Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

পুর ভবনে আঁকতে আগ্রহী বন্দিরা

কোন দিন হবে অঙ্কনের সেই কর্মশালা, তার একটা তারিখও উল্লেখ করা হয়েছে পুরসভাকে দেওয়া আবেদনপত্রে।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ০৩:০৪
Share: Save:

কলকাতা পুর ভবনে বসে ছবি আঁকতে চান আলিপুর সংশোধনাগারের কিছু আবাসিক।

এঁদের কেউ নৃশংস খুনের আসামি, কেউ বা কঠিন অপরাধের মামলায় কারান্তরালে রয়েছেন দীর্ঘকাল। ডাকাতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সাজা পাচ্ছেন কেউ কেউ। সংশোধনাগারে বসেই আঁকার তালিম নিয়ে তাঁদের অনেকেই ভাল শিল্পী হয়ে উঠেছেন। ফিরে আসতে চাইছেন জীবনের মূল স্রোতে। কিন্তু কলকাতা পুর ভবনে বসে ছবি আঁকার বাসনা কেন? সংশোধনাগারের ভিতরে বসে যিনি ওই সব আবাসিককে মন দিয়ে আঁকা শিখিয়েছেন, তিনি অর্থাৎ, শিল্পী চিত্ত দে সম্প্রতি কলকাতা পুর প্রশাসনের কাছে এক লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, কলকাতা ছেড়ে চলে যাচ্ছে আলিপুর সংশোধনাগার। স্থানান্তরিত হচ্ছে সেখানকার মহিলা সংশোধনাগারও। আলিপুর জেলেই কিছুকাল কাটাতে হয়েছে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মতো ব্যক্তিত্বকে। যাঁদের এক সময়ের কর্মস্থল ছিল কলকাতা পুর ভবন। তাই শহর ছেড়ে সংশোধনাগারটি অন্যত্র চলে যাওয়ার আগে কলকাতা পুর ভবনে বসে ছবি আঁকতে চান সাজাপ্রাপ্ত সংশোধনাগারের আবাসিকেরা। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘আবেদন পুরসভায় জমা পড়েছে। তা মেটাতে চায় পুরসভাও। আসামি তকমা নিয়ে কেউ সারা জীবন থাকতে চায় না। সংশোধনাগারে সেই শিক্ষাই পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন তাঁরা। সমাজকেও দেখাতে চান সেই অনুশীলন। তাতে উৎসাহ দেওয়া খুব ভাল কাজ।’’ কারা দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে তাঁদের আবেদন গ্রাহ্য করা হবে বলে জানান মেয়র পারিষদ।

কোন দিন হবে অঙ্কনের সেই কর্মশালা, তার একটা তারিখও উল্লেখ করা হয়েছে পুরসভাকে দেওয়া আবেদনপত্রে। শিল্পী চিত্তবাবু জানান, ৭ জুলাই ‘ওয়ার্ল্ড ফরগিভনেস ডে’ বা বিশ্ব ক্ষমা দিবস পালিত হবে সর্বত্র। বিশ্বকবির ভাষায় ক্ষমাই শেষ কথা। তাই ক্ষমা দিবসের থেকে ভাল দিন আর কী হতে পারে বন্দিদের কাছে? সে দিনই পুর ভবনে ছবি আঁকার কর্মশালা করতে চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে পুরসভায়। ওই কর্মশালায় সংশোধনাগারের আবাসিকদের হাজির থাকা নিয়ে কারা দফতরের ডিজি-র অনুমোদনের জন্যও আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান চিত্তবাবু। তিনি জানান, কলকাতায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস থেকে শুরু করে অযোধ্যা পাহাড়, তিহাড় জেল, বিরসা মুন্ডা সংশোধনাগারে এ ধরনের কর্মশালা করা হয়েছে কারা দফতরের অনুমতি নিয়েই। এর উদ্দেশ্য, বন্দিদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা।

পুর প্রশাসন সূত্রের খবর, ৭ জুলাই শনিবার। অর্ধ দিবসের পরে পুরসভার ছুটি। সে দিন ফাঁকা থাকে পুরসভার কাউন্সিলর ক্লাবও। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, কারা দফতরের অনুমোদন মিললে সেখানেই কর্মশালার ব্যবস্থা হবে। চলবে দুপুর ১২টার পর থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত। তবে কঠোর পাহারায় থাকা বন্দিদের সুরক্ষাবলয় যাতে কোনও ভাবে বিঘ্নিত না হয়, তা দেখেই সব কিছু চূড়ান্ত হবে বলে মনে করছে পুরসভা।

কারা আসতে পারেন অঙ্কনের ওই কর্মশালায়? আবেদনপত্রে অবশ্য তার কোনও তালিকা দেওয়া হয়নি। তবে আবেদনকারীর পক্ষে চিত্তবাবু মৌখিক ভাবে পুরসভায় জানিয়েছেন, সংশোধনাগারে যে সব আবাসিকেরা রীতিমতো আঁকার তালিম নিয়ে চলেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন রশিদ খান, তেলেগু দীপক, সজল বারুই, চিন্ময় বসু, শিল্পা লামা, বুলুরানি গ্রহচারিয়া-সহ অনেকেই। তবে কর্মশালায় যোগ দিতে হলে কারা দফতর প্যারোলের অর্ডার দেয়। তা চূড়ান্ত হলে তবেই অংশগ্রহণকারীদের তালিকা তৈরি করা সম্ভব হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Convicts Drawing event Alipore Jail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy