ফাইল চিত্র।
বিশ্ব-স্বীকৃতির জন্য লড়াইয়ের শেষ পর্বে খানিক বেকায়দায় পড়েছিল দুর্গাপুজো। প্রাচীন সাংস্কৃতিক পরম্পরার মধ্যে বাণিজ্যিকরণের বাড়াবাড়ি নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলেন ইউনেস্কোর হেরিটেজ বিশারদেরা। ঠিক তখনই নানা প্রান্তিক গোষ্ঠীর পুজোয় শরিক হওয়ার বিষয়টি মেলে ধরেন রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা। পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী বলছিলেন, একটি ভিডিয়ো ছবিতে দুর্গাপুজোর সঙ্গে বিস্তৃত সামাজিক যোগাযোগের খুঁটিনাটি উঠে আসে, যা মুগ্ধ করেছিল ইউনেস্কোর কর্তাদের।
কিন্তু দুর্গাপুজোর এই সর্বজনীন চেহারাটি নিয়ে বাঙালির গরিমার আবহেও নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। ইউনেস্কোর দরবারে বাঙালির পুজো একটি বিরাট গণ-উৎসব হিসাবে উঠে এলেও তার সংবেদনশীলতা, পরিবেশ সচেতনতা বা কিছু ক্ষেত্রে সহ-নাগরিকদের স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে সচেতনতাতেও খামতি চোখে পড়তে বাধ্য। ইউনেস্কোর সামনেও পুজোর সময়ে কলকাতার সুষ্ঠু যানশাসন ব্যবস্থা বা গঙ্গায় বিসর্জন নিয়ে কিছু সদর্থক পরিকল্পনার কথা পেশ করেন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। তবে ওই চেষ্টাটুকু সার্বিক ভাবে কলকাতার পুজোর ছবিটা তুলে ধরছে বলেও অনেকে মনে করেন না। বরং এ বারের পুজোতেই শ্রীভূমির বুর্জ খলিফার চমক ঘিরে অব্যবস্থা বাঙালির প্রিয় উৎসবের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে অনেকের অভিমত।
পরিবেশকর্মী নব দত্তের কথায়, “বিসর্জন নিয়ে নজরদারি ছিল সাকুল্যে দু’টি ঘাটে, যেখানে মাটির কাঠামো জলে ফেললেই ক্রেনে তোলা হয়। এ বিষয়ে মুম্বই, দিল্লির তুলনায়
কলকাতা পিছিয়ে।” খানিক ব্যতিক্রমী শাসকদলের নেতা দেবাশিস কুমারের পুজো। তিনি গঙ্গায় প্রতিমা নিয়ে যান না। মণ্ডপেই গলিয়ে ফেলেন। প্রতিমার সিসাযুক্ত রং বা ভাসানে শব্দদানবের অত্যাচার, কোনওটাই উৎসবের ভাল বিজ্ঞাপন নয়। নববাবুর কথায়, ‘‘১০-১৫টি বড় পুজো বাদ দিলে পরিবেশ সচেতনতা দিন দিন কমছে।” প্রশ্ন থাকছে, এত বড় পুজোয় কেন সাধারণত জৈব শৌচাগার থাকে না? সর্বজনীন উৎসবে বিশেষ ভাবে সক্ষমদের জন্য হুইলচেয়ার ও র্যাম্পেরই বা কতটুকু ব্যবস্থা রাখা হয়? কলকাতার পুজোর সম্মিলিত মঞ্চের কর্তা শাশ্বত বসু এই অভিযোগের প্রতিবাদ করে বলছেন, “পুজো ঘিরে কয়েকটি প্রতিযোগিতা কিন্তু পুজোর এই মানবিক দিকে জোর দেয়। বায়ো-টয়লেট ইত্যাদি তাই বেড়েছে।”
পুজো নিয়ে আরও অভিযোগ রাজনীতিকরণের। ইউনেস্কোর দরবারে পেশ করা দুর্গোৎসব সংক্রান্ত প্রস্তাবটি যিনি তৈরি করেন, সেই দুর্গাপুজো গবেষক তপতী গুহঠাকুরতাই বলছেন, “রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবে বিগ বাজেট পুজো দেড় দশক আগেও কম ছিল। নেতাদের ছবি আগে পুজোয় এত দেখা যেত না। এর ফলে কোনও ছোট পুজো যাতে কোণঠাসা না হয়, সেটাও দেখতে হবে।” শাশ্বত অবশ্য বলছেন, ‘‘নেতাদের নামে নয়, ভিড় ও জনপ্রিয়তার জোরেই কোনও পুজো বেশি আনুকূল্য পায়।’’ পুজোয় রাস্তা আটকানোর অভিযোগও তাঁর মতে আগের থেকে কম। তবে পুজোর পরে মণ্ডপের বাঁশ সরানোয় তৎপর হতে হবে বলে তিনি মনে করেন। তপতীও বলছেন, “মানুষের সুযোগ-সুবিধার দিকটা পুজোকর্তাদের আরও বেশি করে এখন মাথায় রাখতে হবে।”
উৎসব-বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইউনেস্কো-স্বীকৃতি এই কর্পোরেট আনুকূল্যের বহর বাড়িয়ে তুলবে। তাতে কী ভাবে পুজোর উপরে নির্ভরশীল মানুষ বা শিল্পীদের লাভ হয়, সেটা দেখতে হবে। পর্যটন সচিব নন্দিনী চক্রবর্তীই বলছেন, ‘‘বিশ্ব-স্বীকৃতি মানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা খুলে যাওয়া। আজকের দিনে পর্যটনকে পরিবেশবান্ধব হতেই হবে। নিশ্চিত ভাবে পুজোয় প্লাস্টিকের ব্যবহার বা নদীর দূষণ আস্তে আস্তে কমবে। তাতে আখেরে কলকাতারই লাভ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy