Advertisement
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Dengue

গত বছরের মতো এ বারও ডেঙ্গির দাপট দক্ষিণে, ক্রমেই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, চিন্তায় পুরসভা

পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাঁচ নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন। এ বার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫।

—প্রতীকী চিত্র।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৪ ০৭:১৬
Share: Save:

গত দু’বছরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল দক্ষিণ কলকাতায়। এ বারও সেই দক্ষিণ কলকাতারই একাধিক বরো দুশ্চিন্তায় ফেলেছে কলকাতা পুরসভাকে। দক্ষিণের চারটি বরো এলাকায় ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত আক্রান্তের যে সংখ্যা ছিল, তার তুলনায় এ বার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, ডেঙ্গি শহরে ক্রমেই বাড়ছে। শুধু জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহেই ৩৮ জন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি, গত বছরের মতো এ বারও উত্তর ও মধ্য কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় ম্যালেরিয়ার দাপট বাড়ছে।

পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত বছর জানুয়ারি থেকে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাঁচ নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল তিন। এ বার সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। গত বছর ওই সময়ে নয় নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১২। এ বার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪। ১১ নম্বর বরোর ক্ষেত্রে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫। আবার গত বছর ওই সময়ে ১৪ ও ১৬ নম্বর বরো এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে নয় ও ছয়। এ বছর ওই দু’টি বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১২ ও ১৬। প্রসঙ্গত, গত দু’বছরে ১০ নম্বর বরো এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। পুর স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর এই সময়ের মধ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৯। এ বার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৪। ওই বরোর ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডে গত বছর এই সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য। এ বার আট জন আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে চার জন মারা গিয়েছিলেন। ৩৬, ৪৯, ৭৮, ৭৯, ৯৬, ১২৬ ও ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে গত বছরের শূন্য থেকে এক লাফে বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা।

পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শহরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এঁদের মধ্যে বেশির ভাগের ভাইরাল জ্বর হলেও লক্ষণ অনুযায়ী ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া, দু’টি পরীক্ষাই করানো হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম ডেঙ্গি নিয়ে ৮ অগস্ট কলকাতা পুরভবনে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। সেই বৈঠকে বিভিন্ন সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরাও থাকবেন। বিজেপির পুরপ্রতিনিধি সজল ঘোষের দাবি, ‘‘মেয়র গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে দাবি করছেন। মনে রাখতে হবে, সবে জুলাই চলছে। তাতেই কয়েকটি বরোয় আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের থেকে বেশি। প্রতি বছর জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে ডেঙ্গির দাপট বাড়তে থাকে। পুর প্রশাসনকে আগামী চার মাস আরও সতর্ক থাকতে হবে।’’

শনিবার এই প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘এ বার দেরিতে বর্ষা এসেছে। পরিস্থিতির উপরে আরও বেশি করে নজর রাখতে হবে। পুরসভার তরফে সচেতনতার প্রচারে জোর দেওয়া হবে।’’ দক্ষিণ কলকাতায় সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রসঙ্গে মেয়রের মন্তব্য, ‘‘পুরনো বাড়ি, ফাঁকা জমির কারণে ওই এলাকায় ডেঙ্গি বাড়ছে। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। মানুষ যত বেশি সচেতন হবে, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তত কমবে। সকলে সচেতন না হলে ডেঙ্গি রোখা মুশকিল।’’

এ দিকে, পুর স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, গত বছরের মতো এ বারও বড়বাজার, পোস্তা, শিয়ালদহ, ডালহৌসি, ধর্মতলা, পার্ক সার্কাস এলাকায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের কথায়, ‘‘ওই সমস্ত এলাকায় প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক থাকেন, যাঁরা মশারি ছাড়াই ঘুমোন। তাঁরা অনেকেই আবার ম্যালেরিয়া নির্মূলে ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করেন না। ফলে ম্যালেরিয়ার পরজীবী নিয়ে এঁরা বসবাস করায় অন্যের মধ্যে ম্যালেরিয়া ছড়ানোর আশঙ্কা বেড়ে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE