Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
KMC Election 2021

KMC election 2021: নাগরিকের দায়িত্ব কতটা পালন করি, ভেবেছি কি

পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা বিদেশের প্রশংসা করি। ও দেশের পরিচ্ছন্নতার মূল কারণ যে নাগরিকের চিন্তাধারা, সেটা মনে রাখি না। একটা ঘটনা বলব।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

অপূর্ব ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫৬
Share: Save:

নাগরিকের দায়িত্ব কতটা পালন করি, ভেবেছি কি

রাতভর বৃষ্টি হলেই আমাদের ঘুম উড়ে যায়। মধ্যরাতে চোখ কচলে উঠে যাই নিজের বাহনটাকে বাঁচাতে। বিজন সেতুর আশপাশে গাড়ি নিয়ে শুকনো ডাঙার খোঁজ করতে থাকি। বৃষ্টি হলেই দিনের শেষে বুট খুলে প্লাস্টিকের জুতো পরে নিই। কারণ, সেই নোংরা জমা জল। যাদবপুর সেন্ট্রাল পার্কের ওই জল ডিঙিয়ে কোনও রকমে বাড়ি ঢুকেই নির্দিষ্ট কলে যাই হাত-পা ধুতে। সারা দিনের পরে ক্লান্ত শরীরে এ সব করতে ঠিক কেমন লাগবে?

তবে মানুষের অসহিষ্ণুতাও কষ্ট দেয়। চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও ডাক্তার-নার্সকে কেন মার খেতে হবে? কেন ভাঙচুর করে নষ্ট করতে হবে আপনার করের টাকায় তৈরি পরিকাঠামো? তাতে কি কিছু লাভ হবে? ভেবে দেখবেন। কিছু মানুষ দায়িত্ববোধ জলাঞ্জলি দিয়েছেন। যার ফল, বাড়ির আশপাশ নোংরা আমরাই করব, কিন্তু দায় চাপাব সরকারের উপরে। ট্র্যাফিকের নিয়ম ভেঙে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাব, দোষারোপ করব পুলিশকে। নিজের ধর্ম পালন করতে গিয়ে অন্যের ধর্মে আঘাত করব, পরিবেশকে কলুষিত করব, কিন্তু দিনের শেষে সে সবের জন্য দায়ী করব প্রশাসনকে। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমাদের যতটুকু দায়িত্ব পালন করার কথা, আমরা কি আদৌ করি? নিজেদের অপারগতা, অপদার্থতাকে হাজার বাহানায় ঢেকে রাখতেই কালপাত করি।

মানছি, প্রশাসনের দায়িত্ব অনেক। রাস্তাঘাট, নিকাশি, জল, বিদ্যুৎ, সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ ভার রয়েছে তাদের উপরে। বরং আমরা যা পাচ্ছি, সামাজিক ভাবে সেটারই রক্ষণাবেক্ষণে মন দিই।

প্রশাসন না হয় উত্তর দিক, সভ্য শহরে কেন মলের জল আর পানের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়? কেন নোংরা জল ডিঙিয়ে বাস করতে হয় মানুষকে? আজও সুস্থ মানুষ ঘরে ফেরার পথে কেন খোলা ম্যানহোলে পড়ে মারা যান? রাস্তা সারাইয়ের মাসখানেকের মধ্যেই কেন ফের তা খারাপ হয় অথবা সমন্বয়ের অভাবে নতুন তৈরি রাস্তা খুঁড়তে হয়? আজও কেন বাতিস্তম্ভের খোলা তারে তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হবে? রাজনৈতিক মিছিলে আটকে পড়া শিশু বা অসুস্থের মৃত্যুকে কেন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে মেনে নেওয়া হবে? ভোটের প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ করে শহরকে পোস্টার-ফেস্টুনে আর শব্দদূষণে কেন ঢেকে দেওয়া হবে? শহরের আকাশ তারের জঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে, প্রশাসন তবুও কেন নির্বিকার থাকবে? হকার উচ্ছেদের পক্ষে নয় আমি। শিশুরোগ চিকিৎসক হিসাবে আরও বুঝি, সন্তান বা পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ কতটা জরুরি। কিন্তু তাঁদের জন্য সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে দৃষ্টিনন্দন ছোট স্টল করে দিতে প্রশাসনের এত ব্যর্থতা কেন?

জানি, এর মধ্যে অনেক কিছুই পুরসভার দায়িত্ব নয়। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ, এত ভাগাভাগি বুঝি না। সামগ্রিক ভাবে প্রশাসনের কাছে নাগরিক হিসাবে এই সব দাবি রাখব।

তবে কি কাজ করেনি প্রশাসন? অবশ্যই করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন আগের থেকে অনেকটাই ভাল হয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রেও উন্নতি চোখে পড়ার মতো। সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো অনেক ভাল হয়েছে। আরও উন্নতি করার জায়গাও রয়েছে। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স-রাজ, শয্যা বিক্রি, ওষুধ পাচারের মতো বিকৃত ব্যবসা নিয়ে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে। শহরের ট্র্যাফিক আগের তুলনায় ভাল হয়েছে। আজ থেকে কুড়ি বছর আগে চালকের আসনে বসে দেখতাম, নিয়ম ভাঙাটাই ছিল এ শহরের ট্র্যাফিকের নিয়ম। এখন অনেকটা লাগাম টানা গিয়েছে। ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে সব। অনিয়মের বিল পৌঁছে যায় বাড়িতে। তবে ব্যক্তিগত ভাবে মনে হয়েছে, জরিমানার পরিমাণটা এ ক্ষেত্রে আরও বাড়ানো উচিত। তাতে বেলাগাম গাড়িতে রাশ টানা যাবে। বাসের রেষারেষি বা বেপরোয়া গতির গাড়ির জন্য প্রাণহানি কোনও মতেই মেনে নেওয়া যায় না। এ সব বন্ধ করতে প্রশাসন দ্রুত সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিক এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করুক।

এ শহরের নাগরিক হিসাবে প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, ফিরিয়ে আনা হোক দোতলা বাস। মনে পড়ে, অসম থেকে হাওড়ায় নেমে পাঁচ নম্বর দোতলা বাসে চড়ে গড়িয়ায় বোনের বাড়ি যেতাম। সে এক অদ্ভুত ভাল লাগা। এখন রাস্তাঘাট অনেক বেড়েছে। নির্দিষ্ট রুটে চালু করা যেতেই পারে ওই পরিষেবা। বিদেশেও তো চলে। এটা ফের শুরু হলে পর্যটকদের চোখে শহরের আকর্ষণও বাড়বে।

পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা বিদেশের প্রশংসা করি। ও দেশের পরিচ্ছন্নতার মূল কারণ যে নাগরিকের চিন্তাধারা, সেটা মনে রাখি না। একটা ঘটনা বলব। তখন ইংল্যান্ডের হাসপাতালে কাজ করি। বসের গাড়িতে সহকর্মীদের সঙ্গে অনেকটা দূরত্বে সফর করছি। গাড়িতে বসেই আমরা খেয়ে নিয়েছিলাম। খাবারের ছোট্ট রসিদটা কোথায় ফেলব, বুঝতে পারছিলাম না। সাত পাঁচ ভেবে চালের টুকরোর আকার করে হাতেই রেখে দিয়েছিলাম। এক জায়গায় গাড়ি দাঁড়াতে কাচ নামিয়ে জঙ্গলে ছুড়ে ফেলে দিই। ‘তুমি কি বাইরে কিছু ফেললে?’ পাশে বসা নার্স প্রশ্নটা করেছিলেন। সম্মতি জানিয়েছিলাম। ছোট্ট প্রশ্নবাণে সপাটে গালে যেন কেউ চড় মেরে দিল। এই হল মানসিকতার তফাত।

শিশুরোগ চিকিৎসক

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Election 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy