Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Chhath Puja

হাসপাতালের গেটও বাদ নেই! ছটে রাতভর দেদার শব্দতাণ্ডব

শুক্রবার ছটপুজোর ভোরে কলকাতা শহর ঘুরে দেখা গেল, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সর্বত্রই চলছে এমন নিয়মভঙ্গের বেপরোয়া উৎসব যাপন।

ছট পুজোর সকালে আনন্দপুর থানায় এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাছেই চলছে বাজি ফাটানো।

ছট পুজোর সকালে আনন্দপুর থানায় এলাকায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাছেই চলছে বাজি ফাটানো। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৫০
Share: Save:

বোমায় পর পর আগুন ধরিয়ে যেমন খুশি ছুড়ে দিচ্ছে কমবয়সিদের একটা দল। রীতিমতো চার দিক কাঁপিয়ে ফাটছে সে সব! আনন্দপুরের যেখানে ঘটনাটা ঘটছে, সেখানেই রয়েছে একাধিক হাসপাতাল। ট্র্যাফিক পুলিশের লাগানো বোর্ড বলছে, সেটা ‘নো হর্ন জ়োন’! অর্থাৎ, নিঃশব্দ এলাকা। হর্ন বাজাতে বারণ করার চিহ্ন আঁকা জায়গায় জায়গায়! কিন্তু সেখানেই এমন শব্দতাণ্ডব চললেও দেখা নেই কোনও পুলিশকর্মীর। এক জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে শুধু থানা থেকে মোতায়েন করে রাখা হয়েছে। তিনি দেদার বাজির শব্দের মধ্যেই হেডফোন গুঁজে মোবাইল দেখছেন। প্রশ্ন করায় বললেন, ‘‘কাল রাত থেকে চলছে। কাকে আটকাব? থানার বাবুরা কিছু না বললে আমাদের কি সেই ক্ষমতা আছে?’’ একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মী বললেন, ‘‘প্রতি বার থানায় বলেও লাভ হয় না। হাসপাতালের গেটের সামনেও বোমা ফাটিয়ে উৎসব পালন চলে। এটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’

শুক্রবার ছটপুজোর ভোরে কলকাতা শহর ঘুরে দেখা গেল, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সর্বত্রই চলছে এমন নিয়মভঙ্গের বেপরোয়া উৎসব যাপন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার থেকেই পাড়ায় পাড়ায় সাউন্ড বক্স বাজানো শুরু হয়ে গিয়েছিল। আদালতের নির্দেশ উড়িয়ে তার মধ্যেই চলেছে দেদার নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো। বৃহস্পতিবার রাত থেকে এই বেপরোয়া ভাব আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ। রাত যত গভীর হয়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে সাউন্ড বক্স আর বাজির তাণ্ডব। কসবা এলাকার এমনই একটি পাড়ার বাসিন্দার দাবি, ‘‘কালীপুজো আর তার পরের দিন যা হয়েছে, সেটাকেও কোথাও যেন ছাপিয়ে গিয়েছে ছটপুজো। সারা দিন মাইক বেজেছে। রাতের দিকে ঘুমাতে গিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়তে হয়েছে। একের পর এক বাজির শব্দে তখন কান পাতাই দায়। থানায় ফোন করেছিলাম, একটা দিন মানিয়ে নিতে বলা হয়েছে।’’

বাইপাসের পঞ্চান্নগ্রাম লাগোয়া এলাকার এক বাসিন্দার আবার দাবি, ‘‘বাড়ির গেটের সামনে বোমাবসিয়ে ফাটাতে দেখেছি। দরজা-জানলা বন্ধ করে দিয়েও আওয়াজ এড়ানো যায়নি। বাড়িতে আমার অসুস্থ বাবা রয়েছেন। পোষ্য রয়েছে। কী করে যে সময়টা কাটিয়েছি বলে বোঝাতে পারব না।’’ কাশীপুর এলাকায় আবার সাউন্ড বক্সের শব্দতাণ্ডবের প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। নিমাই সর্দার নামে অভিযোগকারী দাবি, ‘‘মধ্যরাতের পরে বক্সের আওয়াজ কমানোর অনুরোধ করেছিলাম। তাতে বাড়ি এসে হামলা চালানো হয়েছে। পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি, কিন্তু সুরাহা মেলেনি।’’

এ দিন ভোরে বেরিয়ে দেখা গেল, পুলিশ-প্রশাসন নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মুড়ে রেখেছে শহরের দুই সরোবর। কাঁকুড়গাছি হয়ে সুভাষ সরোবরের দিকে যাওয়ার পথে চোখে পড়ল, তৈরি করা হয়েছে একের পর এক কৃত্রিম জলাশয়। সেখানেই চলছে স্থানীয়দের ছট উৎসব পালন। তার মধ্যেই রাস্তায় বাজি বসিয়ে তাতে আগুন ধরাতে দেখা গেল কয়েক জনকে। একই চিত্র একেবারে সুভাষ সরোবরের গেটের সামনে। সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘বুধবার রাত ৮টা থেকে শুক্রবার, মানে এ দিন বেলা ১২টা পর্যন্ত সরোবর বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। সরোবর পাহারা দেওয়া কাজ আমাদের। বাইরে কোথায় কী হচ্ছে, বলতে পারব না।’’ একই চিত্র দক্ষিণ কলকাতায় রবীন্দ্র সরোবর ঘিরেও। সেখানে সব ক'টি গেটের বাইরে পুলিশি প্রহরা। রয়েছেনপুলিশের পদস্থ অফিসারেরা। ছটপুজোর গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অন্য রাস্তা দিয়ে। গার্ডরেলে ঘিরে রাখা হয়েছে সরোবরে প্রবেশের রাস্তা। সরোবরের লোহার গ্রিলের ফাঁকে যেখানে যত খোলা জায়গা ছিল, সমস্তটাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে টিন বসিয়ে। কর্তব্যরত লেক থানার এক অফিসার বললেন, ‘‘এখন মানুষ জানেন যে আদালতের নির্দেশ রয়েছে। সরোবরে তাই আর কেউ ঝামেলা করতে আসেন না। দূষণের সমস্যাও হয় না।’’

কিন্তু আদালতের নির্দেশ তো বাজি ফাটানো নিয়েও রয়েছে। ছটপুজোর সকালে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত শুধু দু’ঘণ্টা সবুজ বাজি ফাটানোরছাড় রয়েছে। কিন্তু সেই নিয়ম মানা হচ্ছে কই? প্রশ্ন রয়েছে গঙ্গাদূষণ নিয়েও। পরিবেশকর্মীদের দাবি, সরোবর রক্ষা করা হলেও গঙ্গাদূষণ রোধ করতে কোনও সক্রিয় ভূমিকা নেই প্রশাসনের। ছটেরউৎসব পালনের নামে দেদার গঙ্গাদূষণ আর কত দিন চলবে, সেই প্রশ্নও রয়েছে তাঁদের। প্রশাসনিক স্তর থেকে এর উত্তর মেলেনি। লালবাজারের এক পুলিশকর্তা শুধু বলেন, ‘‘ছটপুজোর সকালেও দেদার ধরপাকড় হয়েছে। নিষিদ্ধ বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কড়া হাতেই সবটা দেখা হয়েছে।’’ যদিও এ দিন শহর ঘুরে বাস্তব অভিজ্ঞতা অন্য কথাই বলছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Hospital Crackers Fire Crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE