পঞ্চসায়র এলাকার এই বৃদ্ধাবাস থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন নির্যাতিতা। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চসায়রের নির্যাতিতা যে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন, তাতে চালক ছাড়া আর কেউ ছিল না। ১০০-র বেশি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে নিশ্চিত পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, সমস্ত ফুটেজেই পাওয়া গিয়েছে, ওই মহিলা ট্যাক্সির সামনে আসনে চালকের আসনের পাশে বসেছিলেন। সেই কারণে নরেন্দ্রপুরের কাঠিপোতায় যেখানে ওই মহিলাকে ধৃত ট্যাক্সিচালক উত্তম রাম নামিয়ে দিয়েছিল, সেখানে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তবে পুলিশকে সমস্যায় ফেলেছে নির্যাতিতার ‘ফ্র্যাগমেন্টেড মেমোরি’ বা আংশিক স্মৃতি। নির্যাতিতার বিভিন্ন সময়ে বলা টুকরো টুকরো মন্তব্যকে জোড়া লাগাতে তাই সোমবার রাতে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করবেন গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মহিলাকে নিয়ে যাওয়ার পথে শেষ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে ওই রাতে ১১টা ৩১ মিনিটে। এর পর ফের ওই গাড়িকে সিসি ক্যামেরার আওতায় দেখা যায় ১২টা ৪১ মিনিটে। যেখানে ওই মহিলাকে স্থানীয় বাসিন্দারা খুঁজে পান সেখানে কোনও সিসি ক্যামেরা নেই।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, উত্তম রাম এবং তার ট্যাক্সির হদিশ পেতে বেহাল দশা হয়েছিল তাঁদের। কারণ কোনও সিসি ক্যামেরাতেই ওই গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর পাওয়া যায়নি। কেবল সাদা নীল নো রিফিউজাল ট্যাক্সির খোঁজ করতে গিয়ে মেলে প্রায় ৫ হাজার ট্যাক্সির নম্বর। সেখান থেকে প্রথমে প্রায় ৭০ জন ট্যাক্সিচালককে ডেকে জেরা করা হয়। কিন্তু সেখান থেকে কোনও সূত্র পাওয়া যায়নি। সূত্রের খবর এর পরই কাঠিপোতার যেখানে মহিলাকে স্থানীয় কীর্তনীয়ারা পেয়েছিলেন, সেখানে যান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা, ডিসি ইস্ট ডিভিশন রূপেশ কুমার এবং পঞ্চসায়র থানার ওসি তুষারকান্তি ঘোষ। সেখানে গিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন যে, বাইরের কোনও অপরিচিত গাড়ি ওই জায়গায় রাতের অন্ধকারে যাবে না। যে গাড়ি ওখানে নির্যাতিতাকে ফেলে দিয়ে গিয়েছে সে আশেপাশেই কোথাও থাকে।
আরও পড়ুন: শুধু বিজেপি নয়, মমতার নিশানায় এ বার এমআইএম-ও, ‘মিরজাফরদের’ তাড়িয়ে ঐক্যের নির্দেশ দলকে
সূত্রের খবর এর পরই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই এলাকাতে অনেক ট্যাক্সিচালকের বসবাস এবং রাতে ওখানেই ট্যাক্সি তাঁরা পার্ক করেন। সেই সূত্র ধরেই রাতে পার্ক করা গাড়ির ছবি তোলেন গোয়েন্দারা। সেই ছবি বিশ্লেষণ করে (মূলত সিসি ক্যামেরায় পাওয়া অভিযুক্তের গাড়িতে লেখার ধরন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য থেকে) চিহ্নিত করা হয় উত্তম রামের ট্যাক্সি। তদন্তকারীদের দাবি, প্রথমে উত্তম কোনও কথা স্বীকার করেনি। সে খালি বলেছিল যে, ওই রাতে মদ কিনতে বেরিয়েছিল। এর পর তাকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো হয়, যেখানে দেখা যাচ্ছে নির্যাতিতা ট্যাক্সিতে উঠছেন। তার পরেই ওই নির্যাতিতাকে ট্যাক্সিতে তোলার কথা স্বীকার করে উত্তম।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আগামিকাল মঙ্গলবার মনোবিদের উপস্থিতিতে নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দি আদালতে বিচারকের সামনে রেকর্ড করা হবে। পুলিশ সূত্রে খবর, নরেন্দ্রপুর থানাতেও ঘটনার রাতে শ্লীলতাহানির যে অভিযোগ করেছিলেন নির্যাতিতা, সেখানেও তাঁর বয়ান ছিল আংশিক। ওই বয়ান নরেন্দ্রপুর থানা ভিডিয়ো রেকর্ড করে রেখেছিল। সেই রেকর্ডও খতিয়ে দেখেছেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকেও কোনও উল্লেখযোগ্য সূত্র মেলেনি বলে দাবি গোয়েন্দাদের।
আরও পড়ুন: হাতে ড্রোন, বিদেশি অস্ত্র, ক্ষত সারিয়ে মাওবাদীরা বড় হামলায় তৈরি, বলছে গোয়েন্দা রিপোর্ট
অন্য দিকে গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতরের অধিকর্তাকে ওই বৃদ্ধাশ্রম এবং ওই বৃদ্ধাশ্রমের মালিকানাধীন আরও যে ১১টি হোম রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানো হয়েছে অব্যবস্থা, নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy