আকাশ দাস
গলায় ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার চার ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল এক নাবালকের। এ বার ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের করল মৃতের পরিবার। গত বৃহস্পতিবার দায়ের হওয়া ওই অভিযোগে হাসপাতালের কর্তব্যে গাফিলতির পাশাপাশি এ-ও দাবি করা হয়েছে, জরুরি সময়ে বার বার চেয়েও একটি অ্যাম্বুল্যান্স দেয়নি ওই হাসপাতাল। ফলে অনেকটা সময় কার্যত বিনা চিকিৎসায় কাটাতে হয়েছে ওই নাবালককে!
বছর দশেকের ওই মৃতের নাম আকাশ দাস। তার পরিবার জানায়, নারকেলবাগান এলাকার একটি স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র আকাশ গত ৪ অগস্ট দুপুর থেকে গলায় হাল্কা ব্যথা অনুভব করে। তার ছ’বছরের বোন কুসুম এবং মা মমতা দাস তালুকদারেরও একই রকম গলা ব্যথা হয়।
পরদিনই আকাশ এবং তার বোনকে স্থানীয় শিশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ওই চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ খেয়েও রাতে ঘুমোতে পারেনি আকাশ। সে মাকে বলেছিল, “গলায় মনে হচ্ছে কিছু আটকে রয়েছে।” জাহাজে কর্মরত আকাশের বাবা সুনীত দাস সেই সময়ে দেশের বাইরে ছিলেন। আগের রাতের পরে ৬ অগস্ট সকালেও বমি হওয়ায় ঝুঁকি নেননি মমতাদেবী। সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ তাকে নিয়ে যান নাগেরবাজার আইএলএস হাসপাতালে। সেখানেই দুপুর ১টা ১৫ মিনিট নাগাদ আকাশকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আরও পডুন: ট্রেন বাড়লেও সময় বাড়ছে না মেট্রোয়
আরও পডুন: জেলে ৩৯ বছর, পঁচাত্তরের বৃদ্ধ এখনও ‘বিচারাধীন’
মমতাদেবী বলেন, “আইএলএস থেকে প্রথমে বলা হয়েছিল, তেমন কিছু ব্যাপার নয়। কিন্তু ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা হবে। তেমন কিছু না হওয়া সত্ত্বেও কেন ভর্তি নেওয়া হচ্ছে জানতে চেয়েছিলাম। ওঁরা কিছুই জানাননি।”
মমতাদেবী জানান, এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তাঁকে জানানো হয়, আকাশের অবস্থা খারাপ। তাঁকে দ্রুত পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউ) স্থানান্তরিত করতে হবে। কিন্তু আইএলএসে পিআইসিইউ নেই। মমতাদেবী বলেন, “যদি পিআইসিইউ না-ই থাকে তা হলে প্রথমেই জানানো হল না কেন? কেন বলা হল, তেমন কোনও সমস্যা নয়?” আকাশের পরিবারের অভিযোগ, সেই সময়ে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য হাসপাতালের এক ডেস্ক থেকে অন্য ডেস্কে ছুটে বেড়াতে হয়েছিল তাদের। মমতাদেবীর কথায়, “হাতে-পায়ে ধরেও অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়নি। কোন সংস্থায় ফোন করলে সেটা পাব, তা বলে দিয়েও কেউ সাহায্য করেননি। এর কিছু পরেই তো বলে দেওয়া হল যে ছেলে আর নেই!”
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনেই জাহাজ থেকে নেমে বিশেষ বিমানে দেশে ফেরেন আকাশের বাবা সুনীতবাবু। ছেলের মৃত্যুর কারণ জানতে তার পর থেকেই তিনি ছুটে বেড়াচ্ছেন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত নথি চেয়ে পাঠানোর
পাশাপাশি তিনি এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য কমিশনে। ছেলের মৃত্যুর পরেই স্বামীর নির্দেশে দমদম থানায় হাসপাতালের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছিলেন মমতাদেবী। তার ভিত্তিতে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আকাশের ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা হয়। কিন্তু সুনীতবাবুর অভিযোগ, “তিন মাস কেটে গেলেও ময়না-তদন্তের রিপোর্ট আসেনি। পুলিশ বলছে, ছ’মাসও লাগতে পারে, আবার দু’বছরও!” দমদম থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক বললেন, “উৎসবের মরসুম চলছে, তাই হয়তো দেরি হচ্ছে। তা ছাড়া সময় তো একটু লাগেই।” আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় যদিও বলছেন, “কখনওই এত দিন লাগার কথা নয়। খুব বেশি হলে চার মাসেই রিপোর্ট চলে আসার কথা। সব ক্ষেত্রেই গাফিলতি চলছে।”
আইএলএস হাসপাতাল গ্রুপের শীর্ষ কর্তা দেবাশিস ধরের দাবি, “চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টি এখন কমিশনের অধীন। তাই মন্তব্য করব না। তবে ওই পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলছি, পিআইসিইউ না থাকলেও আমাদের তরফে যতটা পারা যায় চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।” অ্যাম্বুল্যান্স না মেলার প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, “নাগেরবাজার আইএলএসে একটিই অ্যাম্বুল্যান্স আছে। ঘটনার সময়ে ওই অ্যাম্বুল্যান্সটি হয়তো ব্যস্ত ছিল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy