—প্রতীকী চিত্র।
কোনওটায় আকর্ষণীয় মডেলের মুখের পাশে দেওয়া হয়েছে কিউআর কোড। ওই কোডেই নাকি গয়নায় ছাড়ের চাবিকাঠি। কোনওটায় আবার নামী গায়কের অনুষ্ঠানের খবর। সঙ্গে লেখা, টিকিট কাটতে হলে কিউআর কোড স্ক্যান করুন। সদ্য বাজারে আসা গাড়ি মোবাইলে চাক্ষুষ করার বার্তা দেওয়া বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং-ও প্রচুর। তাতেও সঙ্গে কিউআর কোড। সেটি স্ক্যান করলেই নাকি মোবাইলেই দেখে নেওয়া যাবে নতুন গাড়িটির সমস্ত তথ্য! কিন্তু সাবধান। পথে যেতে যেতে এমন হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন দেখে মোবাইল নিয়ে কোড স্ক্যান করলেই বিপদ। নিমেষে উধাও হয়ে যেতে পারে ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা। নয়তো রাতারাতি বেহাত হতে পারে ব্যক্তিগত তথ্য। মোবাইল ফোনের দখল নিতে পারে সাইবার প্রতারকেরা।
এমনই হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন নিয়ে চিন্তিত পুলিশ। লালবাজার সূত্রের খবর, গত দু’মাসে তাদের কাছেই এমন বিষয়ে অভিযোগ এসেছে কয়েকটি। রাজ্যের অন্যান্য পুলিশ কমিশনারেটের মধ্যে এমন বিজ্ঞাপনী-হোর্ডিং নিয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে বেশি ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে। এর পরেই রয়েছে বিধাননগর। জানা যাচ্ছে, অভিযোগকারীদের বড় অংশের দাবি, পথে যেতে যেতে রাস্তার ধারে লাগানো বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং দেখে মোবাইলে কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন তাঁরা। এর পরেই কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে আড়াই লক্ষ টাকা, আবার কারও খোয়া গিয়েছে পাঁচ লক্ষ টাকারও বেশি।
এমনও অভিযোগকারী রয়েছেন, যাঁর অজানতেই ঋণ চালু হয়ে গিয়েছে। ঋণের কিস্তি না মেটানো সংক্রান্ত ব্যাঙ্কের চিঠি পেয়ে অভিযোগকারী জানতে পেরেছেন যে, তাঁর নামে ঋণ আছে! তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তি একটি বাড়ির বিজ্ঞাপন দেখে কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন। তাতেই সেই বাড়ি কেনার জন্য নাকি তাঁর নামে ঋণের কাগজ জমা পড়ে গিয়েছে।
বাগুইআটির বাসিন্দা কলেজপড়ুয়া এক অভিযোগকারিণী পুলিশকে জানিয়েছেন, বাইপাসের ধারের একটি প্রসাধনী সামগ্রীর বিজ্ঞাপনী হোর্ডিং দেখে তিনি কিউআর কোড স্ক্যান করেছিলেন। পরে ফোনটি তাঁর অকেজো হয়ে যায়। তরুণীর কথায়, ‘‘কিছুই কাজ করা যাচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল, অন্য জায়গা থেকে আমার ফোনটা কেউ পরিচালনা করছে। এর পরে আমার সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট দু’টি হ্যাক হয়ে যায়।’’ ডায়মন্ড হারবার রোডের এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘হঠাৎ আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে পাঁচ দফায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা কেটে যায়। কিছুই না বুঝতে পেরে পুলিশে অভিযোগ জানাই। দিন কয়েক বাদে থানা থেকে ডেকে জানতে চাওয়া হয়, কোনও কিউআর কোড আমি স্ক্যান করেছিলাম কি না। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে আসার সময়ে একটি আসবাবপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে আমি স্ক্যান করেছিলাম বলে মনে পড়ে। পুলিশ জানায়, সেটা থেকেই হয়েছে।’’
কলকাতা পুলিশ জানাচ্ছে, এমন প্রতারণার বিষয়ে সতর্ক করতে প্রচারে নামার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্তা বলেন, ‘‘বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলিকে ডেকে কথা বলা হচ্ছে। বড় বিজ্ঞাপন এজেন্সিগুলির তালিকা তৈরি হচ্ছে। গত কয়েক মাসে কোন কোন সংস্থা তাদের সঙ্গে বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করেছে, তা দেখা হবে। প্রতারণার এই ধরন একেবারে অভিনব।’’
সাইবার গবেষক বিতনু দত্ত অবশ্য বললেন, ‘‘কিউআর কোড স্ক্যান করা মানেই সব কিছু বেহাত হয়ে গেল বা প্রতারিত হলাম, তেমনটা কিন্তু নয়। প্রতারকেরা কিউআর কোডের মধ্যে একটি লিঙ্ক দিয়ে রাখে। কিউআর কোড স্ক্যান করে যদি মনে হয় যে কোনও সন্দেহজনক লিঙ্ক খুলেছে, তা হলে আর এগোনো উচিত নয়। মোদ্দা কথা, যে কোনও কোড স্ক্যান করার আগে সতর্ক হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy