Advertisement
E-Paper

আতসকাচে ‘ফেল’ এক্স-রে যন্ত্র

রোগের চিকিৎসায় হামেশাই প্রয়োজন হয় এক্স-রে করার। কিন্তু তা থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি (রেডিয়েশন) নির্গত হওয়ায় ওই যন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২০ ০২:৪৫
Share
Save

যন্ত্র থেকে বেরোনো তেজস্ক্রিয় রশ্মি শরীরে মাত্রাতিরিক্ত প্রবেশ করলে রোগী এবং কর্তব্যরত মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের কী বিপদ হতে পারে, তা সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অজানা থাকার কথা নয়। তবুও রেডিয়োলজি বিভাগের একাধিক এক্স-রে যন্ত্রের কেন প্রয়োজনীয় রক্ষাকবচ নেই, অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ডের (এইআরবি) রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে সেই প্রশ্নের সামনে দাঁড়ালেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ (সিএমসি) কর্তৃপক্ষ।

রোগের চিকিৎসায় হামেশাই প্রয়োজন হয় এক্স-রে করার। কিন্তু তা থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি (রেডিয়েশন) নির্গত হওয়ায় ওই যন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। সে জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল এবং বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলির উপরে নজরদারি চালায় এইআরবি। সংস্থা সূত্রের খবর, যন্ত্র কেনার পরে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়। পাশাপাশি যন্ত্র থেকে মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন যে বেরোচ্ছে না, তা নিশ্চিত করতে জমা দিতে হয় ‘কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স’ (কিউএ) শংসাপত্র। প্রতি দু’বছর অন্তর পরিদর্শনের ভিত্তিতে সেই শংসাপত্র যাচাই করেন কেন্দ্রীয় আণবিক সংস্থার আধিকারিকেরা।

গত ১৪ অগস্ট কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের যন্ত্রগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন এইআরবি-র আঞ্চলিক শাখার প্রতিনিধিরা। ওই আণবিক সংস্থার এক বিজ্ঞানী জানান, রেডিয়োলজি বিভাগের বেশ কিছু এক্স-রে যন্ত্র তাঁদের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হয়নি। কয়েকটির ক্ষেত্রে আবার কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স করানোই হয়নি। সংস্থার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিটি এক্স-রে করানোর সময়ে কত রেডিয়েশন বেরোচ্ছে, তার এক্সপোজ়ার কত, এক্স-রে টিউব থেকে ছিদ্রপথে রেডিয়েশন বেরোচ্ছে কি না— তা কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্সেই ধরা পড়ে।’’

লাইসেন্স পাওয়ার আরও কিছু শর্ত রয়েছে। হাসপাতালের যে ঘরে যন্ত্র রয়েছে তার পরিকাঠামো কেমন হবে, সেই বিষয়ে এইআরবি-র স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। তেজস্ক্রিয় রশ্মি যাতে ঘরের বাইরে কোনও ভাবে না আসে, সে জন্য জোর দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায় উল্লিখিত পরিকাঠামোয়। পাশাপাশি ওই ঘরে কর্তব্যরত

মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের মনিটরিং ব্যাজ থাকার কথা। এইআরবি সূত্রের খবর, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টদের জন্য বছরে ৩০ মিলিসিভার্ট তেজস্ক্রিয় রশ্মি অনুমোদনযোগ্য। রোগীদের ক্ষেত্রে সেই মাপকাঠি ১১০ মিলিসিভার্ট। কেন্দ্রীয় সংস্থার এক আধিকারিক জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীরে কতটা রেডিয়েশন যাচ্ছে তা বোঝা যায় মনিটরিং ব্যাজ থেকে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সব মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টের মনিটরিং ব্যাজও নেই বলে খবর।

চিকিৎসকদের মতে, মাত্রাতিরিক্ত রেডিয়েশন শরীরে প্রবেশ করলে চর্মরোগ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, বন্ধ্যত্বের সমস্যা, বমি, পেট খারাপ হতে পারে। এমনকি, আশঙ্কা রয়েছে ক্যানসারেরও। এইআরবি-র পূর্বাঞ্চল শাখার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘নানা রোগ হতে পারে বলেই যন্ত্রগুলির স্বাস্থ্য যাচাই করা হয়। বেশ কিছু যন্ত্র যে কিউএ ছাড়াই চলছে, তা সেপ্টেম্বরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাড়া মেলেনি।’’

হাসপাতালের প্রাক্তন রেডিয়োলজিক্যাল সেফটি অফিসার (আরএসও) অনিল কাবাশির পর্যবেক্ষণ, রাজ্যের বহু জায়গায় ‘কিউএ’ ছাড়া যন্ত্র সচল রয়েছে। এতে রোগী এবং কর্মী, দু’জনেরই শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এইআরবি-র ওই কর্তা বলেন, ‘‘পরিদর্শন শুরু হওয়ার পরে এখন পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই ভাল।’’

যদিও কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘রোগীদের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। কারণ, পিপিপি মডেলেই বেশির ভাগ এক্স-রে হয়। কিউএ না-থাকা যন্ত্রগুলি মূলত পড়াশোনার কাজে লাগে। এআইআরবি-র পর্যবেক্ষণ স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। নতুন যন্ত্র কেনার জন্য দরপত্রও ডাকা হয়েছে।’’

Atomic Energy Regulatory Board AERB X Ray Machine CMCH

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}