সাবধানি: মাস্ক পরে প্রাতর্ভ্রমণে। মঙ্গলবার সকালে, রবীন্দ্র সরোবরে। নিজস্ব চিত্র
কেউ মুখে মাস্ক পরেছেন। করমর্দনের বদলে কেউ শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য অন্য জনের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করছেন। অনেকে আবার করমর্দনের বদলে পরস্পরের কনুইয়ের সামনের অংশ ছুঁয়ে কুশল বিনিময় করছেন। অনেককে দেখা গেল অন্য দিনের মতো একসঙ্গে না হেঁটে আলাদা আলাদা ভাবে প্রাতর্ভ্রমণে ব্যস্ত। সকলেই যে যাঁর মতো করে করোনার সংক্রমণ এড়াতে চাইছেন। মঙ্গলবার সকালে রবীন্দ্র সরোবরে দেখা গেল এমনই ছবি।
বিকল্প জায়গা নেই প্রাতর্ভ্রমণের। তাই সকালে হাঁটাহাঁটি কিংবা শারীরচর্চার জন্য রবীন্দ্র সরোবর ভরসা বহু মানুষের কাছেই। এমন বহু মানুষ প্রতিদিন সকালে সেখানে আসেন, যাঁরা ডায়াবিটিস কিংবা উচ্চ রক্তচাপের রোগী। তাই সকালে হাঁটা তাঁদের কাছে বাধ্যতামূলক। তাঁরা জানান, এমনিতেই শরীরে সমস্যা রয়েছে। তার উপরে এখন নতুন উপদ্রব করোনাভাইরাসের আতঙ্ক। ফলে অন্য জায়গার মতো সরোবর বন্ধ রাখা উচিত কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্ত প্রাতর্ভ্রমণকারীরা।
যেমন রাসবিহারির বাসিন্দা দিলীপ মুখোপাধ্যায়কে দেখা গেল মাস্কের বদলে নাকে রুমাল চাপা দিয়েই হাঁটতে। তাঁর কথায়, ‘‘বৃহত্তর স্বার্থে সরোবরও বন্ধ রাখা উচিত।’’ নিলু সিংহ নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘মাস্ক পরেই জগিং করতে এসেছি। সরোবর আপাতত দিন পনেরো বন্ধ রাখা প্রয়োজন।’’ পরিবেশকর্মী সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরোবরে ভিড় ছাড়াও থুতু ফেলে এলাকা নোংরা করা হয়। সেখান থেকে অসুখ ছড়াতেই পারে। তাই রবীন্দ্র সরোবর বন্ধ রাখাই শ্রেয়।’’
আবার প্রাতর্ভ্রমণকারী অসীম সরকারের কথায়, ‘‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যা নির্দেশিকা রয়েছে, তাতে রবীন্দ্র সরোবরের মতো খোলামেলা জায়গায় রোগ ছড়াতে পারে বলে তো শুনিনি। একে অন্যের থেকে দূরত্ব রেখে এখানে হাঁটায় কোনও সমস্যা নেই।’’
করোনার ভয়ে সরোবর বন্ধের পক্ষপাতী নয় ‘রবীন্দ্র সরোবর্স ফ্রেন্ডস ফোরাম’। সংগঠনের সভাপতি পরমেশ্বরলাল শাহ বলেন, ‘‘সরোবর বন্ধ করে সমস্যার কোনও সুরাহা হবে না। বরং নির্দেশিকা মেনে সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। তার জন্য আমরা দ্রুত প্রচার অভিযান শুরু করব।’’ সরোবর বন্ধের কোনও নির্দেশ এখনও নেই বলেই কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
এ দিন সরোবর চত্বরে হাজির ছিলেন সেখানকার ‘লাফিং ক্লাব’-এর সদস্যেরা। সরোবর চত্বরে সাফারি পার্কের জিমেও ভিড় দেখা যায়। কেএমডিএ-র সুইমিং পুলটি অবশ্য বন্ধ ছিল। সরোবরের বিভিন্ন ক্লাবের সুইমিং পুলেও এ দিন সকালে কাউকে জলে নামতে দেখা যায়নি।
যদিও খোলা জিমের ব্যবহার নিয়ে প্রাতর্ভ্রমণকারী উৎপল ঘোষ বলেন, ‘‘অনেকেই পার্কের খোলা জিম ব্যবহার করে চলে যাচ্ছেন। ব্যায়ামের যন্ত্রপাতিগুলিতে জীবাণুনাশক দেওয়া হচ্ছে না।’’
রবীন্দ্র সরোবরের মতোই পূর্ব কলকাতার সুভাষ সরোবরেও সকালে হাঁটতে যান অনেকে। তাঁরা মনে করেন বিরাট সরোবর চত্বরে একে অন্যের থেকে দূরত্ব রেখেই প্রাতর্ভ্রমণ করা যায়। সুভাষ সরোবরের জলাশয়ের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা অ্যাঙ্গলার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তপন দত্ত বলেন, ‘‘আমি নিজেই প্রাতর্ভ্রমণকারী। এখানে এমন কোনও অবস্থা ঘটেনি, যে লোকে আসা বন্ধ করবে। সরোবর বন্ধেরও কোনও কারণ ঘটেনি। বরং মুক্ত বাতাস স্বাস্থ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy