অ-প্রস্তুত: এখনও শুরুই হয়নি বৈধ বাজি বাজার। বরিবার, শহিদ মিনার ময়দানে। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
এক-একটি স্টলের মধ্যে ছাড় থাকার কথা ন’ফুট। সেই প্রাথমিক নির্দেশই না মানায় কোথাও পুলিশ আর দমকল গিয়ে স্টলের ছাউনি খুলিয়েছে। কোথাও আবার বৈদ্যুতিক সুরক্ষা মানার চেষ্টাই করা হয়নি বলে অভিযোগ। কোনও জায়গাতেই আসেনি জমি-মালিক, পুরসভা, দমকল বা পুলিশের ছাড়পত্র! ফলে উদ্বোধনের দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শহরের কোথাওই শুরু করা যায়নি পুলিশের উদ্যোগে হওয়া বৈধ বাজি বাজার। যা নিয়ে পুলিশের অভ্যন্তরেই আশঙ্কা, বৈধ বাজি বাজার সময়ে শুরু করতে না পারায় চোরাগোপ্তা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির আশঙ্কা এ বার বাড়বে।
সেই সঙ্গেই বাজির শব্দমাত্রাও আগের থেকে বাড়িয়ে ৯০ ডেসিবেলের পরিবর্তে ১২৫ ডেসিবেল করে দেওয়া হয়েছে। ফলে অন্যান্য বারের তুলনায় এ বার বাজির বিপদ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর সঙ্গেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কালীপুজোর রাতে ৮টা থেকে ১০টা— শুধু এই দু’ঘণ্টাই বাজি ফাটানোয়ছাড়পত্র থাকলেও সন্ধ্যা থেকেই বাজি ফাটা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকেই।
এর মধ্যে কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মা একটি নির্দেশিকা প্রকাশ করে জানিয়ে দিয়েছিলেন, চলতি মাসের ২৬ থেকে আগামী মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত শহরে বৈধ বাজি বাজার বসবে। চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে সমস্ত স্টল তৈরির কাজ শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আগামী মাসের ২ থেকে ৪ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে বাজি বাজারের স্টল খুলে জায়গা ফাঁকা করে দেওয়ার জন্য। এই নির্দেশিকাতেই বলে দেওয়া হয়েছে, ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় এবং অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকায় বড়বাজারে কোনও জায়গা থেকেই বাজি বিক্রি করা যাবে না। পুলিশি নজরদারিতে বাজি বিক্রি হবে শুধুমাত্র টালা, কালিকাপুর, বেহালা এবং ময়দানের শহিদ মিনার বাজি বাজারে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এই সব বাজি বাজারের কোনওটিই রবিবার পর্যন্ত শুরু হয়নি।
দক্ষিণ কলকাতায় বাজি বাজার বসছে বেহালায়, ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলের মাঠে। সেখানে এ বছর ২৪টি স্টল হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু এখনও সেখানে বাজি বিক্রি শুরু হয়নি। কারণ জানাতে গিয়ে বেহালা বাজি বাজারেরসম্পাদক অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মাঠের অবস্থা খুব খারাপ, জল জমে ছিল। কোনও মতে সমস্তটা তৈরি করে সোমবার থেকে বাজার শুরু করে দেওয়ার চেষ্টা হবে।’’ একই রকম দাবি, বড়বাজারফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ শান্তনু দত্তের। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বাজি বাজার শহিদ মিনার ময়দানে হয়। জমি পাওয়া নিয়ে প্রতিবারই একটা জটিলতা চলে। তবে সবই কাটিয়ে উঠে দ্রুত বাজার শুরু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে বৃষ্টির জন্য সমস্যা হয়েছে। আর একটি সমস্যা ছিল নিরি-র (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট) কিউআর কোড নিয়ে। ওরা ওদের অ্যাপ আর আপডেট করেনি। ফলে এ বার নিরি একটি তালিকা দেবে বলেছে, সেই বাজিই শুধু বিক্রি করা যাবে।’’
টালা বাজি বাজারের অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না যদিও বলছেন, ‘‘নিরি-র অ্যাপে স্ক্যান করে দেখে নিরি-র শংসাপত্র থাকলে তবেইসেই বাজি বিক্রি হওয়ার কথা। অ্যাপ আপডেট না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। তার চেয়েও বড় সমস্যা এ বার যথাযথ বাজির যোগান না থাকা। শিবকাশীর বাজি এ বার সে ভাবে আসেনি। গত বছর ধরপাকড় হওয়ায় বাইরের অনেক সংস্থাই এ বার বাংলায় বাজি পাঠাতে চাইছে না। আর একটা ভয় নকল বাজি। বাইরেরসংস্থা দেখছে, তাদের বাজি বাংলায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই নকল হয়ে যাচ্ছে!’’
কারা করছে? শুভঙ্কর স্পষ্ট উত্তর দেননি। পুলিশেরই একাংশের দাবি, নুঙ্গি, মহেশতলা, বজবজ এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় এই মুহূর্তে দেদার বাজি তৈরি চলছে। সেগুলি শহরের বাজারেও বিক্রি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। কালিকাপুর বাজি বাজারের উদ্যোক্তা শ্যামাপ্রসাদ মজুমদার বললেন, ‘‘এই জন্যই সতর্ক হয়ে শুধুমাত্র সবুজ বাজিইআমরা বিক্রির জন্য তুলছি।’’ কিন্তু তাতেও বিপদ এই বাজারেই স্টলের মধ্যে জায়গা ছেড়ে ছাউনি না হওয়ায়। শ্যামাপ্রসাদ বলেন, ‘‘পুলিশ বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ভুল শুধরে নিয়েছি। বাজির বিপদ মাথায় রেখেই এ বার সব করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy