এ দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাপন-চিত্র আঁকার সূত্রেই ছাপোষা বাঙালির ঘরের ভিতরে উঁকি দিয়েছিলেন চিত্রশিল্পী সোফিয়া শার্লট বেলনোস। ‘ইন্টিরিয়র অব আ নেটিভ হাট’ ছবির বর্ণনায় তিনি খাট, চৌকি, তোরঙ্গের মতো আটপৌরে জিনিসের সঙ্গে দেওয়ালে টাঙানো ‘কাঁচা হাতের আঁকা’ দেবতার ছবির উল্লেখ করেছিলেন। অভিজাত শ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় আঁকা ছবির থেকে ভিন্ন চরিত্রের এই ছবিগুলি পটুয়ারা আঁকতেন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার কথা ভেবে। সুলভ মূল্যের ছবিগুলি পৌরাণিক বিষয়ের সঙ্গে সমকালীন সমাজের চিত্রও তুলে আনত। উনিশ শতকের প্রথমে কালীঘাটের পটের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই শিল্পধারার ঐতিহ্য কাঠখোদাই, লিথোগ্রাফ হয়ে পরবর্তী আধুনিকতর ছাপার যুগেও পোস্টার ও ক্যালেন্ডার আর্ট হিসাবে বেঁচে ছিল।
বিবর্তনের এই ধারায়, বিশ শতকের প্রথম থেকেই এই ছবিতে ছাপ ফেলতে শুরু করল স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব। ক্যালেন্ডার ও পোস্টারে অবিবক্ত ভারতের মানচিত্রের উপর ভারতমাতার চিত্রকল্প ছিল বেশ জনপ্রিয় থিম। কোথাও ভারতমাতা শৃঙ্খলিত নারী, আবার অন্য কোথাও তিনি চতুর্ভুজা শক্তিদায়িনী। ক্যালেন্ডার পোস্টারের ছবিতে মানুষ পছন্দ করতেন বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবিও। অনশনে যতীন্দ্রনাথ দাসের প্রয়াণ বা ক্ষুদিরামের বিচার ও ফাঁসির (উপরে, মাঝের ছবি) মতো ঘটনার পোস্টার ছড়িয়ে পড়েছে সারা ভারতে। ক্ষুদিরামের পোস্টার স্বাধীনতার বহু পরেও ছাপা হয়ে দেশাত্মবোধে অনুপ্রাণিত করেছে মানুষকে। দেশমাতৃকার পায়ে নিজের মস্তক নিবেদনের থিম ফিরে ফিরে এসেছে কলকাতা, কানপুর বা দিল্লি থেকে থেকে ছাপা পোস্টারে: কখনও ভগত সিংহ, আবার কখনও সুভাষচন্দ্র বসুকে (উপরে, ডান দিকে) ছবির মূল চরিত্র করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছবির শিল্পীদের পরিচয় জানা যায় না। গবেষকদের মত, ব্রিটিশ প্রশাসনের ভয়ে তাঁরা পরিচয় গোপন করতেন। স্বাধীনতার পরে অবশ্য ব্রজেন, সুধীর চৌধুরীর মতো শিল্পীদের চিহ্নিত করা যায়।
বিশ শতকের গোড়া থেকে পোস্টারের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে ওঠে ভারতমাতার শৃঙ্খলমোচন। অহিংস ও সশস্ত্র বিপ্লবীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে এঁকে শিল্পীরা স্বাধীনতা লাভে কাদের ভূমিকা বড়, সেই প্রশ্নেও নিজেদের মত দিয়েছিলেন। কলকাতার এস এন এস আর্টের ছাপা একটি ব্যাতিক্রমী পোস্টারে পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে ভারতমাতার নব অভ্যুদয়ের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছিল ১৯০৬ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত জাতীয় পতাকার বিবর্তন।
নেহরু (প্রথম ছবি), পটেল-সহ নেতাদের পোস্টারের চাহিদা ছিল স্বাধীনতার সময়। তবে নিঃসন্দেহে সুলভ ছবির বাজারে ‘পোস্টার বয়’ মহাত্মা গান্ধী (মাঝের ছবি)। চরকা, লবণ সত্যাগ্রহ-সহ বহু বিষয়ে তাঁর ছবির পোস্টার হয়েছে। নিহত হওয়ার পর ভারতমাতার কোলে মহাত্মার ঠাঁই পাওয়ার ছবিও দেখা যায়। স্বাধীনতার বেশ কয়েক দশক পরেও পঞ্চশীল বিদেশ নীতি বা ‘জয় জওয়ান জয় কিষান’-এর মতো বিষয় নিয়েও ক্যালেন্ডার হত। ইতিহাসের পাতায় এই ‘বাজার আর্ট’-এর নিদর্শনগুলি সে কালের মানুষের রাজনৈতিক চিন্তার পাশাপাশি শিল্পবোধেরও পরিচায়ক।
নয়নসমুখে
পাসপোর্টের জন্য তোলা ছবিতে যুবা সুভাষচন্দ্র। কেমব্রিজে কয়েক বছর পরের ছবিটি, চশমার অভিজাত পাতলা ফ্রেম দিব্যি খাপ খেয়েছে বো টাই খচিত আনুষ্ঠানিক সাজের সঙ্গে (ছবি)। বন্ধু দিলীপকুমার রায় ক্ষিতীশ চট্টোপাধ্যায় সি সি দেশাইদের সঙ্গে আর একটি ছবিতেও চোখে সেই একই চশমা। টর্টয়েজ় শেলের সুদৃশ্য খাপ-সহ সোনালি ফ্রেমের চশমাটি এ বার দেখা যাবে নেতাজি ভবন সংগ্রহালয়ে৷ সুগত বসুর মতে, সুভাষচন্দ্র এই চশমাটি পরতেন মোটামুটি ১৯১৯-২১’এর মধ্যে। নেতাজি ভবনে এক আগন্তুকের মুখেই নেতাজির চশমা নিয়ে আগ্রহের কথা শোনেন নেতাজি রিসার্চ বুরোর অধিকর্তা সুমন্ত্র বসু। তখনই খেয়াল হয় চশমাটির কথা। সুগত-সুমন্ত্রের বাবা, সুভাষচন্দ্রের ভাইপো শিশিরকুমার বসুর সংগ্রহ থেকে সুভাষ-জীবনের নানা স্মারক স্বাধীনতার মাসে মেলে ধরছে নেতাজি ভবন মিউজ়িয়ম। স্কুল-কলেজের কৃতিত্বের মেডেল, সিঙ্গাপুরের প্রবাসী ভারতীয়ের ভালবাসার উপহার সোনার রোলেক্স ঘড়িও দেখা যাবে।
বঙ্গ থেকে বিশ্বে
গিয়োম ব্রিদে ফ্রান্সের নুভেল সরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি সাহিত্য পড়ান, কিন্তু তাঁর নিভৃত সাধনা রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে কলকাতা, শান্তিনিকেতন ছাড়াও ইউরোপের বহু লেখ্যাগার ঘেঁটে সংগ্রহ করেছেন অজস্র নথিপত্র, তারই ফসল রবীন্দ্রনাথ তাগোর: কঁ ল্যান্দ দ্যভিঁয়া মোন্দ। ফরাসি থেকে কাঞ্চনা মুখোপাধ্যায়-কৃত বঙ্গানুবাদ সম্প্রতি প্রকাশিত হল, রবীন্দ্রনাথ: ভারত আঙিনায় বিশ্ব (বিংশ শতাব্দী)। রবীন্দ্রনাথের বিপুল কর্মযজ্ঞের ছবি তুলে ধরেছেন ব্রিদে; লিখেছেন বিশ্বভারতীর বাস্তবায়নে রবীন্দ্র-পরিকরদের কথাও। বইটির সূত্রেই কলকাতা ঘুরে গেলেন ব্রিদে, গত ২ অগস্ট বললেন বিংশ শতাব্দী-তে, আর ৭ অগস্ট আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ়-এ।
ছবিতে মুক্তি
স্বাধীনতা দিবসের উদ্যাপন কি শুধুই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের উদ্যাপন? সাম্য, সহাবস্থান, বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই বাদ দিয়ে কি বোঝা যায় স্বাধীনতাকে? এই ভাবনা থেকেই গত সাত বছর ধরে ১৫ অগস্টে পিপল’স ফিল্ম কালেক্টিভ আয়োজন করে আসছে ‘ফ্রেমস অব ফ্রিডম’, এক অন্য ধারার চলচ্চিত্র উৎসব। এ বারের ‘ফোকাস’ ইরান ও প্যালেস্টাইন, যে দুই দেশে দীর্ঘ কাল ধরে চলছে দুই ভিন্ন লড়াই: গণতন্ত্র ও অধিকার প্রতিষ্ঠার, মিলিটারি দখলদারি থেকে দেশ বাঁচানোর। চারটি ইরানি পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি: সেভেন উইন্টারস ইন তেহরান, ড্রিম’স গেট, জাঙ্কস অ্যান্ড ডলস ও সাইলেন্ট হাউস-এর পাশাপাশি ইট মাস্ট বি হেভন ও লিটল প্যালেস্টাইন: ডায়রি অব আ সিজ ছবিগুলি দেখার সুযোগ— উত্তম মঞ্চে, ১৫ অগস্ট সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা।
সহজ পাঠ
ছাত্রছাত্রীদের উন্নতিই তাদের মূল ভাবনা। সুবার্বন এডুকেশনাল সোসাইটি ২০১৯-এর অগস্টে তন্ময় ব্যানার্জি রোডে প্রতিষ্ঠা করেছে একটি গ্রন্থাগার, নাম ‘সহজ পাঠ’। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই লাইব্রেরি, এখন সদস্যসংখ্যা প্রায় ছ’শো, রোজ প্রায় ৫০-৬০ জন পাঠক এখানে পড়াশোনা করেন, বই নেন। সপ্তাহের সাত দিনই খোলা, আছে বিনামূল্যে আন্তর্জাল ব্যবহারের সুবিধাও। এই বছর ১ অগস্ট তাদের পঞ্চম বর্ষপূর্তি উদ্যাপন করল সহজ পাঠ পাঠাগার। শহরের পাড়ায় পাড়ায় নানা পাঠাগারে যখন গ্রাহক-পাঠকের সংখ্যা কমছে ক্রমশ, লাইব্রেরিতে বই দেওয়া-নেওয়াও হয়ে যাচ্ছে দূর অতীতের অভ্যাস, তখন এমন চিত্র আশা জাগায় বইকি।
স্মরণ-সন্ধ্যা
বিচিত্রধারায় বহতা ছিল তাঁর সৃষ্টিশীলতা। গৌতম হালদার নামটি মনে পড়তে তাই ভেসে ওঠে কলকাতা চলচ্চিত্রোৎসবের ব্রোশিয়োরের নান্দনিক ডিজ়াইন, নান্দীকার নাট্যোৎসবের সযত্ন কিউরেশন, ওঁর নাটক, চলচ্চিত্র-পরিচালনা, ফোটোগ্রাফি। কাছের মানুষেরা জানেন ওঁর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত, কিংবা ছোটগল্প প্রবন্ধ-সহ ওঁর লেখালিখির জগৎকেও। এই সব কিছু নিয়ে, সবাইকে নিয়ে বাঁচতেন, আলাদা করে ‘নিজের সময়’ বলে বাঁধেননি জীবনে কিছু। গত বছর নভেম্বরে ওঁর অকস্মাৎ চলে যাওয়া এ শহরের সংস্কৃতি-চর্চায় এক অপূরণীয় ফাঁক রেখে গেছে: কত কী করার ছিল বাকি। ১৪ অগস্ট ওঁর জন্মদিনে ক্যালকাটা ক্লাসিক ফাউন্ডেশন-এর নিবেদনে সান্ধ্য স্মরণানুষ্ঠান জি ডি বিড়লা সভাঘরে, সুরশ্রদ্ধা জানাবেন আরমান খান ও আমান আলি খান। লা স্ত্রাদা প্রকাশ করছে স্নিগ্ধ বই একখানি, গৌতমদা।
স্বাধীনতা-সংগ্রহ
এ শহরের সংগ্রাহক গোষ্ঠী ‘কলকাতা কথকতা’র নিবেদনে, ১৫-১৭ অগস্ট মায়া আর্ট স্পেস-এ হতে চলেছে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম নিয়ে প্রদর্শনী। দেখা যাবে পরিমল রায়ের সংগ্রহ থেকে স্বদেশি এনামেল বোর্ড, সূচিচিত্র; অরূপ রায়ের সংগ্ৰহ থেকে বিপ্লবী গণেশ ঘোষ, বীণা দাস প্রমুখের স্মারক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় সৌভিক মুখোপাধ্যায় ফাল্গুনী দত্ত রায়ের সংগ্ৰহ থেকে বিপ্লবীদের চিঠি, সেই সময়ের খবরের কাগজ, টিকিট, বিজ্ঞাপন, দলিল-দস্তাবেজ; চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দেখাবেন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি দেওয়া মূল্যবান তাস ও সেই সময়ের বই। স্বদেশি প্রচারপত্র, বিপ্লবীদের চিঠি, দুষ্প্রাপ্য নথি, পত্রপত্রিকা, অটোগ্রাফের সমাহার উজ্জ্বল সরদার শোভন রায় অরিন্দম রাউত জয়ন্ত ঘোষের সংগ্ৰহ থেকে। জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশ পাবে একটি বই, সংগ্রাহকদের স্বাধীনতা বিষয়ক সংগ্রহের ছবি ও লেখা নিয়ে।
সুরের আশ্রয়
হিন্দি ছবি আর রবীন্দ্রনাথ, মেলানো যায়? তলিয়ে ভাবলেই খুঁজে পাওয়া যাবে, ষাট-সত্তর আশির দশকের বহু হিন্দি ছবির জনপ্রিয় যে গানগুলো এখনও গুনগুনিয়ে ওঠে মনে, সেখানে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে রবীন্দ্রসুর। সৌজন্যে সেই সঙ্গীত পরিচালকেরা, পঙ্কজকুমার মল্লিক শচীন দেব বর্মণ অনিল বিশ্বাস হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সলিল চৌধুরী রাহুল দেব বর্মণ বাপ্পি লাহিড়ী। এ ছাড়াও আছেন নৌশাদ, লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল, রাজেশ রোশন, এঁদের সুরে আর কম্পোজ়িশনে ডানা মেলেছে রবীন্দ্রনাথের সুর। তেমনই কিছু গান তুলে ধরল ভবানীপুর বৈকালী, গত ২৮ জুলাই তাদের ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে। প্রমিতা মল্লিকের ভাবনা ও পরিচালনায়, ভাষ্যে গানে নাচে ‘সিক্রেট রেডোলেন্স: গোপন সৌরভী’; মূল রবীন্দ্রসঙ্গীত ও পরে সেগুলি দ্বারা প্রভাবিত হিন্দি ছবির গানগুলি। ছবির পোস্টারটি ইয়ারানা-র, যার বিখ্যাত ‘ছু কর মেরে মন কো’ গানটি রবীন্দ্রনাথের ‘তোমার হল শুরু’ আশ্রয়ী।
আজও মেলেনি
২০৩০-এ ‘সাসটেনেবল ডেভলপমেন্ট’-এর লক্ষ্যে পৌঁছতে চায় ভারত। কিন্তু ক্ষুধা, দারিদ্র, অপুষ্টি থেকে মুক্তি দূরস্থান, অর্থনৈতিক বৈষম্যের শিকার দেশবাসীর আজও মেলেনি স্বাস্থ্য সুরক্ষা। চিকিৎসা ব্যবস্থা, ওষুধের দখলদারি গিয়ে পড়ছে বেসরকারি হাতে; ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য’ স্রেফ স্বপ্ন। রাষ্ট্র যাতে সর্বজনীন সুস্থতা, কর্মক্ষমতা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে, সে জন্য প্রয়োজন নাগরিকের সচেতন সংগ্রাম, বলছিলেন জঁ দ্রেজ। পশ্চিমবঙ্গের মেডিক্যাল ও সেলস কর্মীদের সংগঠন অল ওয়েস্ট বেঙ্গল সেলস রিপ্রেজ়েন্টেটিভস ইউনিয়ন-এর সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন হল গত ২৭ জুলাই ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হল-এ। বহু দাবি সত্ত্বেও কর্মীদের ওয়ার্কিং রুলস তৈরি করেনি কেন্দ্র, কোম্পানিগুলি বাঁধতে চাইছে একবগ্গা শর্তে, নেই নির্দিষ্ট কর্মসময়, নিয়োগের স্থায়িত্ব— কথা হল তা নিয়েও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy