Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
corona virus

ফুলমিষ্টিতে স্পর্শ-যোগ, মন্দির নিয়ে চিন্তায় প্রশাসন

দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা ভরা সঙ্কটের দিনকালে ভক্তদের আসাযাওয়ায় ভাটা পড়েনি। শহর কলকাতায় কন্টেনমেন্ট এলাকা বা আশপাশে পাড়ায় পাড়ায় মন্দির ঘিরেও তাই প্রশাসন চিন্তায়।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২০ ০২:০০
Share: Save:

সাধারণত মন্দিরের দরজায় তালাচাবি। গ্রিলের ফাঁকফোকরে ঠাকুরের মুখটুকু যা দেখা যায়। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় শনিবারের সিন্নি থেকে প্রসাদী ভোগ বিতরণ বন্ধ থাকার কথাও নোটিস দিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে। তবু দুশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা ভরা সঙ্কটের দিনকালে ভক্তদের আসাযাওয়ায় ভাটা পড়েনি। শহর কলকাতায় কন্টেনমেন্ট এলাকা বা আশপাশে পাড়ায় পাড়ায় মন্দির ঘিরেও তাই প্রশাসন চিন্তায়।

শুক্রবারই উত্তর কলকাতার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গাচরণ মিত্র স্ট্রিটের একটি শীতলা মন্দিরের পুরোহিত কোভিড আক্রান্ত বলে খবর মিলেছে। সেই সঙ্গে মন্দিরে মন্দিরে ব্যবহৃত প্রসাদী ফুল, পেঁড়া, ফল কিংবা পুরোহিতের হাতে, কপালে আঁকা মঙ্গলদায়ক তিলক নিয়েও অনেকেরই চোরা আশঙ্কা কাজ করছে। ওই তল্লাটের জনৈক বাসিন্দার কথায়, “এখন বাড়িতে
আনাজ-মিষ্টি আনলেও আমরা প্যাকেট স্যানিটাইজ় করে বা রোদে রেখে স্পর্শ করছি। মন্দিরে তো আসাযাওয়া হয়ই। ফুল-মিষ্টির হাতবদলের ফাঁকে সংক্রমণ এড়ানো নিশ্চিত করা খুবই কঠিন।”
সম্প্রতি চেন্নাইয়ের কাছের পাইকারি আনাজ বাজারের সংযোগে ২৬০০ জনের কোভিড সংক্রমণের জেরেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। কলকাতার মন্দিরের পুরোহিতের সংক্রমিত হওয়ার পিছনেও নানা জনের হাতে হাতে ফুলমিষ্টির স্পর্শযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় কাউন্সিলর মোহন গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘আমরা ওই তল্লাটের আরও ৭-৮টি মন্দির জীবাণুমুক্ত বা স্যানিটাইজ় করেছি। কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি যৌথ পরিবারে থাকতেন। তাঁদের সবাইকেই বাড়িতে থাকতে বলেছি।” মোহনবাবুর ধারণা, ওই কোভিড আক্রান্তের কিডনির সমস্যার মতো কিছু আনুষঙ্গিক রোগও ছিল। যার ফলেও হয়তো তিনি সহজে সংক্রমিত হয়েছেন।

অতিমারির বিপদের জেরে লকডাউন পর্বের গোড়ায় সর্বত্রই ধর্মস্থানে জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রথমেই বেলুড় মঠ ও দক্ষিণেশ্বর মন্দির কর্তৃপক্ষ সতর্ক হয়েছিলেন। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের অছি ও সম্পাদক কুশল চৌধুরীর কথায়, “যা দিনকাল, তাতে ভবিষ্যতে
লকডাউন আলগা হলে বিমানবন্দরের মতো মন্দিরেও ভক্তদের দর্শনের সময়ে দূরত্ব রেখে নির্দিষ্ট সতর্কতাবিধি তৈরি করতে হবে।”

আরও পড়ুন: গাড়ি জীবাণুমুক্ত করার সুড়ঙ্গ চালু হচ্ছে মেছুয়ায়

আরও পড়ুন: চাপের মুখে কলকাতা ফিরছে উড়ান-চিত্রে

কালীঘাটের মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ হালদারও এখন ক`জন পুরোহিত ছাড়া কাউকে মন্দিরে ভোগ বা আরতির সময়েও ঢুকতে দিতে নারাজ। লেক কালীবাড়িতে নিত্যপুজো চললেও সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। মন্দিরের সেবায়েত নিতাই বসু বলছেন, “কখনও দু’-এক জন চেনাজানা পুজো দিতে ঢোকার অনুরোধ করছেন। আমরা সব দিক থেকেই সতর্কতা
বজায় রাখছি।”

কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় ছোট মন্দিরগুলি পুরোপুরি সতর্ক নয়। শনিবার গ্রহরাজের পুজোর দিনে পাইকপাড়ার একটি মন্দিরের বাইরে দেখা গেল মাস্কধারী ভক্তের দল ধূপ জ্বালছেন। শ্যামবাজার থেকে ব্যাগবোঝাই ধূপকাঠির বাক্স এনে বিক্রিও করছেন স্থানীয় এক মহিলা। তারাশঙ্কর সরণির মন্দিরেও ছোটখাট সিন্নির আয়োজন।

পুর স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অতীন ঘোষের অবশ্য দাবি, “আমরা সরকারি নির্দেশিকা মেনেই সতর্কতা বজায় রাখছি।” সরকারি নির্দেশে সব খুঁটিয়ে না বললেও হাত ধোয়ার স্বাভাবিক সতর্কতা-বিধিই যে গুরুত্বপূর্ণ, তা মনে করালেন জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক তথা অধ্যাপক দিলীপ দাস। তাঁর কথায়, “আমরা ডাক্তারেরাও পর পর রোগী দেখলে গ্লাভসও স্যানিটাইজ় করছি। পুরোহিতের ক্ষেত্রে কি বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া সম্ভব? প্রসাদী ফুল, পেঁড়া হাতেহাতে বিলি করার অভ্যেসেও এখন কিছু রদবদল হলে ভাল।”

অন্য বিষয়গুলি:

corona virus covid 19 lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy