কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনের মধ্যে এক দিনও ‘ভাল’ বাতাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। ফাইল ছবি।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার কী কী পদক্ষেপ করছে, আরও কী করা হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আগামী সপ্তাহে এই সংক্রান্ত একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এমনই জানিয়েছেন রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। তাঁর কথায়, ‘‘পরিবেশ দফতর ও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক করব। প্রাথমিক ভাবে সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
এই প্রসঙ্গেই চর্চায় এসেছে চলতি মাসে প্রকাশিত বায়ুদূষণ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট। ‘এনসিএপি ট্র্যাকার’-এর ওই রিপোর্ট বলছে, গত চার বছরে দেশের সব চেয়ে দূষিত শহরগুলিতে বাতাসের মানের ‘সামান্য উন্নতি’ হয়েছে। যদিও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দাবি, কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের বাতাসের ‘উল্লেখযোগ্য উন্নতি’ হয়েছে।
যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা, বিভিন্ন মহলের বক্তব্য, ‘মন্দের ভাল’ বাতাসের মান নিয়ে পর্ষদ এমন দাবি কী ভাবে করছে? যেখানে এখনও বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) এবং অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) উপস্থিতির মাত্রা কেন্দ্র নির্ধারিত মাত্রার থেকে বেশি! তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল, শীতের সময়ে থাকা দূষণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে কি?
পরিবেশ গবেষণাকারী সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘শীতের দূষণ কমছে কি না, তা দেখা দরকার। তা ছাড়া দূষণ নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে না এলে বাতাসের মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে, এমন দাবি করা যাবে না।’’ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ দিনের মধ্যে এক দিনও ‘ভাল’ বাতাসের সন্ধান পাওয়া যায়নি। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে শহরের বাতাসের মান তিন দিন ছিল মাঝারি, ছ’দিন খারাপ এবং এক দিন খুব খারাপ। যার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী জানাচ্ছেন, শুধু সমালোচনা না করে আগের থেকে বাতাসের মানের উন্নতি হওয়া নিয়েও আলোচনার দরকার। মানসের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার সর্বতো ভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। আমাদের একটাই লক্ষ্য, সাধারণ নাগরিকদের সুস্থতা ও তাঁদের ভাল রাখা।’’
প্রসঙ্গত, চলতি মাসে প্রকাশিত ‘এনসিএপি ট্র্যাকার’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাতাসে পিএম ২.৫-এর উপস্থিতির নিরিখে ২০১৯ সালে দেশের সব চেয়ে দূষিত প্রথম ১০টি শহরের মধ্যে আসানসোল (নবম) ও কলকাতা (দশম) ছিল। সেই বছর ওই দুই শহরে পিএম ২.৫-এর গড় মাত্রা ছিল যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৬০ ও ৫৬ মাইক্রোগ্রাম। কিন্তু, ২০২২ সালে আসানসোল ও কলকাতার বাতাসে পিএম২.৫-এর গড় মাত্রা দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে প্রতি ঘনমিটারে ৫৯ ও ৫০ মাইক্রোগ্রাম। যা এখনও কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের নির্ধারিত মাত্রার (বার্ষিক প্রতি ঘনমিটারে ৪০ মাইক্রোগ্রাম) চেয়ে বেশি। আবার পিএম১০-এর উপস্থিতির নিরিখে ২০১৯ সালে হাওড়া ছিল নবম স্থানে (প্রতি ঘনমিটারে ১৩২ মাইক্রোগ্রাম)। ২০২২ সালে হাওড়ার স্থান হয় ৩০। ওই বছর হাওড়ায় পিএম১০-এর উপস্থিতি ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১৭ মাইক্রোগ্রাম। যা কেন্দ্রের সহনমাত্রার (বার্ষিক প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম) থেকে অনেকটাই বেশি।
পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘যে সব শহরে বাতাসের মান খারাপ, সব সময়ে কেন সেগুলির সঙ্গেই কলকাতার তুলনা করা হয়? কেন আমরা এখনও বলতে পারছি না, কলকাতার বাতাসের মান দূষণের নির্ধারিত মাত্রা লঙ্ঘন করেনি?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy