Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Fake Medicines

 হাসপাতালে ‘জাল’ ওষুধ সরবরাহ করেও পার সংস্থার! 

এনআরএসে যে ব্যাচের ইনজেকশন জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেই ইনজেকশন তো একাধিক সরকারি হাসপাতাল কিনেছে। সেগুলি চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে আশঙ্কা, জাল ইনজেকশন আরও শিশুদের দেওয়া হয়েছে কি?

—প্রতীকী চিত্র।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০৭:১৪
Share: Save:

খাস সরকারি হাসপাতালে ঢুকে পড়েছে জাল ওষুধ! আর তা জানার পরেও ওই ওষুধ সরবরাহে যুক্ত সংস্থার (ডিস্ট্রিবিউটর) বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি, তাদের থেকেই ওষুধ কেনা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে রাজ্যের এক সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

সদ্যোজাত যে সব শিশু তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগে, তাদের প্রাণ রক্ষায় দামি একটি ইনজেকশন সরকারি হাসপাতালে ব্যবহৃত হয়। একটি নামী বহুজাতিক ওষুধ সংস্থার ওই ইনজেকশনের প্রতিটি ভায়ালের দাম বাজারে প্রায় ২১০০ টাকা। ‘কোটেশন’ করে সরকারি ক্ষেত্রে তা প্রায় ৯৭০ টাকায় কেনা হয়। ব্যবহার করা হয় এসএনসিইউ (সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট)-তে।

নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সরবরাহ করা ওই ইনজেকশনগুলি সম্পূর্ণ জাল বলে রিপোর্ট এসেছে গত ২৪ এপ্রিল। অভিযোগ, যে সংস্থা সেগুলি সরবরাহ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের থেকেই ফের শিশুদের ইনজেকশন কিনেছে এনআরএস। অভিযুক্ত ওই সংস্থা রাজ্যের গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে শুরু করে মেডিক্যাল কলেজ স্তর পর্যন্ত অসংখ্য হাসপাতালে এখনও ওষুধ সরবরাহ করে চলেছে।

যে প্রশ্নগুলি উঠেছে, সেগুলি হল, প্রথমত, এনআরএসে যে ব্যাচের ইনজেকশন জাল বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেই ইনজেকশন তো একাধিক সরকারি হাসপাতাল কিনেছে। সেগুলি চিহ্নিত করা হয়নি। ফলে আশঙ্কা, জাল ইনজেকশন আরও শিশুদের দেওয়া হয়েছে কি?

দ্বিতীয়ত, যে সংস্থা একটি জাল ওষুধ সরবরাহ করতে পারে, সে যে অন্য বিভিন্ন সংস্থার নামে জাল ওষুধ স্বাস্থ্য দফতরে দিচ্ছে না, সেই নিশ্চয়তা কোথায়? কেন স্বাস্থ্য দফতর এ ব্যাপারে কোনও হস্তক্ষেপ করেনি?

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ডিসেম্বরে বেলেঘাটার ওষুধ সরবরাহকারী ওই সংস্থার থেকে এনআরএস লোকাল কোটেশন করে ৫০ ভায়াল পালমোজ়িল ইনজেকশন (১২.৫ এমএল) কেনে। যার মেয়াদ ফুরোনোর তারিখ লেখা ছিল, ৩০ মে, ২০২৫। এর মধ্যে ছ’টি ইনজেকশন অসুস্থ শিশুদের দেওয়াও হয়।

কিন্তু, গত মাসে ইনজেকশনে ছত্রাক দেখে নীলরতনের এসএনসিইউ-এর নার্সদের সন্দেহ হওয়ায় তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান। স্বাস্থ্য দফতরে খবর যায়। ওই ইনজেকশনের উৎপাদক নামী বহুজাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের ডেকে বিষয়টি জানানো হয়। তাঁরা ইনজেকশনের নমুনা পরীক্ষার জন্য নিয়ে যান।

তার পরেই স্বাস্থ্য দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর (সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স) প্রশান্ত বিশ্বাস নীলরতনে এসে বৈঠক করেন। অভিযুক্ত ডিস্ট্রিবিউটর সংস্থার বিরুদ্ধে নীলরতন কর্তৃপক্ষকে থানায় এফআইআর করতে বলেন। তাদের থেকে ওষুধ নেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেন ও ড্রাগ কন্ট্রোলে জানাতে বলেন। পাশাপাশি, তিনি স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের অবহিত করার নির্দেশ দেন, যাতে যেখানে যেখানে ওই সংস্থার ওষুধ কেনা হয়েছে, সেখানে ব্যবহার আপাতত বন্ধ করা যায়। অভিযোগ, নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সে সব কিছুই করেননি, উপরন্তু ওই সংস্থার থেকেই ১৬ এপ্রিল সদ্যোজাতদের শ্বাসকষ্টের ইনজেকশন কিনেছেন ৪৪ ভায়াল। তবে, এ বার অন্য উৎপাদক সংস্থার ইনজেকশন কেনা হয়।

ইতিমধ্যে আগের নামী বহুজাতিক ওষুধ নির্মাতা সংস্থা ২৪ এপ্রিল তাদের রিপোর্টে লিখিত ভাবে‌ স্বাস্থ্য দফতরকে জানায়, নীলরতন থেকে পাওয়া ইনজেকশন জাল। তাদের সংস্থার ব্যাচ নম্বর এবং প্যাকেট নকল করে জাল ওষুধ তৈরি করে সরকারি ক্ষেত্রে সরবরাহ করা হয়েছে। আশ্চর্যজনক ভাবে, তার পরেও প্রায় এক মাস পার হতে চলেছে। অভিযুক্ত ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থার থেকে ওষুধ নেওয়া বন্ধ করেনি সরকারি হাসপাতাল। এবং তাদের নামে কোথাও অভিযোগও দায়ের করেনি।

প্রশান্ত বিশ্বাস বলেন, ‘‘এনআরএসে সবাইকে নিয়ে বৈঠক করে ডিস্ট্রিবিউটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বলেছিলাম। তাদের থেকে ওষুধ নেওয়া স্থগিত রাখতেও বলেছিলাম।’’ অথচ, নীলরতনের সুপার ইন্দিরা দে পাল দাবি করেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্তা প্রশান্ত বিশ্বাস নীলরতনে কোনও বৈঠক করেননি। আমাদের কোনও নির্দেশও দেননি। ওই ইনজেকশন যে জাল, এ ব্যাপারে কোনও রিপোর্টও আমরা পাইনি।’’

অভিযুক্ত সংস্থার তরফে রাজদীপ সাহার বক্তব্য, ‘‘আমরা তো অন্য বড় ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে নামী সংস্থার ওষুধ কিনে অসংখ্য সরকারি হাসপাতালে বিক্রি করি। দোকানও আছে আমাদের। বড় ডিস্ট্রিবিউটরেরা যদি জাল ওষুধ দেন, তা হলে আমাদের কী করণীয়? আমরা কী করে বুঝব?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Injection NRS Investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy