অসহায়: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শ্যামা দেবী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
পেট ফাঁপার সমস্যা থেকে ক্যানসার। মালদহ মেডিক্যাল কলেজের রেফার করা রোগীর চিকিৎসার শুরুতেই করোনা ধরা পড়ায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে পাঠিয়েছিল চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল। এর পর থেকে চার হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা না পাওয়া সেই রোগীর কলকাতা মেডিক্যাল চত্বরেই পড়ে থাকার খবর প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল শুরু হয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে ভর্তি নেয় ওই হাসপাতাল।
তবে শুক্রবার সেখান থেকে তাঁকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, তার পরে যে চিকিৎসার জন্য তিনি কলকাতায় এসেছিলেন, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে গিয়ে আর তা করাতে পারেননি। কারণ সেখানে তাঁকে ভর্তিই নিতে চাওয়া হচ্ছে না বলে দাবি রোগীর পরিবারের। অভিযোগ, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল প্রথমেই বলে, “মেডিক্যালের করোনার রোগীকে ভর্তি নেওয়া যাবে না।’’ রোগীর ডিসচার্জ রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ দেখানো হলেও বলা হয়, “১৪ দিন পরে আসুন।”
কিন্তু কেন? রোগীর পরিবারকে সেই উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেননি বলেই অভিযোগ। ফলে সেই মেডিক্যাল কলেজ চত্বরেই আবার ফিরে যেতে হয়েছে শ্যামা দেবী নামে ওই রোগীকে।
তাঁর পরিবার শনিবার জানায়, ‘অ্যাবডোমিনাল ডিস্টেনশন’ বা পেট ফাঁপার সমস্যায় ভোগা রোগীর ক্যানসার হয়েছে জানিয়ে গত এপ্রিলের শেষে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে রেফার করে দেয় মালদহ মেডিক্যাল কলেজ। প্রায় ২২ দিন ঘোরানোর পরে তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে কয়েক দিনের মধ্যেই ওই রোগীর করোনা হয়েছে জানিয়ে তাঁকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে পরিবারের দাবি। শ্যামা এ দিন বলেন, “তখন প্রায় ১১ দিন ভর্তি থাকার পরে ছুটি দিয়ে দেয় মেডিক্যাল। ফের চিত্তরঞ্জনে গেলে সেখান থেকে আর ভর্তি নিতে চাওয়া হয়নি। ফের এই কলকাতা মেডিক্যালে চলে আসি।”
আরও পড়ুন: লকডাউনে বিধি ভেঙে বিধাননগরে ধৃত ৫৯
কলকাতা মেডিক্যালেরই এক অন্য রোগীর সাহায্যে বোনকে এর পরে এনআরএসে নিয়ে যান শ্যামার দিদি। প্রদীপ পাল নামে ওই ব্যক্তি এ দিন জানান, এনআরএস রোগীর পেট খানিকটা পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। কিন্তু রক্ত বার হতে দেখে তারাও ছেড়ে দেয়। বছর ষাটেকের প্রদীপবাবু বলেন, “এসএসকেএমেও যাই আমরা। সেখান থেকেও ফিরিয়ে দেওয়া হয়।”
এর পরেই মাটিতে পড়ে থাকা ওই রোগীকে নিয়ে শোরগোল পড়ে। গত ১৪ জুলাইয়ে তাঁকে ভর্তি নেয় মেডিক্যাল। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে ছাড়ার সময় দেওয়া রিপোর্টে মেডিক্যাল জানিয়েছে, শ্যামার করোনা হয়েছিল। এখন তিনি সুস্থ। তবে ১৪ দিন তাঁর ‘হোম আইসোলেশনে’ থাকা ভাল বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে। যদিও সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার যুক্তি মানছেন না নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিক্যাল কলেজেরই এক চিকিৎসক, তিনি বলেন, “শুধু তো করোনাই রোগ নয়! গুরুতর অসুস্থ কেউ করোনা থেকে সেরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই অন্য চিকিৎসা করাতে পারেন। কারও জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে কেউ কি বাড়িতে বসে থাকবেন?”
রোগীকে ভর্তি নেওয়া হল না কেন?
চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালে শ্যামা যাঁর অধীনে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেই কল্যাণকুসুম মুখোপাধ্যায় বলেন, “করোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ থাকায় তাঁকে মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছিল। এখন সত্যিই যদি তিনি সুস্থ থাকেন, ভর্তি নিতে সমস্যা নেই।” চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের অধিকর্তা জয়ন্ত চক্রবর্তীর দাবি, “শুনে মনে হচ্ছে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওই পরিবারকে আগামী সোমবার আমাদের হাসপাতালে এসে দেখা করতে বলব। সত্যিই অসুস্থ হলে রোগী নিশ্চয়ই ভর্তি হবেন।”
তা হলে কলকাতা মেডিক্যাল চত্বরের মাটিই ভরসা ওই রোগীর? এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি কারও কাছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy