Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Train accident

‘ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যেতে বাবার কাছে আর বায়না করব না’ 

চেন্নাইয়ে পড়াশোনা করা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে করমণ্ডলে চাপেন হরিদেবপুরের পূর্ণিমারানি বাঘা এবং চিত্তরঞ্জন বাঘা।

পর্ণশ্রীতে প্রিয়াঙ্কা-তানিশা (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

পর্ণশ্রীতে প্রিয়াঙ্কা-তানিশা (ডান দিকে)। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

চন্দন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩ ০৮:৫১
Share: Save:

কেউ সপরিবার যাচ্ছিলেন উটি, দিন দশেকের ছুটি কাটাতে। কেউ আবার স্ত্রীকে নিয়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপেছিলেন চেন্নাইয়ে পড়াশোনা করা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন বলে। কিন্তু, তাঁদের সেই আনন্দের সফর এক রাতে বদলে গিয়েছে বিভীষিকায়! ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ট্রেনের কামরা থেকে প্রাণ নিয়ে কোনও মতে কলকাতায় ফিরতে পারলেও এখনও আতঙ্ক স্পষ্ট সকলের চোখে-মুখে। কেউ বলছেন, ট্রেনে করে আর কোথাও ঘুরতে যাবেন না। কেউ আবার ভয়াবহতার কথা মনে রেখেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার কলকাতায় ফিরে এলেও হাসপাতালে ভর্তি জখম স্ত্রীকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটাতে পারেননি।

যেমন, চেন্নাইয়ে পড়াশোনা করা মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে করমণ্ডলে চাপেন হরিদেবপুরের পূর্ণিমারানি বাঘা এবং চিত্তরঞ্জন বাঘা। রেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন পূর্ণিমা। তাঁর মাথায় আঘাত লেগেছে। বালেশ্বরে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে শনিবার ভোরে অ্যাম্বুল্যান্সে কলকাতায় ফেরেন দম্পতি। আপাতত পূর্ণিমা বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। তবে কলকাতায় ফিরতে পারলেও আতঙ্কে পরিবার। রবিবার চেন্নাই থেকে কলকাতায় চলে এসেছেন দম্পতির মেয়ে। এ দিন হাসপাতালে ভর্তি স্ত্রীকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ির মধ্যে চিত্তরঞ্জন বললেন, ‘‘শুক্রবার রাতের বিভীষিকা এখনও তাড়া করছে। উল্টানো কামরার ভিতরে যখন প্রথম বার স্ত্রীকে দেখি, কেঁদে ফেলেছিলাম।’’ বেঁচে ফিরে আসার জন্য ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন চিত্তরঞ্জন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের কোচ ছিল বি-৫। স্ত্রীকে সেখানে রেখে আমি জল আনতে গিয়েছিলাম বি-১ কোচে। যখন ফিরছি, তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। বি-৫ কামরাটি উল্টে গিয়েছিল। বি-১ থেকে কোনও ভাবে বেরিয়ে এসে স্থানীয়দের সাহায্যে স্ত্রীকে উদ্ধার করি। কী ভাবে যে বেঁচে ফিরেছি, আমরাই জানি।’’

আতঙ্কের একই ছবি পর্ণশ্রীর রবীন্দ্রনগর এবং পশ্চিম বন্দর থানা এলাকার রেল কলোনির দুই পরিবারেও। স্ত্রীকে নিয়ে চেন্নাই যাচ্ছিলেন রবীন্দ্রনগরের বাসিন্দা তমাল কুণ্ডু। শনিবার কলকাতায় ফিরে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। আতঙ্কে আপাতত ঘরবন্দি কুণ্ডু দম্পতি। আবার সাঁতরাগাছি থেকে সপরিবার করমণ্ডলে ওঠা, পশ্চিম বন্দর এলাকার শিবলাল কানোজিয়ার পরিবারেও সেই রাতের দু:স্বপ্ন এখনও তাড়া করছে। বি-৪ কামরায় শিবলালের সঙ্গেই ছিলেন স্ত্রী এবং দুই মেয়ে। দুর্ঘটনায় বাকি তিন জনের তেমন কিছু না হলেও বড় মেয়ে, বছর তেরোর প্রিয়াঙ্কার পাঁজরে আঘাত লেগেছে। শনিবার কলকাতায় ফিরে বিএনআর হাসপাতালে প্রিয়াঙ্কার প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। ছেড়ে দেওয়া হলেও প্রিয়াঙ্কা এখনও সেই রাত ভুলতে পারছে না।

এ দিন ওই কিশোরী বলে, ‘‘আমি আপার বার্থে বসেছিলাম। হঠাৎ ছিটকে উপর থেকে নীচে পড়ে যাই।’’ আতঙ্কে এখনও ঠিক মতো কথা বলতে পারছে না শিবলালের ছোট মেয়ে, আট বছরের তানিশা। শিবলাল বলেন, ‘‘ভাগ্যিস আমাদের কামরায় আলোটা চলে যায়নি। তা-ই বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। না হলে যে কী হত!’’

শিবলালের স্ত্রীর কথায়, ‘‘আমরা তো বড়। কিন্তু মেয়ে দুটো যেনিজেদের কী ভাবে সামলাবে?’’ আর বছর আটেকের তানিশা হাতে-পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখাতে দেখাতে বলছে, ‘‘আমি আর বাবার কাছে বায়না করব না, ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। দিদির সঙ্গে বাড়িতেই খেলব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Train accident Balasore Parnasree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy