Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দাদের আতঙ্কেই টাকার বৃষ্টি বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে

দুপুরে এমন সময়ে ওই টাকা ফেলা হয়, যখন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা, ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)-এর তিন অফিসার ওই বাড়ির ছ’তলায় বসে। বাইরে যে টাকার ‘বৃষ্টি’ হচ্ছে, তা তাঁরা জানতেও পারেননি।

বুধবার এ ভাবেই টাকা পড়ছিল বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের ওই বাড়ি থেকে। ফাইল চিত্র

বুধবার এ ভাবেই টাকা পড়ছিল বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের ওই বাড়ি থেকে। ফাইল চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০০
Share: Save:

কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা হানা দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করার কোনও উদ্দেশ্য তাঁদের ছিল না। অথচ, সেই অফিসারদের ভয়েই বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের একটি বহুতলের ছ’তলার অফিস থেকে বুধবার গোছা গোছা টাকা ফেলা হয়েছিল নীচে। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে যায় চার দিকে।

দুপুরে এমন সময়ে ওই টাকা ফেলা হয়, যখন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের গোয়েন্দারা, ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)-এর তিন অফিসার ওই বাড়ির ছ’তলায় বসে। বাইরে যে টাকার ‘বৃষ্টি’ হচ্ছে, তা তাঁরা জানতেও পারেননি। বাইরে থেকে যাঁরা মজা দেখছিলেন, তাঁদেরই এক জন ডিআরআই দফতরকে ফোন করে বিষয়টি জানান।

ইতিমধ্যে টিভির পর্দাতেও টাকার বৃষ্টি দেখানো শুরু হয়ে গিয়েছে। ডিআরআই সূত্রের খবর, জাতীয় কয়েকটি চ্যানেলেও সেই খবর সম্প্রচারিত হতে শুরু করে। খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। দিল্লিতে বসে ডিআরআই-এর কর্তা-ব্যক্তিরা বিষয়টি জানতে পারেন। উপর থেকে নির্দেশ আসে কলকাতায়। আরও চার অফিসার ছোটেন বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটে। সারা সন্ধ্যা তল্লাশি চালিয়ে সেই অফিস থেকে সাত-আট লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করা হয়। গভীর রাত পর্যন্ত সেই রিপোর্ট তৈরি করে পাঠানো হয় দিল্লিতে। তবে লুকিয়ে মাটিতে ফেলে দেওয়া টাকা কোথায় গেল, সে বিষয়ে ডিআরআই কিছু জানে না বলেই দাবি করা হয়েছে।

কেন ফেলা হল টাকা?

গোয়েন্দাদের অনুমান, ডিআরআই-এর হানায় ভয় পেয়ে গিয়েই আতঙ্কে ওই টাকা উপর থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে। মনে করা হয়েছিল, ওই অফিসারেরা নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করতেই গিয়েছেন। ওই বাড়ির ছ’তলায় রয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থার দফতর। ডিআরআই সূত্রের খবর, ২০১৭ সালে ওই সংস্থাটি প্রচুর জামাকাপড় বিদেশে রফতানি করে। অথচ, এরা নিয়মিত ভাবে জামাকাপড় আমদানি-রফতানির সঙ্গে যুক্ত নয়। রফতানি করলে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু করের ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায়। অভিযোগ, এই ধরনের কর ছাড়ের সুযোগ পেতেই অনেক ভুঁইফোড় সংস্থা আচমকাই খাতায়-কলমে রফতানি দেখায়। অথচ, আসলে তারা তা করে না।

রফতানি সংক্রান্ত কাগজপত্র খতিয়ে দেখতেই ডিআরআই-এর তিন অফিসার ওই অফিসে গিয়েছিলেন। ডিআরআই সূত্রের খবর, ‘বিভিন্ন’ উপায়ে বাজার থেকে নগদ টাকা রোজগার করে সংস্থাটি। তাদের কর্তা-ব্যক্তিদের ডিআরআই ও তাদের কাজকর্ম সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল না। তাই কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতরের তিন গোয়েন্দাকে দেখে তাঁরা ঘাবড়ে যান। জানা গিয়েছে, ওই অফিসের যিনি ডিরেক্টর, তাঁর ঘর লাগোয়া একটি শয়নকক্ষ রয়েছে। উচ্চপদস্থ এক কর্তার ইশারায় সেই শয়নকক্ষেরই সংলগ্ন শৌচাগার থেকে এক সাধারণ কর্মী প্রায় চার লক্ষ টাকার নোট নীচে ফেলে দেন।

ডিআরআই-এর কর্তাদের কথায়, ‘‘ওই টাকা না ফেললে আমরা তা বাজেয়াপ্ত করতাম না। আমরা শুধু কিছু নথিপত্র নিতে গিয়েছিলাম। ওই টাকা ফেলা এবং তার জন্য যে হইচই হল, সেই কারণেই আমরা বাধ্য হয়ে সাত-আট লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে এলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Money Shower Bentinck Street DRI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy