ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। —ফাইল চিত্র।
নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে মারধরের। এমনকি, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি যে চিকিৎসকের অধীনে যুবক ভর্তি ছিলেন, তাঁকে না জানিয়েই ওষুধ বদলে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে লিখিত ভাবে সমস্তটা জানানোর পরে তিন দিনেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও থানা কোনও পদক্ষেপই করেনি বলে অভিযোগ। উল্টে আক্রান্তের পরিবারের দাবি, থানা থেকে তদন্ত করার জন্য যে তদন্তকারী অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি বলছেন, ‘‘হাতে সময় নেই। সময় হলে যাব।’’
ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের নাগেরবাজার থানার এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আক্রান্তের পরিবারের দাবি, তদন্ত এগোলো কি না, তা জানতে থানায় গেলে বলা হচ্ছে তদন্তকারী অফিসারকে কয়েক দিন ধরে দেখা যাচ্ছে না। তাঁকে দেখা গেলেই অভিযোগপত্র তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে। আর তদন্তকারী অফিসারকে ফোন করা হলে তিনি বলছেন, ‘‘হাতে সময় নেই, সময় হলে যাব।’’ যা নিয়ে অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘অতীতে একাধিক ঘটনায় যেখানে নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ সামনে এসেছে, সেখানে এমন বিষয় নিয়ে পুলিশ প্রথম থেকেই কেন তৎপর হয় না?’’ আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘চাইলেই পুলিশ মামলা করতে পারে। সিআরপিসি-তে ‘কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড’ বলে কিছু হয় না। অথচ, পুলিশ দায় এড়াতে অভিযোগপত্রের উপর এই স্ট্যাম্প মেরেই ছেড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে।’’
ঘটনার সূত্রপাত গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। দমদম পার্ক এলাকার ‘প্রতিশ্রুতি ফাউন্ডেশন’ নামে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এক আবাসিককে মারধরের অভিযোগ ওঠে। ওই আবাসিকের চোখের নীচে কালশিটে, বাঁ হাতে রক্ত জমাট বাঁধা এবং ডান হাতের আঙুল ভেঙে গিয়েছে দেখে পুলিশের দ্বারস্থ হয় পরিবার। নেশামুক্তি কেন্দ্রে এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে ওই যুবককে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ যে, তাঁর হারপিস হয়ে গিয়েছে। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই অভিযোগকারী পরিবার বাগুইআটি থানায় যায়। কিন্তু ঘটনাস্থল লেক টাউন থানার অন্তর্গত বলে দাবি করে সেখানে যেতে বলেন পুলিশকর্মীরা। এর পরে ১ মার্চ লেক টাউন থানায় গেলে সেখান থেকে গাড়িতে করে অভিযোগকারীদের নিয়ে নেশামুক্তি কেন্দ্রের দিকে যায় পুলিশ। আক্রান্তের ভাইয়ের দাবি, ‘‘কিন্তু কেন্দ্রের গলির মধ্যে প্রবেশের আগে পুলিশ গাড়ি থামিয়ে বলে, আর এগোনো যাবে না। ওই গলি নাকি নাগেরবাজার থানার মধ্যে পড়ে। পুলিশের গাড়ি আবার লেক টাউন থানায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে। সেখান থেকে ওই রাতেই আমরা নাগেরবাজার থানায় যাই। কিন্তু এফআইআর করার বদলে আমাদের অভিযোগ লিখে জমা করে দিয়ে যেতে বলা হয়। উপরে কনটেন্ট নট ভেরিফায়েড স্ট্যাম্প মেরে একটা কাগজ দিয়ে দেওয়া হয়।’’
যুবকের আরও দাবি, ‘‘পরের দিন এফআইআর হল কি না, খোঁজ করতে গেলে বলা হয়, সুকুমার ভৌমিক নামে এক সাব-ইনস্পেক্টরকে বিষয়টা দেওয়া হয়েছে। তিনি অভিযোগপত্র হাতে নিয়ে দেখে বিচার করে দেখবেন, এফআইআর হবে কি না। সাব-ইনস্পেক্টরের ফোন নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন আবার গেলে থানা থেকে বলা হয়, ওই অফিসারকে নাকি দেখাই যাচ্ছে না। দেখা হলেই তাঁকে আমাদের অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। থানা থেকে দেওয়া সাব-ইনস্পেক্টরের নম্বরে ফোন করলে তিনি বলেন, হাতে সময় নেই।’’ আর কত দিন ঘুরতে হবে? প্রশ্ন ওই পরিবারের।
মঙ্গলবার ফোন করা হলে সুকুমার ভৌমিক নামে ওই পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এমন কোনও অভিযোগপত্রের কথা তো আমার কানে আসেনি। খোঁজ করে দেখছি।’’ কিন্তু তিন দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ করা হয়নি? থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তরুণ দেবনাথ সুকুমারের নাম করে প্রথমে জানান, তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তিনি দেখবেন। এর পরে তরুণ দাবি করেন, ‘‘সুকুমার খোঁজ নিয়েছেন।’’ কিন্তু ওই পুলিশকর্মী যে অন্য কথা বলছেন! স্পষ্ট উত্তর দেননি তরুণ। খোঁজ করে কী পাওয়া গেল, উত্তর মেলেনি সেই প্রশ্নেরও। উল্টে তরুণ বলেছেন, ‘‘আমি বলছি তো খোঁজ করেছে। সেটাই শেষ কথা।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিচ্ছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy