?’’ বিক্রেতা বললেন, ‘‘এমনিতেই জিনিস আসছে না দাদা। নিতে হলে নিন, নয় রাখুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy