ফাইল চিত্র।
কয়েক মাস আগেও দিনে একটা করে ফোন আসত। এখন রোজ কয়েক হাজার ফোন সামলাতে হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের সদস্যদের। চিকিৎসক, কোভিড রোগী ও তাঁদের পরিজনেদের নিয়ে তৈরি হয়েছে এই সংগঠন।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে হাসপাতালে শয্যা পাওয়া প্রায় লটারি জেতার সমান হয়ে দাঁড়িয়েছে— জানাচ্ছেন সেটির অন্যতম সদস্য, বিশ্বরেকর্ডজয়ী পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। আলিপুরের ‘উত্তীর্ণ’ সভাঘরকে সম্প্রতি সেফ হোমে রূপান্তরিত করেছে কলকাতা পুরসভা। সেটি পরিচালনার দায়িত্ব বর্তেছে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপরে। ওই সেফ হোমে কোভিড ওয়ার্ড গড়ে তুলছেন তাঁরা। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রকোপ সামনে থেকে উপলব্ধি করা এই মানুষগুলিকে এখন গ্রাস করেছে আতঙ্ক।
গত বছরের ১ এপ্রিল চিকিৎসক-দিবসে যাত্রা শুরু করেছিল কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক। স্বেচ্ছাসেবকদের এই দলে সত্যরূপের পাশাপাশি প্রথম দিন থেকে রয়েছেন মডেলিং, গান ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার মানুষ। তাঁরা অনেকেই কোভিড-জয়ী। এ ছাড়াও সংগঠনে রয়েছেন বহু চিকিৎসক ও বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারি পড়ুয়ারা। ২৪ ঘণ্টা হেল্পলাইন সামলাচ্ছেন তাঁরাই।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অতিমারির প্রথম ঢেউ সামলেছিলেন ওঁরা। ধরে নিয়েছিলেন, প্রায় জিতে এসেছেন সেই যুদ্ধ। কিন্তু দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াল রূপ সমস্ত হিসেব এলোমেলো করে দিয়েছে।
সম্প্রতি আলিপুরে চালু হয়েছে সেফ হোম ‘উত্তীর্ণ’। মূলত উপসর্গহীন করোনা রোগী, যাঁদের বাড়িতে কোয়রান্টিনে রাখার পরিকাঠামো নেই, তাঁরা এখানে থাকতে পারছেন। এই হোম পরিচালনার পুরো দায়িত্ব নিয়েছে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক।
সত্যরূপ জানান, আপাতত ২০০টি শয্যা দিয়ে চালু হয়েছে এই হোম। দ্রুত ৫০০টি শয্যার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে সেখানে রয়েছেন বেশ কয়েক জন করোনা রোগী। এর পাশাপাশি, এই সেফ হোমে করোনা ওয়ার্ড তৈরির কাজও শুরু হয়েছে। সত্যরূপ বলেন, ‘‘অনেক রোগী আছেন, যাঁরা প্রথমে ছিলেন উপসর্গহীন। কিন্তু তাঁদের ক্ষেত্রে দ্রুত করোনার বিভিন্ন উপসর্গ লক্ষ করা যাচ্ছে। সে কারণে এই সেফ হোমে কোভিড ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’’
শুধু কোভিড ওয়ার্ড তৈরি করাই নয়। আরও বেশ কিছু জরুরি পরিষেবার দায়িত্ব সামলাচ্ছে এই সংগঠন। সত্যরূপ জানাচ্ছেন, হাসপাতালে শয্যার জন্য প্রতিদিন কয়েক হাজার ফোন আসছে তাঁদের কাছে। সাধ্যমতো সেই পরিবারগুলিকে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। সত্যরূপের কথায়, ‘‘হাসপাতালে বেড পাওয়া এখন লটারি পাওয়ার মতো ব্যাপার!’’ এ ছাড়াও বাজারে করোনার ওষুধ রেমডেসিভিয়ারের অভাব, প্রতিষেধক না পাওয়া— এমন নানা সমস্যা নিয়েও প্রতিনিয়ত আসছে ফোন। এই দলে যুক্ত চিকিৎসকেরা অনলাইনে
পরামর্শ দিচ্ছেন। পরিস্থিতি যে গত বারের চেয়ে অনেক বেশি খারাপ, তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। অ্যাম্বুল্যান্সের জন্যও মুহুর্মুহু ফোন আসছে সংগঠনের কাছে। সত্যরূপ জানালেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করেও সকলকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি অক্সিজেন সরবরাহের অবস্থাও খুব খারাপ। তবে এখনও শূন্য হয়ে যায়নি।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের এমন বাড়বাড়ন্তের কারণ সম্পর্কে কী বলছেন এই করোনা-যোদ্ধারা? সত্যরূপের কথায়, ‘‘মাঝে যখন অনেক মানুষ মাস্ক পরছিলেন না, তখন আমরা বার বার করে তাঁদের সচেতন করেছি। মাস্ক পরা যে কত দরকার, সে কথা বুঝিয়েছি। আমরা বলেছিলাম, মাস্ক না পরলে করোনা আরও ভয়াবহ রূপে ফিরে আসতে পারে। ঠিক সেটাই হয়েছে। সেই সঙ্গে এই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, মিছিলের ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy