প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সব স্কুলে নতুন ক্লাসে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযোগ, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে ছাত্র ভর্তি করার কথা থাকলেও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার কিছু স্কুল ভর্তি বাবদ বেশি টাকা নেওয়ার নোটিস দিয়েছে। সেই সব স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সরকার পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে আনুষঙ্গিক বেশ কিছু খরচ চালাতে হয় ফি-এর টাকায়। স্কুলে শিক্ষার মান ঠিক রাখতে তাই তাঁরা একপ্রকার বাধ্য হচ্ছেন অতিরিক্ত ফি নিতে।
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর বিনা ব্যয়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। ২০১১ সালে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, স্কুলগুলি ডেভেলপমেন্ট ফি বাবদ সর্বাধিক ২৪০ টাকা নিতে পারবে। কেউ যদি সেই টাকাও দিতে অক্ষম হন, তা হলে আবেদনের পরে পুরো ফি মকুব করা হবে। এই নিয়ম বলবৎ থাকলেও বেশ কিছু সরকারি পোষিত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে বেশি ফি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকেরা।
রাজারহাট এলাকার কয়েক জন অভিভাবক জানাচ্ছেন, তাঁদের এলাকার একটি স্কুলে ভর্তি বাবদ ৯০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। লালু বিশ্বাস নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘‘আমি জোগাড়ের কাজ করি। ৯০০ টাকা দিয়ে মেয়েকে কী ভাবে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি করাব? এমনিতেই এই সময়ে কাজকর্ম খুব কমে গিয়েছে। স্কুলকে অনুরোধ করব ফি কমাতে।’’ রাজারহাট সংলগ্ন বিষ্ণুপুর এলাকার এক অভিভাবক রফিকুল আলম জানান, তাঁর মেয়েকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করাতে হবে, তবে ৯০০ টাকা দিতে তিনি অক্ষম।
যদিও এই সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ছাত্রপিছু বছরে মাত্র ২৪০ টাকা দিয়ে সারা বছর স্কুল চালানো কষ্টকর। রাজারহাটের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা সরকার বলেন, “আমরা ভর্তির সময়ে ৯০০ টাকা নিচ্ছি। এই সিদ্ধান্ত পরিচালন সমিতির সঙ্গে কথা বলেই নেওয়া হয়েছে। স্কুলে রক্ষী ও সাফাইকর্মীর বেতন, আংশিক সময়ের এবং কম্পিউটার শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারি সাহায্য মেলে না। পড়ুয়াদের ফি থেকেই ওই টাকা দিতে হয়। তবে কেউ চাইলে অতিরিক্ত ফি মকুব হতে পারে।”
মধ্যমগ্রামের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ ঘোষ জানান, সরকারি নিয়ম মেনে ২৪০ টাকাই নিচ্ছেন তাঁরা। তবে ১৩০০ টাকা করে পড়ুয়াদের থেকে সাহায্য চাইছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে সব বিষয়ের শিক্ষক নেই। আংশিক সময়ের শিক্ষক রয়েছেন ১৯ জন। তাঁদের ছাড়া স্কুল চালানো খুব কঠিন। ওঁদের বেতনের জন্যই বেশি নিতে হচ্ছে। তবে কেউ আবেদন করলে অতিরিক্ত ফি মকুব করা হয়। এমনকি, ২৪০ টাকা দিতে অসুবিধা হলে, তা-ও মকুব করা হতে পারে।’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উত্তর কলকাতার একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের এক শিক্ষক জানান, পড়ুয়ারা মিড-ডে মিল, স্কুলের পোশাক-জুতো, ছাত্রীরা সাইকেল পায় বিনামূল্যে। তাই সুষ্ঠু পঠনপাঠনের জন্য স্কুলের পাশে দাঁড়াতে অভিভাবকদেরও এগিয়ে আসা দরকার বলে মত তাঁর।
আরও পড়ুন: অভিষেকের গড় থেকে পুলিশকে হুঁশিয়ারি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের
তবে অতিরিক্ত ফি নেওয়া নিয়ে সরব হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনগুলিও। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেড মিস্ট্রেসেস-এর সাদারণ সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, “নানা স্কুল দোকানের মতো বিল দিয়ে বা না দিয়ে নানা খাতে ছাত্রছাত্রীদের থেকে টাকা তোলে। শিক্ষার অধিকার আইনকে এ ভাবে লঙ্ঘন করছে যে সব স্কুল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নবকুমার কর্মকার বলেন, “কলকাতার বেশ কিছু স্কুল ২৪০ টাকার বেশি ফি নিচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। এই অতিমারির মধ্যে অনেকেরই তা দেওয়ার ক্ষমতা নেই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা দফতরে চিঠি লিখেছি।”
আরও পড়ুন: বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফার পরই শুভেন্দু সহায়তা কেন্দ্রে বিজেপির পতাকা!
শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই অতিমারির পরিস্থিতিতে স্কুলগুলিকে মানবিক হতে বলা হয়েছে। ২৪০ টাকা ফি-ও পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে নিতে বলা হচ্ছে। তবে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy