কলকাতার রাস্তায় মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ট্র্যাফিক পুলিশ। প্রতীকী ছবি।
পুলিশের উর্দিহীন কারও পক্ষে কেউ মত্ত কি না, তা পরীক্ষা করার কি আদৌ কোনও এক্তিয়ার রয়েছে? পুলিশ কি নিজের কাজ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাইছে? যাঁরা মদ বিক্রি করেন, তাঁরাই আবার এই পরীক্ষা করবেন কী করে? তা হলে তো তাঁদেরই কম করে মদ বিক্রি করতে হয়! বার ও রেস্তরাঁর মালিকদের জন্য ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে পরীক্ষা করে তার পরে ক্রেতাদের ছাড়ার পুলিশি নির্দেশের প্রেক্ষিতে শুরু হওয়া বিতর্কের মধ্যে শনিবার এমনই নানা প্রশ্নের মুখে পড়লেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের ভাল দিকটি ব্যাখ্যা করেই নিজের মন্তব্য শেষ করেন তিনি। কিন্তু তাতেও যেন বিতর্ক থামছে না।
এমনিতে কলকাতার রাস্তায় মত্ত চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ট্র্যাফিক পুলিশ। তাতে রক্তে নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি অ্যালকোহল থাকার প্রমাণ মিললে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষার পরে সেই রিপোর্ট ও ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারের ফল মিলে গেলে সংশ্লিষ্ট চালককে গ্রেফতারও করা হয়। নানা সময়ে এমন পরীক্ষা নিয়ে একাধিক বিতর্ক হয়েছে। এ বার বিতর্কের কেন্দ্রে কলকাতা পুলিশের একটি নির্দেশিকা। তাতে পুলিশের তরফে বার এবং রেস্তরাঁর মালিকদের নোটিস দিয়ে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। নির্দেশে জানানো হয়েছে, মত্ত অবস্থায় কেউ বার বা রেস্তরাঁ থেকে বেরিয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে বসার আগে বারের কর্মীরাই ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার পরীক্ষা করে তাঁকে আটকাতে পারেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ি ফেরার বিকল্প ব্যবস্থাও করা যেতে পারে সেখান থেকেই। যদিও এ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
এ দিন ভারত চেম্বার অব কমার্সের এক আলোচনাচক্রে কমিশনার নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে বলেন, ‘‘গত সাত বছরে পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। কমেছে মৃত্যুর হারও। একাধিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা এই কাজ সহজ করেছে। আগামী এক বছরের মধ্যে আরও ৩০০০ ক্যামেরা শহরে লাগানো হবে। তাতে অপরাধ এবং পথ দুর্ঘটনা আরও কমবে। পথ দুর্ঘটনা কমানোর উদ্দেশ্যে মত্ত চালকদের বার-রেস্তরাঁতেই আটকানোর কথা ভাবা হয়েছে।’’ কমিশনারকে এ-ও বলতে শোনা যায়, ‘‘একটি ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার যন্ত্র এবং তরল পানের স্ট্র থাকলেই পরীক্ষা করে দেখা যায়। বার থেকেই কেউ চাইলে এই পরীক্ষা করিয়ে টোকেন নিয়ে ফিরতে পারেন। পথে নাকা-তল্লাশিতে সেটি দেখালেই তাঁকে আর নতুন করে পরীক্ষার মুখে না-ও পড়তে হতে পারে।’’
কিন্তু উপস্থিত অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি বার থেকে পরীক্ষা করে বেরিয়ে অন্যত্র মদ্যপান করেন, সে ক্ষেত্রেও কি এই টোকেন বাঁচিয়ে দেবে? বারের কর্মীদের এমন পরীক্ষা করার এক্তিয়ারই বা কী? কমিশনার এর উত্তরে বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে সবটাই ভালর জন্য ভেবে করা।’’ পার্ক স্ট্রিট এলাকার এক রেস্তরাঁর মালিক সুনিধি গুপ্ত এ ব্যাপারে বললেন, ‘‘পুলিশ ধর্মসঙ্কটে ফেলেছে। মদ বিক্রি করব, আবার পরীক্ষা করে বলব যে, কেউ মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান করেছেন, এটা হয় নাকি?’’ চাঁদনি চক এলাকার একটি বারের মালিক রফিক হুসেন বললেন, ‘‘এমন ব্যাপার চালু হলে পুলিশকে মারামারি থামাতে আসতে হবে। কারণ, অনেকেই এই পরীক্ষা করাতে বললে, অপমান হিসাবে নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy