(বাঁদিকে) বৃহস্পতিবার হাসপাতালে নীলোৎপল চক্রবর্তী। (ডানদিকে) আঙুলের এই অংশই হারিয়ে গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র
পথ দুর্ঘটনায় বাঁ হাতের অনামিকার কিছুটা অংশ কাটা গিয়েছিল এক ব্যক্তির। অস্ত্রোপচারে আঙুল জোড়া লাগার আশায় তাঁকে এক বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরিয়ে একবালপুরের সিএমআরআই-তে ভর্তি করিয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রোপচারের ঠিক আগে জানা গেল, হারিয়ে গিয়েছে আঙুলের ওই কাটা অংশ! হাসপাতালে তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে শেষে ডাস্টবিনে খুঁজতে লোক পাঠালেন কর্তৃপক্ষ! কিন্তু সেখানেও পাওয়া গেল না আঙুলের কাটা অংশ।
শেষে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ কর্তব্যে গাফিলতির কথা মেনে নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর পরিবারকে জানালেন, আঙুলের কাটা অংশটি হারিয়ে গিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের কথাও তাঁরা ভাবছেন। তবে রোগীর পরিবার ইতিমধ্যেই আলিপুর থানায় সিএমআরআই হাসপাতালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। মামলাও রুজু হয়েছে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট আইনে। ২০১৩ সালেও একই ভাবে বাইপাসের ধারের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এক রোগীর খুলির অংশ হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ। হাওড়ার আন্দুলের বাসিন্দা, বেসরকারি সংস্থার কর্মী নীলোৎপল চক্রবর্তী (৩৮) শিবপুরের অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তায় একটি টোটোর সঙ্গে তাঁর মোটরবাইকের ধাক্কা লাগে। নীলোৎপলের বাঁ হাতের অনামিকার কিছুটা অংশ কেটে পড়ে যায়। সেই কাটা অংশ-সহ তাঁকে উদ্ধার করে অস্ত্রোপচারের জন্য সিএমআরআই-তে নিয়ে যাওয়া হয়।
নীলোৎপলের সহকর্মী সৈকত মল্লিক জানান, চিকিৎসক অনুপম গোলাসের অধীনে রোগীকে ভর্তি করান তাঁরা। তিনি বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হলেও রাত আটটা নাগাদ আমাদের জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রোপচার হবে। বাধ্য হয়ে রাজি হই।’’
নীলোৎপলের স্ত্রী, পেশায় স্কুলশিক্ষিকা চয়নিকা বললেন, ‘‘সকাল ৯টায় অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও দেখি, অস্ত্রোপচার শুরু হচ্ছে না! বিভ্রান্ত চিকিৎসকেরা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘সব জায়গায় খুঁজছি, পাচ্ছি না। ডাস্টবিনেও দেখতে লোক পাঠিয়েছি।’ তখন বুঝি, আঙুলের ওই অংশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা চেপে ধরি, আবর্জনা থেকে তুলে এনে কি তবে আঙুল লাগানো হবে?’’ এর পরে বেলা ১২টায় রোগীর পরিবারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ভিডিয়ো ক্যামেরার সামনে ওই বৈঠক হয়। কাটা অংশ ছাড়াই অস্ত্রোপচার করে দেওয়ার জন্য তাঁদের বোঝানো হয় বলে রোগীর পরিবারের দাবি। বাধ্য হয়ে তাঁরা অস্ত্রোপচার করিয়ে নেন। এর পরে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
সৈকতের আশঙ্কা, ‘‘জরুরি বিভাগে রোগীর শয্যার পাশেই আঙুলের কাটা অংশটি রাখা হয়েছিল। নীলোৎপলকে পরে অন্য ঘরে নিয়ে যাওয়ার সময়ে হয়তো কেউ খেয়ালই রাখেননি সেটার কথা। ওই দু’-তিন ঘণ্টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে দেখানো হোক।’’
চিকিৎসক অনুপম গোলাস বলেন, ‘‘আঙুলের ওই কাটা অংশটি যে জোড়া লাগবে না, সেটা আগেই রোগীর বাড়ির লোককে জানিয়েছিলাম। তবে কাটা অংশটি হারিয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে আমি আর কী বলব!’’ রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে বিষয়টি এসেছে। কাগজ পেয়েছি। খতিয়ে না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy