Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Lock down

ব্যবসা টেকাতে কিছু সময় বইয়ের দোকান খুলতে দেওয়ার আর্জি

কলেজ স্ট্রিটের বই-ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছর লকডাউনের সময় থেকে তাঁদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়েছে

 শুনশান: বন্ধ দোকানের সামনে রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে এক ব্যক্তি। সোমবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুনশান: বন্ধ দোকানের সামনে রান্নার সরঞ্জাম নিয়ে এক ব্যক্তি। সোমবার, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২১ ০৬:৩৫
Share: Save:

সংক্রমণ ঠেকাতে চালু হওয়া কড়াকড়িতে বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান বিভিন্ন সময়ে খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি বইয়ের দোকানের ক্ষেত্রে। ফলে, কার্যত তালাবন্দি হয়ে রয়েছে শহরের বইপাড়া। এই পরিস্থিতিতে কলেজ স্ট্রিটের বই বিক্রেতা ও প্রকাশকদের একটি বড় অংশ দিনে অন্তত কয়েক ঘণ্টার জন্য দোকান খোলা রাখার আবেদন জানাচ্ছেন। তাঁদের মতে, বিধিনিষেধ চালু করার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি ঠিক। কিন্তু যে ভাবে মিষ্টির দোকান, গয়নার দোকান, শাড়ির দোকান কিছু ক্ষণের জন্য খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে সরকার, সে ভাবেই কয়েক ঘণ্টা বইয়ের দোকানও খোলার অনুমতি দেওয়া হোক। সে ক্ষেত্রে অল্প হলেও বিক্রির মুখ দেখবেন প্রকাশকেরা।

কলেজ স্ট্রিটের বই-ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত বছর লকডাউনের সময় থেকে তাঁদের ব্যবসায় মন্দা শুরু হয়েছে। তার পরে এসেছিল আমপানের ধাক্কা। বহু প্রকাশনা সংস্থার অফিস এবং বিক্রেতার দোকানে জল ঢুকে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল লক্ষাধিক টাকার বই। গত ডিসেম্বরে করোনার
প্রকোপ কমতে শুরু করার পরে
ব্যবসা ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছিল। কিন্তু চলতি বছরে অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ সব হিসেব ওলটপালট করে দিয়েছে। বিক্রেতাদের মতে, ব্যবসার ভিতটাই ভেঙে দিয়েছে করোনা।

বইপাড়ার একটি প্রকাশনা সংস্থার কর্ণধার তথা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এক দিকে বইমেলা না হওয়ায় বই বিক্রি এমনিতেই কম। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ সময় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় পাঠ্যবইয়ের চাহিদা তেমন নেই। তার উপরে এই কড়াকড়ি। সব মিলিয়ে চরম সঙ্কটের মুখোমুখি বইপাড়া। ত্রিদিববাবু বলেন, “গত এক বছরে অনলাইনে বই বিক্রির বাজার কিছুটা ভাল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু অনলাইনে বই বিক্রি করতে গেলেও তো প্রকাশকদের অফিস বা বিক্রেতাদের দোকান কিছু ক্ষণ খোলা রাখতে হবে। বইয়ের দোকান পুরো বন্ধ থাকলে অনলাইনে বিক্রির জন্য বিক্রেতারা বই নিয়ে যাবেন কোথা থেকে?’’

কলেজ স্ট্রিটের আর এক প্রকাশক বুলবুল ইসলামের মতে, লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ হওয়া ইস্তক তাঁদের ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। কারণ, কলকাতা সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে খুচরো দোকানদারেরা ট্রেনে করে কলেজ স্ট্রিটে বই কিনতে আসতেন। বুলবুল বলেন, “পর পর দু’বছর লকডাউন, আমপান, টানা স্কুল-কলেজ বন্ধ— সব মিলিয়ে ব্যবসার হাল খুবই করুণ। অনেক ব্যবসায়ীকে জানি, যাঁরা বইয়ের ব্যবসা ছেড়ে বিকল্প রুজিতে নেমেছেন।”

কিছু সময়ের জন্য বইয়ের দোকান খোলা রাখার আবেদনকে সমর্থন করেছেন কলেজ স্ট্রিটের আর এক প্রকাশক তথা গিল্ডের প্রাক্তন সম্পাদক অনিল আচার্য। তিনি বলেন, “সব কিছুর দোকানই কিছু ক্ষণের জন্য খোলা। তা হলে বই নয় কেন? লকডাউনে মানুষ বাড়িতে বন্দি। তাঁরা তো এই সময়ে বই পড়তে পারেন। অনলাইনে বই বিক্রি চালু থাকলে মানুষের মনের পুষ্টি জোগাতে পারে বই।’’ গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, “আগে তো প্রাণ, তার পরে ব্যবসা। সার্বিক যা পরিস্থিতি, তাতে কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত ঠিক। তবে বইয়ের দোকান বা প্রকাশকদের অফিস কিছু ক্ষণের জন্য খোলা থাকলে অনলাইনে বিক্রির শৃ্ঙ্খলটা ঠিক থাকবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

COVID19 Lock down
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE