সরব: পুরুষদের অধিকার আদায়ের দাবিতে মিছিল। সোমবার, ধর্মতলায়। নিজস্ব চিত্র
এ কি পুরুষের ‘মিটু’? কেউ কেউ হাল্কা চালে বলছেন, ‘মি-থ্রি’ও বলা যেতে পারে!
নাম যা-ই হোক, সোমবার, ১৯ নভেম্বর পুরুষের একটা স্বপ্নপূরণই ঘটছে বলা যায়। বছর দু’য়েক আগে নারী দিবসের সকালে কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছিল পুরুষ মনের ঘোর দুঃখের কথা। সে বার গোটা দিন ধরে ভারতীয় পুরুষেরা নাকি ব্যস্ত ছিলেন গুগ্ল করে বিশ্ব নারী দিবসের আদলে বিশ্ব পুরুষ দিবসের হদিস বার করতে। এ যাত্রায় টুইটার, ফেসবুক বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কেনাকাটার পোর্টালে আড়ি পাতলে তাঁরা সান্ত্বনা পেতেই পারেন। পুরুষের অবদানকে স্বীকার করে একটা আস্ত দিন তো মিলেছেই, পুরুষের পোশাক, প্রসাধনী বা অন্য ব্যবহার্য দ্রব্য নির্দিষ্ট পরিমাণে কিনলে বিশেষ ছাড় কিংবা উপহারও জুটবে বলে অভয় মিলছে।
৮ মার্চের বিশ্ব নারী দিবসের মতো পুরুষ দিবসটির জোরালো ঐতিহাসিক তাৎপর্য নেই। মহিলা শ্রমিকদের সমান বেতনের লড়াই থেকে নানা বিষয়ে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই, ক্লারা জেটকিনের মতো সমাজতান্ত্রিক নেত্রীদের আন্দোলনের অনুষঙ্গ বা চার দশক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বীকৃতি দিনটিকে মহিমান্বিত করেছে। পুরুষ দিবস তুলনায় আনকোরা। ১৯৯৫-এ ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের এক ইতিহাস-শিক্ষক তাঁর বাবার জন্মদিনে পুরুষ দিবস চালু করেন। এখন তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এই পুরুষ দিবসের সকালে নিউ টাউনের এক শপিং মলে উপহারের ছড়াছড়ি। ৪ থেকে ২০ হাজার টাকার কেনাকাটার বিনিময়ে মুফতে অনেক কিছুই মিলতে পারে। এ রাজ্যে পুরুষ অধিকার রক্ষায় পদযাত্রার আহ্বায়ক নন্দিনী ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আমি খুব খুশি! মেনিনিজ়ম নিয়েও ব্যবসা হোক। তা হলেই পুরুষের কষ্ট নিয়ে চোখ খুলবে।’’
কিন্তু নারী দিবস উপলক্ষে বান্ধবীকে শাড়ি-গয়না দেওয়ার সঙ্গে মেয়েদের লড়াইয়েরই বা যোগটা কী? উল্টে, তা পিতৃতন্ত্রের মুঠোকেই আরও শক্ত করে বলে মনে করেন নারী অধিকার রক্ষা কর্মী তথা শিক্ষিকা শাশ্বতী ঘোষ। পুরুষ দিবস নিয়ে তিনি বলছেন, ‘‘পিতৃতন্ত্রের চাপে পুরুষরাও যথেষ্ট নিপীড়িত।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরুষ দিবস পালনের মধ্যে কি পুরুষের উপরে সব সময়ে বীরত্বের বোঝা হাল্কা করা নিয়ে ভাবা হচ্ছে?’’ কলকাতায় পুরুষ দিবস পালনের আয়োজকেরা অবশ্য বলছেন, বহু পুরুষ আত্মঘাতী হন! পুরুষ বহু ক্ষেত্রেই কাঁদতে পারে না। অন্য পুরুষ বা নারীর দ্বারা
নির্যাতিত হয়েও লোকলজ্জায় মুখ খুলতে পারে না। কিন্তু পণ্যের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে পুরুষ দিবসে বিভিন্ন সংস্থার শুভেচ্ছা বা ইন্টারনেট মিমেও এক ধরনের বীরপুরুষ গোছের ভাবমূর্তিই পুরুষের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পুরুষ দিবসের প্রভাতী শুভেচ্ছায় তাই ঘোষণা, ‘‘তিনিই পুরুষ, যিনি যে কোনও দায়িত্ব বহনে পিছপা হন না।’’ কলকাতায় পুরুষ দিবসের পদযাত্রাও ‘পুরুষের রং’ নীল বেলুন নিয়ে মেতেছে। এ দেশের নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা পর্যন্ত পুরুষ দিবসের সম্ভাষণে আগুয়ান। এ দেশের এক অনলাইন বিপণির মুখপাত্র বললেন, ‘‘পুরুষের পোশাক, ব্যাগ, ঘড়ি, জুতোর উপরে ৬০ শতাংশও ছাড় দেওয়া হয়েছে।’’ একটি ঘড়ি সংস্থার তরফে টুইট, ‘আপনার জীবনের তিন প্রিয় পুরুষের পছন্দের ঘড়ির খোঁজে লটারিতে শামিল হোন।’’ অর্থাৎ, নারী দিবসে মা, বৌ বা বান্ধবীকে উপহার দিন বলার ভঙ্গিতেই বয়ফ্রেন্ড, স্বামী বা বাবাকে উপহার দিতে বলা হচ্ছে। এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার সৌভিক মিশ্র হেসে বললেন, ‘‘নারী দিবসের মতো পুরুষ দিবসও বিপণনের স্বার্থে কেনাকাটার ক্ষমতাসম্পন্ন মেয়েদের নিশানা করছে।’’ তবে প্রবীণ বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ রাম রায়ের মতে, ফাদার্স ডে, মাদার্স ডে, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র মতো পুরুষ দিবস তত পরিচিতি পায়নি।
পুরুষ বা নারী দিবসকে স্রেফ বিপণনের মাপকাঠিতে দেখা নিয়ে অনেকেরই আপত্তি রয়েছে। ঘটনাচক্রে, ১৯ নভেম্বরই রাষ্ট্রপুঞ্জের টয়লেট ডে বা বিশ্ব শৌচাগার দিবস! শহরে পুরুষ অধিকারের মিছিলের অবশ্য এত কাটাছেঁড়ায় মন নেই। পুরুষের জন্য একটা আলাদা দিন প্রাপ্তির গরিমাটুকুই এখন তাঁদের হাতের পেনসিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy