Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘লকডাউন এখনও চলছে নাকি? দেখে মনে হচ্ছে?’

চতুর্থ দফার লকডাউনে বুধবার থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে বলে জানানো হয়েছিল।

জনজোয়ার: বলবৎ আছে লকডাউন। তার মধ্যেই যানজট বেলগাছিয়া সেতুতে ওঠার মুখে। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

জনজোয়ার: বলবৎ আছে লকডাউন। তার মধ্যেই যানজট বেলগাছিয়া সেতুতে ওঠার মুখে। বুধবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২০ ০৪:৩৮
Share: Save:

কোথাও ঠেলাগাড়িতে বিক্রি হচ্ছে আম-লিচু, কোথাও ফুটপাতে খুলে গিয়েছে জামাকাপড়ের দোকান। অনেক জায়গায় চায়ের দোকানও খোলা। অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছেন পাড়ায়। চলছে গল্প-আড্ডাও। শিকেয় উঠেছে দূরত্ব-বিধি। অথচ, সরকারি হিসেব অনুযায়ী শহরের এই এলাকাগুলি কন্টেনমেন্ট জ়োনের আওতায়!

এতেই শেষ নয়। চতুর্থ দফার লকডাউনে বুধবার থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড় মিলবে বলে জানানো হয়েছিল। সেই অনুযায়ী এ দিন খুলে গিয়েছে অনেক অফিস। বেলগাছিয়া সেতুতে গাড়ির ঠাসাঠাসি ভিড় চোখে পড়েছে। সেখানে রীতিমতো যানজটের পরিস্থিতি। গাড়ির চাপ ছিল চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়েও। যদিও পুলিশের একাংশ একে যানজট বলতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, সকাল থেকে ওই দুই এলাকায় কিছু ক্ষণ গাড়ির চাপ বেশি ছিল। বেলা বাড়তে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

তবে এ দিন কন্টেনমেন্ট জ়োনে যে ছবি চোখে পড়েছে, তাতে মাথাব্যথা বেড়েছে পুলিশের। রাজ্য সরকারের ‘এগিয়ে বাংলা’ ওয়েবসাইটে কন্টেনমেন্ট জ়োনের যে তালিকা দেওয়া আছে, সেই অনুযায়ী শহরের উত্তর এবং দক্ষিণের কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গিয়েছে, ‘গ্রিন জ়োনের’ থেকে ওই এলাকাগুলির বিশেষ ফারাক নেই! জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক। বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, প্রথমত দীর্ঘ লকডাউন এবং দ্বিতীয়ত ঘূর্ণিঝড় তাঁদের পথে বসিয়েছে। তাই করোনা-পরিস্থিতি বিপজ্জনক জেনেও অনেকেই বাধ্য হয়ে কাজে নেমেছেন।

আরও পড়ুন: ‘বিদ্যুৎ নেই, সাত দিন ধরে খুঁটি উপড়ে রয়েছে, সিইএসসি বলল এখন পারবে না!’

কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে আছে উত্তর কলকাতার নলিন সরকার স্ট্রিট। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, মিষ্টি থেকে চা, অধিকাংশ দোকান খোলা। কেনাবেচা চলছে মুদির দোকানে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী তপন ভৌমিক বলেন, ‘‘রোজগার বন্ধ দু’মাস। আর কত দিন দোকান বন্ধ রাখব? তাই কন্টেনমেন্ট জ়োন জেনেও দোকান খুলেছি। তবে দুপুরের মধ্যে বন্ধ করে দিয়েছি।’’ এলাকার এক মিষ্টির দোকানদারের কথায়, ‘‘এ বার না-খেয়ে মারা যাব। তার থেকে দোকান খুলে সংসার বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’’

উত্তর কলকাতারই আর এক কন্টেনমেন্ট জ়োন শোভাবাজার স্ট্রিটের কিছু অংশ। সেখানেও বেশির ভাগ দোকান খোলা। গাড়ি চলাচল প্রায় স্বাভাবিক। কোথাও দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই। কয়েক জন বাসিন্দা আবার জানালেন, তাঁদের এলাকা যে কন্টেনমেন্ট জ়োনে, জানেনই না তাঁরা! কয়েকটি গলির সামনে ব্যারিকেড ছিল। এখন আর নেই। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আমরা তো ঠিকই আছি। কোথাও কিছু হয়নি।’’ একটি পোশাকের দোকানি রতনকুমার মিশ্র বলেন, ‘‘দু’মাস পরে দোকান খুললাম। আর কত দিন? তবে পুলিশ বন্ধ করতে বললে করে দেব।’’ সব দেখেশুনে রীতিমতো শঙ্কিত স্থানীয় এক বাসিন্দা দীপঙ্কর গুপ্ত। এ দিন ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মন্তব্য, ‘‘লকডাউন এখনও চলছে নাকি? দেখে মনে হচ্ছে?’’

আর একটি কন্টেনমেন্ট এলাকা জোড়াবাগানের মানিক ঘোষ ঘাট স্ট্রিটে সেলুন খুলেছে। সেলুনওয়ালা গোপাল মান্না বলেন, ‘‘সরকার তো অনুমতি দিয়েছে। কন্টেনমেন্ট জ়োনের জন্য আলাদা নিয়ম আছে কি না, জানি না।’’

দক্ষিণেও প্রায় একই চিত্র। দক্ষিণ কলকাতার ৪৭এ, হাজরা রোড কন্টেনমেন্ট জ়োন। কিছু দোকান বন্ধ থাকলেও অনেক দোকানই খোলা ছিল। স্থানীয় এক চায়ের দোকানি বলেন, ‘‘ঝড়ে দোকানটা শেষ করে দিয়েছে। গত দু’দিন যতটা পেরেছি গুছিয়েছি। খেয়ে তো বাঁচতে হবে। এত কন্টেনমেন্ট জ়োনের কথা ভেবে কী করব? যা হওয়ার হবে।’’ আর এক কন্টেনমেন্ট জ়োন ৯/১ পণ্ডিতিয়া রোড এবং সংলগ্ন বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বস্তিতে ঢোকার রাস্তায় ব্যারিকেড। তবে কিছু দোকান খোলা। কয়েক জন বাসিন্দা জানান, কন্টেনমেন্ট জ়োন কী তাঁদের জানা নেই। পুলিশ প্রথমে দোকান খুলতে বারণ করেছিল। কিন্তু এখন তাঁরা আবার খুলছেন।

পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, লকডাউন শিথিল হওয়া এবং আমপানের দাপট— এই দুইয়ের জেরে নজরদারিতে খামতি দেখা দিয়েছিল। তবে বুধবার থেকে লকডাউনের সব বিধি মেনে চলার জন্য বলা হয়েছে। লালবাজারের এক কর্তা জানান, কন্টেনমেন্ট জ়োনে যাতে লকডাউন-বিধি কঠোর ভাবে বলবৎ করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য সব থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

আরও পড়ুন: ধুয়ে ভেসে গিয়েছে কলেজ স্ট্রিট, তবু ‘বই মরে না’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy