—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি হাসপাতালে কর্পোরেট হাসপাতালের ধাঁচে চিকিৎসকদের আয় বৃদ্ধির প্রকল্প ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। হাসপাতালের আয়ের একাংশ চিকিৎসকদের দেওয়ার এই প্রকল্প নিয়ে বিভক্ত চিকিৎসকেরাই। এ রাজ্যে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার হাসপাতাল (সিএনসিআই) ও এসএসকেএম হাসপাতালে এই প্রকল্প চালু হয়েছে। আগে থেকেই মুম্বইয়ের টাটা ক্যানসার হাসপাতালে এই ব্যবস্থা রয়েছে।
সিএনসিআই সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হাসপাতাল। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যথাক্রমে ৫৫ শতাংশ এবং ৪৫ শতাংশ অর্থসাহায্যে এটি চলে। জমি, বিদ্যুৎ সবই সরকারের। পরিচালনার জন্য রয়েছে গভর্নিং বডি। সদস্যদের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব রয়েছেন। অন্য দিকে, এসএসকেএম পুরোপুরি রাজ্য সরকারের হাসপাতাল। সিএনসিআইয়ের রাজারহাট ও হাজরা ক্যাম্পাস মিলিয়ে ৪০০ শয্যার মধ্যে ১০০ শয্যা ‘প্রাইভেট’। সেখানে চিকিৎসা করালে রোগীকে কর্পোরেট হাসপাতালের ধাঁচে বেশি টাকা দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। আবার এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে কিছু পেয়িং
কেবিনেও টাকার বিনিময়ে পরিষেবা মেলে। তা থেকে হাসপাতালের যে লাভ হয়, তার একাংশ চিকিৎসকদের মধ্যে বণ্টন করা হচ্ছে। এটা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
সিএনসিআইয়ে এই প্রকল্পের নাম ‘শেয়ার অব হসপিটাল ইনকাম স্কিম’ বা এসএইচআই। চিকিৎসকদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তাঁরা ‘নন প্র্যাকটিসিং অ্যালাওয়েন্স’ (এনপিএ, অর্থাৎ এই টাকা নিলে সেই সরকারি ডাক্তার প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারেন না) বা এসএইচআইয়ের মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে পারেন। দু’টিই সমতুল হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে এবং এসএইচআই নিলেও কেউ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতে পারবেন না। গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১০০টি ‘কর্পোরেট’ শয্যার আয়ের অর্ধেক যাচ্ছে হাসপাতাল তহবিলে। বাকি টাকা এসএইচআই স্কিমের চিকিৎসকদের মধ্যে ভাগ হচ্ছে। সিএনসিআইয়ের অধিকর্তা জয়ন্ত চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এটা গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত। এসএসকেএম-ও করেছে। কিছু দিনের মধ্যে দেখবেন, রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে এটা চালু হবে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘এসএসকেএমের উডবার্ন ওয়ার্ডে কিছু পেয়িং কেবিন রয়েছে। সেখানকার লাভের অংশ চিকিৎসকেরা পান। কিন্তু এটা সব সরকারি হাসপাতালে চালু হবে কি না, এখনই বলতে পারব না। সিএনসিআইয়ের অধিকর্তার বক্তব্য সম্পর্কে আমার কিছু বলার নেই।’’
সিএনসিআইয়ে ২৬ জন স্কিমটি গ্রহণ করেছেন। এর বিরোধী চিকিৎসকদের অভিযোগ, কর্পোরেট শয্যাগুলি থেকে আয় বাড়াতে রোগীদের কার্যত শোষণ করা হচ্ছে। কেউ সাত দিন ভর্তি থাকলে অকারণ একই পরীক্ষা রোজ করানো হচ্ছে, অযথা ওষুধ লেখা হচ্ছে, ডাক্তারের ফি বাড়ানো হচ্ছে। এই স্কিমে থাকা চিকিৎসকদের কেউ কেউ মাসে ৯০ হাজার বা ৯৪ হাজার টাকার মতো লভ্যাংশ পেয়েছেন বলে দাবি বিরোধীদের। এর থেকে এনপিএ অনেক কম হয়।
বিরোধী চিকিৎসকদের প্রশ্ন, ‘‘কত টাকা কর্পোরেট রোগীদের থেকে আদায় করা হলে হাসপাতালের ৫০ শতাংশ ছেড়েও এক-এক জন ডাক্তার মাসে অত টাকা আয়ের অংশ পেতে পারেন? সরকারি হাসপাতাল মানবকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান, অতিরিক্ত লাভ করার জায়গা নয়।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘একাধিক চিকিৎসক এসএইচআই স্কিমে থেকেও প্রাইভেট প্র্যাকটিস করছেন। তা ছাড়া, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ডেও কর্পোরেট শয্যায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। সরকারি টাকা কেন সরকারি হাসপাতালের কর্পোরেট শয্যায় ব্যয় হবে?’’
সিএনসিআই কর্তৃপক্ষ অবশ্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে কর্পোরেট শয্যায় চিকিৎসার কথা মানতে চাননি। হাসপাতালের সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার অয়ন মজুমদারের কথায়, ‘‘মাত্র ১০০টি শয্যা থেকে প্রাপ্ত অর্থের বেশির ভাগটাই বাকি ৩০০ শয্যার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় হয়। কর্পোরেট শয্যায় কখনওই অপ্রয়োজনীয় ভাবে বিল বাড়ানো হয় না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘বরং এসএইচআই স্কিম ডাক্তারেরা নিলে সরকারের এনপিইএ দিতে যে খরচ হয়, তা বাঁচে। হাসপাতালের তহবিলে আয়ের টাকা ঢোকে। আয় বাড়ায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাও সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান না। ডাক্তারের অভাব মেটে।’’
এসএসকেএমে অভিযোগ উঠেছে, বাম জমানায় পেয়িং কেবিন থেকে প্রাপ্ত অর্থ রোগীকল্যাণ সমিতিতে জমা হত। সেই টাকার অংশ চিকিৎসকেরা পাবেন কেন? এখানেও যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সরকার ডাক্তারদের বেতন বাড়াতে পারছে না, তাই এই স্কিমে বাড়তি টাকা পেলে তাঁদের হাসপাতালে ধরে রাখা তুলনায় সহজ হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy